1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছয় মাস পেছালো এয়ারবাসের এ৩৫০ উড্ডয়নের সময়

২৫ নভেম্বর ২০১১

চলতি মাসেই বোয়িং-এর অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ৭৮৭ ড্রিমলাইনার যোগ হয়েছে পৃথিবীর আকাশে৷ তবে তার সাথে পাল্লা দিতে যে এ৩৫০ বিমান তৈরি করছে এয়ারবাস, তার কাজ শেষ হতে আরো ছয় মাস বেশি সময় লাগবে বলে ঘোষণা দিল ইএডিএস৷

https://p.dw.com/p/13Gtm
ওপরেরটি ড্রিমলাইনার আর নীচে এয়ারবাস এ৩৫০ছবি: Fotomontage/AP/DW

বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং আবিষ্কারের বদৌলতে এখন মানুষ পাখির মতো শূন্যে উড়ছে৷ আকাশ পথে অল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে৷ আর এসব মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন বিমান তৈরির কাজ চলছে৷ আকাশ পথে যাত্রার জন্য যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বিমান৷ আর বিমানের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এয়ারবাস এবং বোয়িং৷ তবে অন্যান্য যন্ত্রপাতি কিংবা ছোট যান তৈরির জন্য যতোটা দ্রুত কাজ করা যায়, বিমানের ক্ষেত্রে ততোটা করলে চলবে না৷ তার উপর সম্প্রতি বিমান সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া ইউরোপের এ৩৮০ সুপারজাম্বো যেভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল তাতে বর্তমানে আরো বেশি সতর্ক হয়ে গেছে বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস৷

তাই এয়ারবাস এর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান অ্যারোনটিক ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস কোম্পানি ইএডিএস জানিয়ে দিল এ৩৫০ কার্বন-ফাইবার জেট বিমান তৈরি সম্পন্ন হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো ছয় মাস বেশি সময় লাগবে৷ কারণ তারা আরো খানিকটা সতর্কতার সাথে এবং মজবুত করে এগুলো তৈরি করতে চায়, যাতে হাজার মাইল উপরে শূন্য আকাশে গিয়ে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার দশা না হয়৷ ঠিক এমনই ঘটনা ঘটে সম্প্রতি এ৩৮০ বিমানে৷ ফলে গন্তব্যস্থান পর্যন্ত না উড়ে গিয়ে বরং যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে নিকটস্থ বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য হন বৈমানিক৷ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এমন ঘটনা দু'বার ঘটে অস্ট্রেলিয়ার বিমান সংস্থার বিমানে৷ অবশ্য যাত্রীদের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তাদেরকে ভিন্ন বিমানে করে গন্তব্যস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছিল৷

EADS - Enders und Gallois
এয়ারবাস আবার আলোচনায়ছবি: AP

তাই মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হলেও এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা এড়াতে যত্নবান ইএডিএস৷ নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পরে বিমান হস্তান্তর করার জন্য তাদেরকে প্রায় ২০ কোটি ইউরো ক্ষতির শিকার হতে হবে৷ তবুও বিশ্ব মন্দার মতো এমন সংকটের সময়েও বিমান তৈরি শিল্প বেশ ভালই এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইএডিএস এর অর্থ বিভাগের পরিচালক হান্স পেটার৷ তিনি বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক সংকোচন এবং বিশেষ করে ইউরোপীয় অর্থনীতির বাজার টানাপোড়েনে থাকলেও বাণিজ্যিক বিমান শিল্প আগামী বছরগুলোতেও প্রবৃদ্ধি করতে পারবে বলে আমি মনে করি৷''

বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যেসব কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর অর্ধেকই হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বে এবং সেগুলো ইউরোপ ও অ্যামেরিকার নয়৷ তাই যদি আর কোন বড় মাপের মন্দা না হয় তাহলে এটা আমাদের জন্য কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে৷'' ইউরো অঞ্চলের সংকট সম্পর্কে অবশ্য কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি পেটার৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি তো রাজনৈতিক অঙ্গনের কেউ নই এবং সেটা এমন একটা বিষয় যে ব্যাপারে কেউ আগে থেকেই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না৷ তাই আমি যেটুকু বলতে পারি তা হলো আমরা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছি৷''

জানা গেছে, চলতি বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে ইএডিএস-এর লাভ ১৫ শতাংশ কমে ৩২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে দাঁড়িয়েছে৷ কারণ রাজস্ব চার শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৭৫১ বিলিয়ন ইউরো৷ ফলে তাদের নেট আয় হয়েছে ৩১ কোটি ২০ লাখ ইউরো৷ যাহোক, ইএডিএস জানিয়েছে, তাদের তৈরি এ৩৫০ বিমানগুলো ২০১৪ সালের প্রথমার্ধেই যাত্রী পরিবহণের কাজ শুরু করতে পারবে৷ তবে এগুলো ২০১৩ সালের শেষ দিকে আকাশে ওড়ার কথা ছিল৷

চলতি মাসে আকাশপথে চালু হওয়া বোয়িং এর ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সাথে প্রতিযোগিতা করার কথা রয়েছে এ৩৫০ বিমানগুলোর৷ অবশ্য ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানগুলো নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন বছর পরে আকাশে উড়েছে৷ মূলত হাল্কা কার্বন উপাদানের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতার কারণেই তাদের এই বিলম্ব৷ তবে ইএডিএস এর নতুন ঘোষণা প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিমান চলাচল বিষয়ক বিশ্লেষক স্কট হ্যামিল্টন বলছেন, ‘‘এ৩৫০ এর প্রত্যেকটি বিলম্ব বোয়িং'কে তাদের ৭৮৭ প্রকল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অবকাশ এনে দেবে৷ হয়তো তারা সেই সুযোগে ৭৮৭ থেকে ৭৮৯ পর্যন্ত ভিন্ন মাত্রার বিমান এনে হাজির করতে পারবে৷'' উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে এয়ারবাস বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোয়িং'কে ছাড়িয়ে যায়৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক