1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রামে ভিআইপি প্রার্থীদের অর্ধেকই ধরাশায়ী হতে পারেন

সমীর কুমার দে১৯ ডিসেম্বর ২০০৮

এবার চট্টগ্রামের নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এক ডজনেরও বেশি ভিআইপি প্রার্থী৷ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্ধেক ভিআইপি প্রার্থীই এবার ধরাশায়ী হতে পারেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷

https://p.dw.com/p/GJyT
ছবি: AP

বিভিন্ন সময় সরকারী দলের নেতা হিসেবে এলাকার মানুষের ওপর তারা চালিয়েছেন জুলুম-নির্যাতন৷ অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও এলাকায় আসেন না৷ এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে৷ এই ধরনের প্রার্থীদের দিক থেকে এবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভোটাররা৷ তাই শেষ মুহুর্তে নিজের আসনে জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এসব ভিআইপি প্রার্থী৷ তার জন্য খরচ করছেন বস্তা বস্তা টাকা আর কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে৷

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৩ জন ভিআইপি প্রার্থী রয়েছেন৷ এদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসন থেকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৬ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৪ (হাটহাজারী) আসনে আছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ৷ চট্টগ্রাম-৫ আসনে (রাউজান) আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দি আরেক ভিআইপি গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৭ (চন্দনগাঁ-বোয়ালখালী) আসনে মহাঐক্যজোট প্রার্থী জাসদের কার্যকারী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল৷ চট্টগ্রাম-৮ (কোতয়ালি) আসনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম-৯ (ডাবলমুরিং) আসনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (আনোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও তার প্রতিদ্বন্দি বিএনপির সারওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া) এলডিপি প্রধান কর্ণেল অলি আহমেদ (অব.) বীর বিক্রম ও চট্টগ্রাম-১৫ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী৷

চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের জন্য নির্বাচনী মাঠ নিষ্কন্টক নয়৷ তার কাঁধের ওপর নিশ্বাস ফেলছেন বিএনপির এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী৷ ইঞ্জিনিয়ার মোশারফকে জিততে হলে প্রচন্ড কষ্ট করতে হবে৷ এমনকি তিনি ধরাশায়ীও হতে পারেন এমনটি মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা৷ চট্টগ্রাম-২ আসনটিতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও জিতেছিল আওয়ামী লীগের রফিকুল আনোয়ার৷ এবার ভিআইপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম৷ তিনি সাকা চৌধুরীকে ছেড়ে কথা বলার লোক নন৷ তাই ভোটের হিসাব পেতে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ চট্টগ্রাম-৪ আসনে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের প্রতিপক্ষ বিএনপির ওয়াহিদুল আলম৷ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী হিসাবে ওয়াহিদুল আলমই এগিয়ে আছেন৷ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে জিততে হলে আরো বেশি ভোটারদের কাছে যেতে হবে৷ তার পক্ষে মাঠে নামাতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের৷

চট্টগ্রাম-৫ আসনে নির্বাচন করছেন দুই জোটের দুই ভিআইপি প্রার্থী একই চৌধুরী পরিবারের আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর ও বিএনপির গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে ফজলে করিম চৌধুরী জিতেছিলেন৷ এবারও তার অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো৷ সেক্ষেত্রে ধরাশায়ী হতে পারেন গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৬ আসনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ড. হাসান মাহমুদ৷ ক্লিন ইমেজের অধিকারী হাসান মাহমুদের কাছে এবার ধরা খেয়ে যেতে পারেন আলোচিত নেতা সাকা চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৭ আসনে মহাঐক্যজোট প্রার্থী জাসদের কার্যকারী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল টাকায়ালা প্রার্থী বিএনপির এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় এখনও পিছিয়ে৷ তাকে জিততে হলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঠে নামাতে হবে, খরচ করতে হবে টাকাও৷ চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসির প্রতিপক্ষ আরেক শিল্পপতি বিএনপির শামসুল আলম৷ আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র মহিউদ্দিন শামসুল আলমের পক্ষে৷ তাকে জিততে হলে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে ঘাম ঝরাতে হবে৷ শেষ পর্যন্ত হয়ত তিনি বের হয়ে যাবেন৷

চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান ভালো অবস্থানে থাকলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আফসারুল আমিনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন মেয়র মহিউদ্দিন৷ ফলে নোমানকে বেগ পেতে হচ্ছে৷ চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভালো অবস্থানে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এম এ লতিফও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন৷ চট্টগ্রাম-১২ আসনে বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজামের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক ভিআইপি আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু৷ বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যার ইস্যুতে নিজাম বেশ খানিকটা বেকায়দায়৷ চট্টগ্রাম-১৩ ও ১৪ আসনে এলডিপির কর্ণেল অলি আহমেদকে অনেকটাই বেগ পেতে হবে৷ একদিকে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা৷ তাই দু'টি আসনই তার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে৷ চট্টগ্রাম-১৫ আসনে সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরীও বাঁশখালীর একটি হিন্দু পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে মারা ইস্যুতে বেশ খানিকটা বেকায়দায়৷ তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের শিল্পপতি সুলতান উল কবীর চৌধুরী প্রচারণায়ও এগিয়ে আছেন৷ সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের ভিআইপি প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে৷ ধরাশায়ীও হতে পারেন কমপক্ষে অর্ধেক ভিআইপি প্রার্থী এমন ধারণা রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের৷