1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মাহফিলে এমন আলোচকও আছেন যাদের ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আছে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ধানমন্ডির মসজিদ উত তাকওয়ার খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম লেখক ও ‘টিভি ব্যক্তিত্ব’ হিসেবেও পরিচিত৷ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কারণ, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, ধর্মভিত্তিক রজনীতি- এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷

https://p.dw.com/p/4NL6u
ধানমন্ডির মসজিদ উত তাকওয়ার খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম৷
ধানমন্ডির মসজিদ উত তাকওয়ার খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম৷ছবি: Private

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মূলে কী? এখানে সাম্প্রদায়িক হামলা কেন হয়? এসব হামলার মূল উদ্দেশ্য কী?

মুফতি সাইফুল ইসলাম: এর তিনটি কারণ আমার বিবেচনায়৷ প্রথমত, জ্ঞানের স্বল্পতা৷ আমাদের ধর্মীয় জ্ঞানের স্বল্পতা৷ আরেকটি বিষয় হলো, পর্যালোচনার অভাব৷ সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনা কারা ঘটায়, কেন ঘটায় তা গভীরভাবে দেখা হয়না৷ এটা দেখা উচিত৷ তৃতীয়ত, অনেক সময় ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনে ঘটনা ঘটানো হয়৷ কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থও থাকতে পারে৷ পরবর্তীতে এটার সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়কে জোড়া লাগানো হয়৷ এটাকে একটা সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া হয়৷ কিন্তু আপনারা যদি খেয়াল করেন, যারা প্রকৃত আলেম, যাদের প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা আছে, তারা কিন্তু এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়৷

সাম্প্রদায়িক হামলায় যারা জড়িত তাদের কি আইনের আওতায় আনা হয়? বিষয়গুলো কি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে?

আসলেই প্রকৃত বিষয় কী ঘটেছে, কারা জড়িত তা আমরা শেষ পর্যন্ত জানতে পারি না৷ আলোর মুখ দেখে না৷ একটা হাইপ ওঠানো হয়৷ বলা হয়, এই হয়েছে, সেই হয়েছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা আর প্রকৃত ঘটনা জানতে পারি না৷

‘কোরআনে বলা হয়েছে, কেউ যদি একটা প্রাণকে হত্যা করে সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করে’

জড়িতরা চিহ্নিত হয়? বিচারের আওতায় আসে?

আমাদের চোখে পড়ে না৷ অনেক সময় কাউকে কাউকে হয়তো ধরা হয়, যারা জড়িত না৷ আবার যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না৷

এর ভিতরে কি কোনো রাজনীতি আছে?

আমি রাজনীতি করি না, তাই রাজনীতি সম্পর্কে আমার ধারণা কম৷ তবে ব্যক্তিগতসহ নানা ধরনের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়৷

অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসলামে কী বলা হয়েছে?

ইসলাম হলো মানবতার ধর্ম৷ ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ ইসলাম মানুষের কথা বলে৷ ইসলাম প্রাণের কথা বলে৷ আমি যেমন প্রকৃতি ধ্বংস করতে পারি না, অহেতুক একটি প্রাণকে নষ্ট করতে পারি না, হত্যা করতে পারি না৷ আর মানুষকে তো হত্যা করা যাবেই না৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, কেউ যদি একটি প্রাণকে বাঁচিয়ে দেয় সে যেন গোটা মানব জাতিকে বাঁচিয়ে দেয়৷ কেউ যদি একটা প্রাণকে হত্যা করে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করে৷ এর পরে আর কী থাকতে পারে!

ইসলামের আলোকে তাহলে মুসলিমদের কী দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে?

হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মদিনা রাষ্ট্র কায়েম করেন, সেখানে শুধু মুসলিমরা ছিলেন না৷ সেখানে ইহুদিরা ছিলেন, মুশরিকরা ছিলেন৷ সেখানে প্রত্যেকের অধিকার সংরক্ষিত ছিল৷ ইসলামের কথা হলো পরস্পর পরস্পরকে দেখতে হবে৷ যার যা অধিকার তাকে তা দিতে হবে৷ আর যারা আমানতদার তাদের দায়িত্ব হলো সবার দেখভাল করা৷ ইসলামের কথা হলো, তুমি তরকারিতে ঝোলটা বাড়িয়ে দাও৷ তোমার পাশে যারা থাকেন, প্রতিবেশী যারা, সেখান থেকে তাদের দাও৷ প্রশ্ন এসেছে, যদি তিনি বিধর্মী হন? বলা হয়েছে তাকেও তুমি দেবে৷

যারা ধর্মীয় নেতা, ইসলামী নেতা তারা কি দায়িত্ব পালন করছেন?

