1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুর ক্যান্সার

গ্রেটা হামান/আরবি৩ নভেম্বর ২০১২

জার্মানিতে বছরে দুই হাজার শিশু ও কিশোর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়৷ এই সব শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে৷ তাই সুচিকিৎসার পাশাপাশি অসুস্থ শিশুদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখাও বিশেষ জরুরি৷ আর এক্ষেত্রে তৎপর একটি সংস্থা৷

https://p.dw.com/p/16cEK
ছবি: picture alliance/dpa

কঠিন রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের লালিত স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে হ্যারৎসেনসভ্যুনশে বা ‘হৃদয়ের বাসনা' নামে একটি সংগঠন৷ যে সব শিশুর মনের সুপ্ত বাসনা এই প্রতিষ্ঠানটি পূরণ করতে পেরেছে, তাদের অর্ধেকই ক্যান্সারে আক্রান্ত৷ এই সব শিশু কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যায় তাদের অসুখের কথা৷ আট বছরের ইউলিয়ান ক্লাপসিং'ও এই রকম এক ছোট্ট রোগী৷ দুই বছর আগে লিম্ফোমা বা লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার শনাক্ত করা হয় তার দেহে৷ তারপর থেকে হাসপাতাল ও চিকিত্সার মধ্যেই আবর্তিত হচ্ছে তার ক্ষুদ্র জীবন৷ কিন্তু তার একটা প্রিয় জিনিসকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি কঠিন এই অসুখও৷ আর সেটা হলো ট্র্যাক্টর৷ ইউলিয়ানের ঘর ভরে আছে ট্র্যাক্টরের খুদে মডেল ও ছবিতে৷ কার্পেট, ওয়াল পেপার, জানালার তাক, বই, বিছানার চাদর, সবখানেই দেখা যাবে এই দৃশ্য৷

প্রিয় মডেলের ট্র্যাক্টরের কারখানা দর্শন

কিছুদিন আগে ইউলিয়ান তার প্রিয় মডেলের ট্র্যাক্টরের উত্পাদন কারখানায় যাওয়ার সুযোগ হয় তার৷ ‘হৃদয়ের বাসনা' সংস্থা এই সুযোগ করে দেয় তাকে৷ বন্ধু ফেলিক্স ও বাবার সাথে পুরোটা দিন কাটায় সে সেখানে৷ উপভোগ করে সুপার ট্র্যাক্টরের প্রস্তুত প্রণালী৷

Deutschland Kind Krebsleiden
ক্যান্সারের কাছে শিশুদের অসহায়ত্ব মর্মান্তিক৷ জীবনের শুরুতেই তাদের অনেককে সইতে হয় মৃত্যুযন্ত্রণা৷ছবি: DW/G.Hamann

মাত্র দুই মাস আগেও এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের কথা ভাবতেও পারেনি সে৷ তখন ইউলিয়ানকে জোরেসোরে কেমোথেরাপি নিতে হচ্ছিল৷ অনেক কিছুই ছিল নিষেধ৷ এই প্রসঙ্গে ইউলিয়ানের মা বলেন, ‘‘কোনো সিনেমা, সুইমিং পুল বা আইসক্রিম নয়৷ স্ট্রবেরি, চেরি এসব ফলও নিষেধ৷ এমনকি বাবার সঙ্গে ট্র্যাক্টরে চেপে কোথাও যাওয়াও বাদ৷ এইসব বাধা নিষেধ সে সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করেছে৷ এমনকি চেরি ও বেরি ফল পাড়তে সে সাহায্যও করেছে৷ কিন্তু আমি জানতাম, একটিও সে মুখে ঢোকাবে না৷''

কেমোথেরাপি দুর্বল করে

কেমোথেরাপি ইউলিয়ানের দেহকে অত্যন্ত দুর্বল করে ফেলেছিল৷ একারণে তার অনেক কিছু খাওয়া নিষেধ ছিল এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগেও সতর্ক থাকতে হতো তাকে৷ কেননা দুর্বল শরীরে ব্যাকটেরিয়ারা সহজেই আস্তানা গাড়তে পারে৷

কেমোথেরাপির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা ইত্যাদিও দেখা দেয়৷ কেমোথেরাপি শুধু অসুস্থ কোষকে নয়, সুস্থ কোষকেও আক্রমণ করে৷ বাচ্চাদের চিকিত্সাটাও বয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হয়৷ কেননা তারা তুলনামূলক বেশি ওষুধ সহ্য করতে পারে৷ এতে অবশ্য ছোটদের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়৷ ৮৫ শতাংশ শিশু চিকিত্সার পর সুস্থ হয়ে বাঁচতে পারে৷

বয়স্ক ও ছোটদের মধ্যে পার্থক্য

বয়স্ক ও ছোটদের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হলো, বয়স্করা অনেক সময় খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত চাপ, ধূমপান ইত্যাদি কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়৷ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম৷ ম্যুন্সটার'এর শিশু ক্লিনিকের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেরিবার্ট ইউর্গেন্স এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাহ্যিক কোনো কিছুর প্রভাবে ক্যান্সার দানা বাঁধতে যে সময়ের প্রয়োজন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেটা পাওয়া যায় না৷

অন্যদিকে শিশু কিশোরদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে ক্যান্সারের একটা সম্পর্ক রয়েছে৷ বড় হওয়া মানে কোষের বিভাজন৷ আর এই বিভাজনের সময় ত্রুটি থেকে ক্যান্সারও হতে পারে৷'' আর তাই প্রায়ই বাচ্চারা এমন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত, যেখানে শরীরের কোষ বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে, যেমন লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সার কিংবা লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার৷

Weltkrebstag 2012
ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু৷ছবি: picture-alliance/dpa

প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা দুষ্কর

ইউলিয়ান'এর মত লিম্ফোমা যাদের হয়েছে, তাদের রোগটি প্রথম দিকে বোঝা যায় না৷ প্রাথমিক অবস্থায় ছোট ছোট গিঁট দেখা যায় লসিকা গ্রন্থিতে৷ অনেক সময় চিকিত্সকদের অসুখটি শনাক্ত করতে দেরি হয়ে যায়৷ যেমন অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা বুঝতে পারেন যে, একটি টিউমার ইউলিয়ানের পেট ব্যথার কারণ৷ মা-বাবার জন্য বিরাট এক আঘাত৷ ইউলিয়ানের মা স্মরণ করে বলেন, ‘‘মনে হল পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে৷ মানুষের কিছু করার নেই৷ যেন রোগটির কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই৷ নল দিয়ে কেমো ঢোকানোর দৃশ্যটা চোখে ভেসে ওঠে৷ ভেসে ওঠে কীভাবে বাচ্চারা কষ্ট পায়৷''

অন্যদিকে বাঁচতে হলে কেমোথেরাপি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ইউলিয়ানের৷ মা তা বুঝতে পারলেও ইউলিয়ান প্রথম দিকে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি৷ ইউলিয়ানের মা জানান, ‘‘আমার মনে হয়, বাচ্চারা এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না৷ যদি আমি ইউলিয়ানকে বলতাম যে, তার টনসিল বা অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করতে হবে, বিষয়টি তার কাছে একই রকম মনে হতো৷ অনেক দিন পর সে প্রশ্ন করেছিল, এই অসুখে কী মানুষ মারাও যায়৷''

সপ্তাহে একবার পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউলিয়ানকে৷ আসল ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেছে সে৷ এখন ভবিষ্যতের দিকে আবার দৃষ্টি দিতে পারে ছোট্ট এই শিশুটি৷ ট্র্যাক্টরের প্রতি দুর্বলতার সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কেও একটা স্পষ্ট ধারণা আছে তার৷ আর তা হল কৃষিখেতে কৃষকদের কাজে সাহায্য করা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান