1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান সেনা পরিচালিত রেডিও আন্ডারনাখ

হোসাইন আব্দুল হাই১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

আফগানিস্তান ও কসভোসহ পৃথিবীর যেসব জায়গায় জার্মান সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সাথে জার্মানীতে বসবাসরত আত্মীয় স্বজন অনায়াসে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তথ্য আদান প্রদান করতে পারেন ‘রেডিও আন্ডারনাখ’ এর মাধ্যমে৷

https://p.dw.com/p/Grcr
জার্মান সেনাদের বিনোদনের এক অন্যতম মাধ্যম রেডিও আন্ডারনাখ

সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে আত্মীয় স্বজনদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও খবর জানতে পারেন জার্মানির বাইরে মোতায়েন সেনা সদস্যরা এ রেডিও অনুষ্ঠানে৷

জার্মানির মায়েনে অবস্থিত সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় তথ্য দপ্তর থেকেই মূলত এ রেডিওর কার্যক্রম পরিচালিত হয়৷ সামরিক বাহিনীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ রেডিও'র কার্যক্রম ১৯৭৪ সালে শুরু হলেও সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৯৩ সালে সোমালিয়ায়৷ এরপর ক্রমান্বয়ে কসোভো, আফগানিস্তান, কঙ্গো এবং বসনিয়ায় সম্প্রচার শুরু করে এ রেডিও৷ অর্থাৎ যখন যেখানে জার্মান সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, সেখানেই শোনা যায় এই অনুষ্ঠান৷

Bundeswehr Manöver European Challenge 2005 in Eckernförde
সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে আত্মীয় স্বজনদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও খবর জানতে পারেন জার্মানির বাইরে মোতায়েন সেনা সদস্যরা এ রেডিও অনুষ্ঠানে৷ছবি: AP

স্টুডিও থেকে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ স্টেশনের মাধ্যমেও ‘রেডিও আন্ডারনাখ'এর অনুষ্ঠান শোনানো হয় দুর্গম এলাকায়৷

তবে ‘রেডিও আন্ডারনাখ'এর কার্যক্রম শুধুমাত্র সেনা সদস্যদের জন্যই তা নয় – বরং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবন-মান ও সংস্কৃতির উপযোগী বিভিন্ন অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করা হয় এ রেডিওতে৷ এ কারণে সারা পৃথিবীর প্রায় সব ভাষা ও জাতির সংগীত ও সুর সংগ্রহ রয়েছে এর সদর দপ্তরে৷

মূলত নৈতিকতা ও কল্যাণের মূলমন্ত্রের উপর ভিত্তি করেই রেডিও আন্ডারনাখ-এর অনুষ্ঠানসমূহ তৈরি করা হয়৷

কসোভো এবং আফগানিস্তানসহ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে থাকা সংস্কৃতির সাথে সংগতি রেখে এ রেডিওর জন্য অনুষ্ঠানের আধেয় তৈরি করা হয়৷ তাই লক্ষিত জনগোষ্ঠীর জীবন ও ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও উৎসব উপলক্ষ্যে এতে সম্প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা৷

তবে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বিশেষ করে উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য এবং বিনোদনমূলক বার্তা পৌঁছানোর জন্য জার্মান সেনাবাহিনী শুধু রেডিও সম্প্রচারই করে না বরং একইসাথে রয়েছে পত্রিকাসহ বিভিন্ন পুস্তিকা, পোস্টার ইত্যাদি প্রকাশ, অনলাইন এবং ভিডিও সম্প্রচার ও প্রদর্শনী৷

যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের মাঝে উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে জার্মান সেনাবাহিনী বেছে নেয় অত্যাধুনিক কৌশল ও পদ্ধতি৷

এগুলোর মধ্যে বেলুন পদ্ধতি বেশ আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ৷ এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হিলিয়াম পূর্ণ বেলুনে একগুচ্ছ করে হ্যান্ডবিল, লিফলেট বা তথ্যপত্র বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়৷ বেলুনগুলো থেকে যেন নির্দিষ্ট দূরত্বে ও এলাকায় তথ্যপত্রগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে তা স্টেশন বা ক্যাম্প থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ এসব বেলুন থেকে ছড়িয়ে পড়া তথ্যপত্র জনগণ কুড়িয়ে নেয় এবং প্রয়োজনীয় বার্তা ও জ্ঞান আহরণ করতে পারে৷

Afghanistan ISAF Soldaten aus Deutschland Nördliche Provinzen
আফগানিস্তানে কর্মরত জার্মান সেনাছবি: AP

যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানবাসীর কাছে জার্মান সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রকাশিত এমনি একটি জনপ্রিয় পত্রিকা হচ্ছে ‘সাদ-ই-আজাদি'৷ চাহিদার উপর ভিত্তি করে আফগানিস্তানে পত্রিকাটির চার লাখ কপি ছাপানো হয়৷

এছাড়া জার্মান সেনাবাহিনীর আরেকটি জনপ্রিয় তথ্য মাধ্যম হচ্ছে ‘দ্রিটারিয়া' নামক ম্যাগাজিন৷ এটি অনলাইনে সবসময় হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রকাশনা৷ এখানে রঙ্গীন ছবি, ফিচার ও প্রতিবেদন ছাড়াও অডিও ও ভিডিও ক্লিপও পাওয়া যায়৷ এছাড়া এটির ছাপানো কপিও সরবরাহ করা হয় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে৷

তথ্য সম্প্রচার ও এর অবাধ প্রবাহে প্রচলিত ও বিকল্প গণমাধ্যমের ব্যবহারে জার্মান সেনাবাহিনীর এ সফলতা সম্ভব হয়েছে এর ‘মনস্তাত্ত্বিক অপারেশন' বা সাইকো-অপস শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে৷

জনগণের মতামতের কাছে অস্ত্র পরাজিত হতে বাধ্য – নেপোলিয়ন বোনাপার্টের এই বিখ্যাত উক্তিকে মূলমন্ত্র হিসেবে সামনে রেখে পরিচালিত হয় এ অপারেশনের কার্যক্রম৷ তাই শক্তি দিয়ে নয় বরং শান্তি ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে জার্মান সেনা সদস্যরা তথ্য ও জ্ঞানের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠনে কাজ করছে৷