আমার মনে হয় তারা দায়িত্ব পালন করছেন৷ আমরা আমাদের খুৎবায় এইসব কথা বলি৷ যখন মিডিয়াতে কথা বলি তখন বলি৷ আমাদের লেখালেখিতেও বিষয়গুলো তুলে ধরি৷ ভালো মুসলিমের পরিচয় হলো যার কর্ম থেকে, যার ভাষা থেকে, যার আচার আচরণ থেকে আরেকজন মুসলিম ভালো ও নিরাপদ থাকে৷

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে কীভাবে দেখেন?

আমি ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করছি, কিন্তু আমি ধার্মিক নই, আমি যদি ধর্মটাকে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করি, তাহলে এটা ইসলাম অবশ্যই ভালো চোখে দেখবে না৷ পৃথিবীর কেউই এটাকে ভালো বলবেন না৷

সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি কি কোনো প্রভাব ফেলে?

এটা নিয়ে আমি ঠিক বলতে পারবো না৷ কারণ, এটা সম্পর্কে আমার গভীর জ্ঞান নেই৷

ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে কীভাবে দেখেন? ইসলাম এটাকে সমর্থন করে ?

রাজনীতি হলো আমাদের জীবন কীভাবে চলবে, দুনিয়া চলবে, অর্থনীতি চলবে৷ ইসলাম হলো একটি জীবন বিধান৷ ইসলাম শুধুমাত্র ধর্ম নয়৷ রসুল (সা.) থেকে পরবর্তীতে ৫০ বছর খালিফারা, ওনার দেখিয়েছেন কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়৷ কীভাবে রাজনীতি করতে হয়৷ সেই রাজনীতি হলো শুদ্ধ রাজনীতি৷

রাজনৈতিক নেতারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারেন?

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আমাদের সবার ভূমিকা রাখা উচিত৷ রাজনৈতিক নেতাদের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি যারা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আছেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে৷ এটা সব ধর্মের জন্যই৷ কিছুদিন আগে রসুল (সা.) কে বিদ্রুপ করা হয়েছে৷ যারা এটা সূচনা করেন, তাদের বোঝা উচিত এটা কেন তারা করছেন৷

মুসলনমানরা যেমন তার ধর্মের অবমাননায় কষ্ট পান, তেমনি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাদের ধর্মের অবমননায় কষ্ট পান৷ কিন্তু আমাদের এখানে কেউ কেউ ওয়াজে অন্য ধর্মের ব্যাপক সমালোনা করেন৷ সেটা কি অবমাননা নয়?

প্রথমত, আমি সাইফুল ইসলাম, আমাকে দেখে যদি মনে করেন আমি ধর্ম, তাহলে কিন্তু ভুল হবে৷ প্রথমত দেখতে হবে কোরআন-সুন্নাহ কী বলেছে৷ কোরআনে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ডাকে, খবরদার তোমরা কখনো তাদের গালি দিও না৷ কারণ, তুমি যদি গালি দাও সে না বুঝে আল্লাহকে গালি দেবে৷ আমাদের শিক্ষাটা হলো, অন্য কোনো ধর্মের কাউকে আমরা কটাক্ষ করবো না৷ তারাও আমাদের কটাক্ষ করবে না৷

ওয়াজ মাহফিলে আমাদের বড় ধরনের দৈন্যতা এবং সমস্যা হলো- এমন এমন লোক আলোচনা করেন, তাদের ধর্মীয় জ্ঞান কতটুকু সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ যারা মাহফিলের আয়োজন করেন, তারা যেন ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে আসেন, তাহলে প্রকৃত দ্বীনের কথা জানা যাবে৷

এইসব বন্ধে তাহলে রাষ্ট্রের করণীয় কী?

রাষ্ট্রের উচিত হবে একটি কঠোর আইন করা যাতে ইসলামসহ কোনো ধর্মের কেউ যাতে অবমাননা করতে না পারে, যাতে কেউ কাউকে উসকে না দিতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য