1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতা বইমেলায় এবার পরিবর্তনের হাওয়া

৩১ জানুয়ারি ২০১২

২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ৩৬-তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ এবারের বইমেলার থিম দেশ ইটালি৷

https://p.dw.com/p/13tQc
মেলা উদ্বোধন করছেন এবারের থিম দেশ ইটালির সাহিত্যিক বেপ্পে সেভেরনিনি, পাশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: DW

এবারই প্রথম কলকাতা বইমেলার জন্য বেঁধে দেওয়া হল তার নিজস্ব সুর - থিম সং৷ গানটি লিখেছেন বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং চন্দ্রিল ভট্টাচার্য৷ সুর দিয়েছেন হিন্দি-বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সঙ্গীত নির্দেশক শান্তনু মৈত্র৷ গানটি গেয়েছেন শান্তনু নিজে এবং বাংলা পপ গানের জনপ্রিয় শিল্পী মোনালি ঠাকুর ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিচিত শিল্পী কৌশিকী দেশিকান৷ এই যে বাংলা ব্যান্ড, সিনেমার সুর, পপ গান এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঘরানাকে মিলিয়ে দেওয়া, এমনটা এর আগে কখনও হয়নি কলকাতা বইমেলায়৷

এরকম অনেক নজিরবিহীন ঘটনাই ঘটল এই ৩৬-তম কলকাতা বইমেলায়, যা গত ৩৫ বছরে কখনও ঘটেনি৷ বোঝা গেল, বইমেলাতেও এবার ঢুকে পড়েছে পরিবর্তনের হাওয়া৷ প্রাতিষ্ঠানিক আড়ম্বর এবং প্রশাসনিক আড়াল, এই দুইয়ের ফাঁস থেকেই এবার যেমন মুক্ত হয়েছে বইমেলা৷ খোলামেলা, প্রায় নিরাভরণ মঞ্চে, ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতেতে এবারের থিম দেশ ইটালির সাহিত্যিক বেপ্পে সেভেরনিনি প্রথামাফিক হাতুড়ি ঠুকে উদ্বোধন করেছেন মেলার৷ তাঁদের সঙ্গে একদিকে যেমন উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান বাঙালি সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, তেমনই ছিলেন বিখ্যাত মডেল-অভিনেতা কবীর বেদি৷ ইঙ্গিত নির্ভুল ছিল যে মূল ধারা – অন্য ধারা, আমরা আর ওরা, এমন কোনও বিভাজন বইমেলায় প্রশ্রয় দিতে নারাজ বর্তমান সরকার৷ ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্যালক্যাটা স্কুল অফ মিউজিকের অর্কেস্ট্রায় একদিকে যেমন বাজল মোৎজার্ট, বাখ বা হান্ডেলের সুর, তেমনই বাজল রবীন্দ্রসঙ্গীত৷ বিজ্ঞপ্তিতে যদিও বলা ছিল অনুষ্ঠানে প্রবেশ আমন্ত্রণমূলক, কিন্তু বহু সাধারণ মানুষ ভিআইপি অতিথিদের সঙ্গে বসে দেখলেন সেই অনুষ্ঠান৷

Mahfuz Anam
মাহফুজ আনাম মেলায় আমন্ত্রিত ছিলেনছবি: DW

আরও একটি নতুন অনুষ্ঠান এবারই প্রথম শুরু হল বইমেলায়৷ কলকাতা লিটারারি মিট, যাতে বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের পাশাপাশি অংশ নিলেন বিক্রম শেঠ, চেতন ভগতের মত আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার ইংরেজি ভাষার ভারতীয় লেখকরা৷

ব্যক্তিগত জীবনে হোক বা সাহিত্যে, বার বার ফিরে আসি এই কলকাতায়, বললেন বিক্রম শেঠ৷ জানালেন, স্যুটেবল বয় উপন্যাস লেখার সময় যে অংশটি লিখতে তাঁর সবচেয়ে ভাল লেগেছে, তার প্রেক্ষাপট কলকাতা৷ আর কলকাতা, যে শহর তার নিজের লোকেদের ব্যাপারে রীতিমত স্পর্শকাতর, প্রায়ই ভালবেসে তাঁর সম্পর্কে বলে, আমাদের বিক্রম৷ আর তিনিও বলতে ভালবাসেন, আমার কলকাতা৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এবার বইমেলার একদিনের আলোচনার বিষয় ছিল সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব৷ চমৎকার বললেন বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত সাংবাদিক – লেখক মাহফুজ আনাম যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা৷ শুধু সাহিত্যে নয়, রবীন্দ্রনাথ আছেন তাঁদের প্রাত্যহিকতায়৷

মাহফুজ আনাম বলেন, তাঁর মনে আছে, ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গান, কবিতা, রবীন্দ্র-চর্চা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল আয়ুব খানের সামরিক একনায়কতন্ত্র৷ তখন তাতে তাঁদের যে প্রতিক্রিয়া, রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে বাঙালি জাতি (রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায়) যেভাবে মুখরিত হয়ে উঠল, আকস্মিকভাবে দরজা ভেঙে যেন এক জাতীয় চেতনার উন্মেষ হল৷ কাজেই রবীন্দ্রনাথকে বাঙালিরা শুধু কবি হিসেবে সম্মান করে না, রবীন্দ্রনাথ তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের অঙ্গ৷

বইমেলায় ভিড় হচ্ছে যথারীতি৷ বেশি ভিড় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্টলগুলিতে৷ এ ছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে নতুন বই৷ তার মধ্যে কোনও বইয়ে আবার দূর পরবাসের সৌরভ৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের শ্রোতাবন্ধুদের অতি পরিচিত সংবাদকর্মী অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর প্রথম কবিতার বই ‘কোলনের ভেরোনিকা সেন' প্রকাশিত হল এবারের বইমেলায়৷

প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য