1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রেপ্তারের সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে মুক্ত নওশাদ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সন্দেশখালি যাওয়ার পথে কলকাতায় গ্রেপ্তার বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে তাকে মুক্তি দেয় পুলিশ।

https://p.dw.com/p/4cvcX
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকিকে সন্দেশখালি যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। ছবি: Satyajit Shaw/DW

মঙ্গলবার সকালে নওশাদ রওনা দেন সন্দেশখালির উদ্দেশে। সকাল নয়টার কিছু পরে কলকাতায় সায়েন্স সিটির কাছে পুলিশ তার পথ আটকায়। পুলিশের দাবি, বিধায়ক ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে তাকে লালবাজার থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। 

যদিও সন্দেশখালির যে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, সেখান থেকে কলকাতার সায়েন্স সিটি অনেক দূরে। এই কারণ দেখিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন নওশাদ। 

ভাঙড় বিধানসভার  বিধায়ক বলেন, ''আমাকে গ্রেপ্তার কেন করছেন, আপনাদের কাছে কি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে? আমাকে বেআইনিভাবে আটকানো হচ্ছে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা যেতে পারছেন আর আমাকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।''

সন্দেশখালি ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে এদিন কর্মসূচি রয়েছে নওশাদের।  আইএসএফের রাজ্য কমিটির নেতা নাসিরউদ্দিন মীর বলেন, ''ভাঙড় কেন্দ্রের পাশে সন্দেশখালি। তাই সেখানকার মানুষের কথা শুনতে চাইছিলেন ভাইজান। সন্দেশখালি থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।''

আজ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলও সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের পুলিশ আটকে দেয় ন্যাজাটে। সেখানে বসেই অবস্থান শুরু করেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা। দলের সদস্য সৌম্য আইচ রায় বলেন, ''তৃণমূলের মন্ত্রীরা অবাধে ভেতরে ঘুরছেন, আমরা আইন মেনে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বাধা দেয়া হচ্ছে।''

মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, ''দেশের আইন, সংবিধান মেনে রাজ্য সরকার পুলিশ-প্রশাসন পরিচালনা করছে না বা করবে না। ১৪৪ ধারা, ফৌজদারি মামলা দেয়া, গ্রেপ্তারি, এ সব সরকারপক্ষের অনুগামীদের ক্ষেত্রে এক রকম, বিরোধীদের ক্ষেত্রে অন্যরকম ভাবে ব্যবহার করা হবে।''

তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ''সন্দেশখালি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। দু-একটি জায়গায় মানুষের ক্ষোভ আছে। সেই অভিযোগ শুনে তার সমাধানের চেষ্টা করছে প্রশাসন। কিন্তু বিরোধীরা চাইছে উস্কানি দিয়ে সমস্যা জিইয়ে রাখতে।''

সন্দেশখালি এলাকায় জমি দখলের যে অভিযোগ উঠেছে, তার নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৩০ জনকে ইতিমধ্যেই জমি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। জমি দখল, ভেড়ি তৈরি, নোনা জল ঢুকিয়ে জমিকে কৃষির অযোগ্য করে তোলা, এমন নানা অভিযোগ শয়ে শয়ে জমা পড়েছে সন্দেশখালির সরকারি শিবিরে।

বিদ্বজ্জনদের সফর

বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় পুলিশের নজর এড়িয়ে সন্দেশখালির কিছুটা ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। এই কাজটি আরো সফলভাবে করলেন বামমনস্ক বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

আজ সকালে বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষ, সৌরভ পালধী, জয়রাজ ভট্টাচার্য, বিমল চক্রবর্তী, সীমা মুখোপাধ্যায়রাও এলাকায় যান। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় চারজনের দলে বিভক্ত হয়ে তারা নতুনপাড়া, পোলপাড়া এলাকায় যান। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। 

ধামাখালিতে অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, ''নারীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। তাদের সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করা হচ্ছে, তা আপত্তিকর। যে গরিব মানুষদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হোক। ওদের কাছে অনুরোধ করেছি, কোনো ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নিয়ে ভেদাভেদ করবেন না।'' 

শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে

সন্দেশখালি-কাণ্ডের নায়ক শেখ শাহজাহান এখনো ফেরার। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তৃণমূল নেতারা এতদিন বলছিলেন, আদালতের নিষেধ থাকায় রাজ্য সরকার শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট এই দাবি খারিজ করে দেয়।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঢানমের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ''শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। শেখ শাহজাহান তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তো তাকে ধরতে পারছে না।''

আদালত বান্ধব জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''একজন সাংসদ বলেছেন, আদালতের নির্দেশের ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।  তখন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। শুধু যে এসআইটি গঠন করা হয়েছিল, তার উপরে আছে।''

এরপর মঙ্গলবার আবার অভিষেক চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘সাত ফেব্রুয়ারি (সন্দেশখালি নিয়ে পুলিশের তদন্তে) স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তার পরের দিন অর্থাৎ আট ফেব্রুয়ারি থেকেই হিংসা এবং বিক্ষোভ শুরু হয়।''

অভিষেকের দাবি, ৭ ফেব্রুয়ারির ওই নির্দেশনামায় স্বাক্ষর রয়েছে স্বয়ং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, সাত দিনের মধ্যে শাহজাহান গ্রেপ্তার হবে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ফরমান, তিনদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে শাহজাহানকে। এ ব্যাপারে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্টও তলব করেছেন।

নিরাপদ সর্দারকে জামিন

মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট সন্দেশখালির সাবেক বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে জামিন দিয়েছে। সন্দেশখালিতে গন্ডগোলের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবারের মধ্যে জেল থেকে নিরাপদকে মুক্তি না দিলে আদালত অবমাননার নোটিস জারি হবে।