জার্মানির ইতিহাসে ‘‘স্টাসি’’-র দীর্ঘ ছায়া
২৭ মে ২০০৯জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ছাত্র বিক্ষোভ ষাটের দশকেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু তা চরম আকার ধারণ করার পিছনে, এমনকি উগ্র বামপন্থী রেড আর্মি ফ্যাকশনের সন্ত্রাসের সূচনাও নাকি ঐ বেনন ওনসর্গের মৃত্যু৷ পারস্যের রাজা শাহ মহম্মদ রেজা পহলভি এসেছিলেন পশ্চিম বার্লিনে৷ তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল সরকার-সমালোচক ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবীরা৷ সেই সূত্রেই ওনসর্গ প্রাণ হারায় ১৯৬৭ সালের দোসরা জুন৷ গুলি চালিয়েছিল এক পুলিশকর্মী যার নাম কার্ল-হাইনজ কুরাস৷ এজন্য তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা সত্ত্বেও প্রমাণের অভাবে সবই বাতিল হয়ে যায়৷
এখন, অর্থাৎ গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ কাকতালীয়ভাবে প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা পুলিশ স্টাসির নথিপত্রের মধ্যে কুরাসের ফাইলটিও আবিষ্কৃত হয়েছে৷ আজ ৮১ বছরের এই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীটি নাকি ১৯৫৫ সাল যাবৎ স্টাসির গুপ্তচর ছিল, এবং ১৯৬৪ সাল যাবৎ ওপারের জার্মান সমাজতন্ত্রী ঐক্যদল বা এসইডি নামধারী ক্ষমতাশীল কম্যুনিস্ট দলের সদস্য ছিল৷ অর্থাৎ ওনসর্গকে যে মারে, সে কোনো বিভ্রান্ত দক্ষিণপন্থী নয়, বরং একজন প্রত্যয়শীল কম্যুনিস্ট৷
এখন এর মানে কি দাঁড়াচ্ছে, এর ফলে আধুনিক জার্মানির ইতিহাসে একটি মাইলফলক বিশেষ সেই আটষট্টির ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, এমনকি বামপন্থী সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে কিনা, তা নিয়ে যেমন একদিকে আলোচনা শুরু হয়েছে - অপরদিকে রাজনীতি এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলির পর্যায়ে এক আশ্চর্য ব্লেমগেম শুরু হয়েছে৷ অনেকেরই রোষ গিয়ে পড়েছে স্টাসির নথিপত্র সুরক্ষা, অনুসন্ধান এবং গবেষণার জন্য দায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানটির দিকে, যার প্রধান এখন মারিয়ানে বির্থলার৷ অভিযোগ উঠেছে, যে তথাকথিত বির্থলার-দপ্তর নাকি পশ্চিমে স্টাসির কার্যকলাপের ব্যাপারটা প্রায় উপেক্ষা করে এসেছে৷ মনে রাখা দরকার, এই বির্থলার-দপ্তরে মোট ১,৭০০ কর্মী নিযুক্ত৷
কিন্তু এই ওনসর্গ-কুরাস মামলা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, যে স্টাসির নথিপত্র ২০১৯ সালে ফেডারাল মহাফেজখানায় যাবার আগেই এ-ধরণের চমকের সম্ভাবনা দূর করা দরকার৷ মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের সাধারণ সম্পাদক ডির্ক নীবেল যেমন বলেছেন: বার্লিন প্রাচীর পতনের বিশ বছর পরে এটা শুধু যুক্তিযুক্তই নয়, বরং বিশেষভাবে প্রয়োজন অতীতের সঙ্গে গবেষণার মধ্য দিয়ে বোঝাপড়ায় আসা৷
প্রতিবেদক: মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাও/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক