1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ, ক্রিকেট শুরু

২১ ডিসেম্বর ২০২২

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করলেও কাতারে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট৷ বিশ্বকাপ শেষ হতেই তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকে জমে উঠছে অসংখ্য ক্রিকেট ম্যাচ৷

https://p.dw.com/p/4LHbV
কাতারের রিয়েল স্ট্রাইকার্স ক্রিকেট মাঠে চলছে খেলা
কাতারের রিয়েল স্ট্রাইকার্স ক্রিকেট মাঠে চলছে খেলাছবি: Maximilian Merrill/DW

কাতার এমন এক দেশ যেখানে কাতারির সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশের মতো৷ বাকি ৯০ ভাগই অভিবাসী৷ তাই কাতারিরা ফুটবল বেশি পছন্দ করলেও সারা দেশে বেশি জনপ্রিয় আসলে ক্রিকেট৷

ফলে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার দু দিন আগে, অর্থাৎ গত শুক্রবার ভোরেই ব্যাট বল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অনেকে৷ কাতারে শুক্রবার মানে ছুটির দিন, শুক্রবার মানে ক্রিকেটের দিন৷

ভোর ছয়টায় তাই ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামে ট্রুথ ফাইটার্স আর দোহা চ্যালেঞ্জার্স৷ দু দলেই রয়েছে উপমহাদেশের চার দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের খেলোয়াড়৷ ভারত-পাকিস্তানের তো চির বৈরি সম্পর্ক৷ বাংলাদেশ আর পাকিস্তানেরও পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ইতিহাস আছে৷ খেলায় কি তার প্রভাব পড়ে?দোহা চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক জিথিন জানালেন তার দলের সবাই একে অন্যের ভাইয়ের মতো, সুতরাং বিরোধ বা ঝগড়া-বিবাদের প্রশ্নই ওঠে না, ‘‘‘‘আমরা ভাই ভাইয়ের সঙ্গে যেভাবে খেলে, ঠিক সেভাবেই খেলি৷ ফলে দিনটা খুব উপভোগ করি৷ গ্রীষ্মে তো ভোর সাড়ে চারটার সময় বেরিয়ে পড়ি খেলতে৷ খুব উপভোগ করি খেলাটা৷''

ভোরে কেন?

ট্রুথ ফাইটার্সের অধিনায়ক বিবিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সপ্তাহের বাকি দিনগুলো বাদ দিয়ে সাধারণত শুক্রবারেই খেলার কারণ কী? তিনি জানান, কাতারে ক্রিকেট মূলত অভিবাসীরাই খেলেন এবং যারা খেলেন তাদের সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন কাজ করতে হয়৷ এ কারণেই শুক্রবার ক্রিকেট খেলেন সবাই৷

কাতারের ক্রিকেট মাঠ জমিয়ে রাখা কয়েকজন ক্রিকেটার
কাতারের ক্রিকেট মাঠ জমিয়ে রাখা কয়েকজন ক্রিকেটারছবি: Maximilian Merrill/DW

তাই বলে ছুটির দিনেভোর সাড়ে চারটার সময়েও শুরু হয় খেলা? কেন? ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে আসা বিবিন জানান এর প্রধান কারণ তিনটি – ১. ভোরে সূর্যের তাপ একটু কম থাকে, ২. মুসলিম ক্রিকেটাররা শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করেন এবং ৩. পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করার আগে খেলা শেষ করে মাঠ পরিষ্কার করে দিতে হয়৷

মাঠ পাওয়া দায়

কাতারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ ভাগ, অর্থাৎ মাত্র তিন লাখ কাতারি৷ বাকি প্রায় ২৭ লাখ অভিবাসী হলেও এবং তাদের অনেকেই ক্রিকেট খেললেও তা খেলার পর্যাপ্ত মাঠ এখনো নেই৷ জিথিন বলেন, ‘‘এখানে মাঠ পাওয়া খুব কঠিন৷ কয়েকটা অফিসিয়াল গ্রাউন্ড আছে, কিন্তু এত টাকা লাগে যে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বা কোনো টুর্নামেন্টের জন্য আমরা সেগুলো নিতে পারি না৷ বাধ্য হয়ে এ ধরনের মাঠে খেলি৷''

কিন্তু জিথিনরা যেভাবে খেলছেন, সেভাবে খেললে বড় শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কাও আছে৷ জিথিনই জানালেন,‘‘আমার এক বন্ধু রাস্তার পাশের একটা জায়গায় খেলেছিল৷ অনুমতি না নেয়ায় তার ১২ হাজার কাতারি রিয়াল, অর্থাৎ প্রায় ৩,২৯৭ ডলার জরিমানা হয়েছে৷''

তা সত্ত্বেও অনুমতি নিয়ে মাঠে নামা বেশির ভাগ সময়ই হয়ে ওঠে না৷ যেখানেই পুরোনো মাঠ দেখেন, অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া সেখানেই খেলা শুরু করে দেন জিথিনরা৷ কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেখানে ফাঁকা জায়গা দেখি, সেখানেই খেলতে শুরু করি৷ সত্যি বলতে কি এটা আসলে বেআইনি কাজ৷ আর কোনো উপায় নেই বলে আমরা মাঝে মাঝেই তা করি৷''

কাতারের দুই ক্রিকেটার
কাতারের দুই ক্রিকেটারছবি: Maximilian Merrill/DW

কংক্রিট দিয়ে পিচ তৈরি

কাতারের কোথাও পিচ তৈরির উপযোগী মাটি নেই৷ সব জায়গায় কেবল বালু আর বালু৷  তাই পিচ বানাতে হয় কংক্রিট দিয়ে৷ পিচ বানানোও খুব ঝক্কির কাজ৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্রিকেটাররা তাদের পরিচিতদের এনে তাদের দিয়ে মাঠ খেলার উপযোগী করিয়ে নেন, তাদের দিয়েই বালু সরিয়ে কংক্রিট দিয়ে তৈরি করান পিচ৷

শুক্রবারের টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন বিবিনের মতো খেলোয়াড়রা৷ তারাই স্পন্সর জোগাড় করেন৷ স্পন্সরের  দেয়া টাকা দিয়েই কেনা হয় জার্সি এবং খেলার সরঞ্জাম৷

ভবিষ্যৎ-ভাবনা

জিথিন জানান, কাতারে এই মুহূর্তে কমপক্ষে ২৫০টি ক্রিকেট ক্লাব আছে৷ প্রত্যেক দলে রয়েছে অন্তত ২০ জন করে খেলোয়াড়৷ সরকার এবং ধনাঢ্যদের সহায়তা পেলে ক্লাব এবং ক্লাবের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রিকেটের মানেরও উন্নতি হবে বলে মনে করেন তিনি৷

ম্যাক্স মেরিল/ এসিবি