1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিজয়ের দিন

১৬ ডিসেম্বর ২০১৩

এ মৌসুমে ঢাকার রাস্তায় শীতের পিঠা বিক্রি করেন খুরশিদ আলম৷ বিক্রি ভালো হচ্ছে না৷ জীবনেরও নিরাপত্তা নেই৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন কিশোর৷ মাঝ বয়সে আরেক বিজয় দিবসে এসে তাঁর আক্ষেপ, ‘কেউ সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না৷’

https://p.dw.com/p/1AZjB
Bangladesch Monument Jatiyo Smriti Soudho
ছবি: National Monument of Savar

আক্ষেপটা রাজনীতিবিদদের নিয়ে৷ খুরশিদ আলম বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে দেখেছেন৷ স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময় নিজের চোখে দেখেছেন, এক মুক্তিযোদ্ধার বাবাকে রাজাকারদের ধরে নিয়ে যেতে৷ খুরশিদ আলম তখন সাত বছরের কিশোর৷ প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধার বাবা পরে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন৷ সেই রাজাকারদের একজন এখনো ভালোই আছে৷ খুরশিদ আলমের এ নিয়েও আক্ষেপ৷ স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করার মতো অভিযোগের প্রমাণিত যু্দ্ধাপরাধীদের পক্ষে দেশময় চলছে তাণ্ডব, তিনি এবং তাঁর মতো সাধারণ মানুষেরা রাস্তায় নামলে হচ্ছেন ককটেল কিংবা পেট্রোল বোমা হামলার শিকার, আয়-রোজগার বন্ধ হবার জোগাড়৷ বিজয় দিবসে তাই তাঁদের বিজয়ের আনন্দ কোথায়! ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিজয় দিবস নিয়ে তাই কোনো খুশির কথা বলতে পারেননি খুরশিদ আলম৷

[No title]

কোনো কোনো খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতো খুরশিদ আলমও মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকাতেই দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের৷ জামায়াত-শিবির তো নয়ই, এমনকি দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও জনদুর্ভোগ, দেশের মানুষ এবং সম্পদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ তাঁর ধারণা, দুই নেত্রী জনগণের কথা ভাবলে একটু ছাড় দিয়ে হলেও চলমান সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতেন৷

কোনো রকমে নিজের নাম লিখতে পারেন খুরশিদ আলম৷ সগর্বে বলার মতো পুঁথিগত বিদ্যা তাঁর নেই৷ সাত-আট বছর ধরে রাজধানীর পথচারীদের গ্রীষ্মে শরবত আর শীতে পিঠা খাইয়ে নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোটামুটি সুখের জীবনই যাপন করছিলেন৷ কিন্তু লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে স্ত্রী-সন্তানকে আর নিজের সঙ্গে রাখতে পারেননি৷ আয় কমছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে৷ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আগে যেখানে শীতে প্রতিদিন তিন হাজার টাকার পিঠাও বিক্রি হতো, সেখানে এ বছর সাকুল্যে আসে গড়ে আটশ থেকে এক হাজার টাকা৷ রাজধানীতে পরিবার নিয়ে আর থাকা হয়নি৷ খরচ কমাতে হবিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের৷

গ্রামেও যে স্ত্রী-সন্তান নিরাপদে, নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে তা-ও নয়৷ রাজনীতির বিষবাস্প গ্রামাঞ্চলকেও গ্রাস করেছে৷ ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ সেখানেও হয়৷ ঢাকায় নিজের চোখে গাড়ি পোড়াতে দেখেন, দেখেন ফুটপাতে উঠে পড়া গাড়িতে চাপা পড়ে পথচারীকে হাসপাতালে যেতে, নিজের আর স্ত্রী-সন্তানের জীবন নিয়ে দুর্ভাবনা সব সময় তাড়া করে তাঁকে৷ তবুও ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নামতে হয় প্রতিদিন৷ পিঠার ভ্যানের চাকা না ঘুরলে তো খুরশিদ আলমের জীবনের চাকাও ধীরে ধীরে থেমে যাবে!

সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য