1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঋণ আর বন্ধুত্ব

Debarati Guha২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২

জরিপ অনুযায়ী ২০০৫ সালে জার্মানরা ছিল গ্রিকদের ‘সবচেয়ে প্রিয় বিদেশি’৷ কিন্তু গ্রিসের তীব্র ঋণ সংকট সমাধানে জার্মানি যে ভূমিকা নিয়েছে, এবং জার্মান সংবাদমাধ্যমে গ্রিস সংক্রান্ত বিবরণে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ফলে গ্রিকরা রুষ্ট৷

https://p.dw.com/p/149L8
ছবি: picture alliance/Rainer Hackenberg

জার্মান ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো স্বভাবতই চলতি ঋণ সংকটে গ্রিস অথবা গ্রিসদের রেয়াত করেনি৷ নিজেদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা কিংবা ইউরো মুদ্রার স্থায়িত্ব নিয়ে সাধারণ জার্মানদের উদ্বেগেরও পুরো সুযোগ নিয়েছে জার্মান ইয়েলো প্রেস৷ মুশকিল এই যে, ইউরো এলাকার সর্বাধিক শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে গ্রিসের আর্থিক ত্রাণ সংক্রান্ত যাবতীয় আলাপ-আলোচনা, সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপে জার্মানিকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়েছে৷ কাজেই সাধারণ গ্রিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে জার্মানি ও জার্মানরা ক্রমে ক্রমে হিরো থেকে ভিলেনে পর্যবসিত হয়েছে৷

ফল এই যে, একদিকে যেমন গ্রিক রাষ্ট্রপ্রধান কারোলস পাপুলিয়াস'কে জার্মান অর্থমন্ত্রী ভোল্ফগাং শয়েবলে'র সমালোচনা করতে শোনা গেছে, অপরদিকে তেমনি একাধিক গ্রিক সংবাদপত্র ও পত্রিকার ব্যঙ্গচিত্রে জার্মান রাজনীতিকদের নাৎসি উর্দিধারী হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ জার্মান তরফে ‘দেউলিয়া গ্রিকদের' সম্পর্কে ব্যঙ্গোক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্রিক তরফে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত জার্মানদের' নিয়ে মন্তব্য৷ নিকোস দিমু একজন গ্রিক৷ বিজ্ঞাপনের জগতে ও সংবাদপত্রের জগতে তার স্বচ্ছন্দ বিহার৷ দিমু'র মতে এই সংকটের কালে জার্মানরা অথবা গ্রিকরা, কেউই ‘ভদ্র আচরণ' করেনি:

Symbolbild Griechenland Bank of Greece
গ্রিসের আর্থিক সংকট এই সম্পর্ক শীতলতার জন্য দায়ীছবি: AP

‘‘মনে রাখতে হবে যে, গ্রিকরা চিরকালই যা কিছু ঘটে, তার জন্য অন্যদের দায়ী করতে অভ্যস্ত৷ আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন ইংরেজদের দোষী করা হতো৷ তারপরে এলো মার্কিনিরা৷ এখন জার্মানদের দোষী করা হচ্ছে৷ লোকেদের মাথায় নানা ধরণের যড়যন্ত্রের কাহিনি ঘুরছে৷ এমনকি অনেকের ধারণা যে, এই সংকটটাকে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা'তে গ্রিসকে সস্তায় বিক্রি করে দেওয়া যায়৷''

দিমু'কে তার এই সব চিন্তা-ভাবনার জন্য গালিগালাজও শুনতে হয়েছে৷ তিনি আবার সেই সব চিন্তা-ভাবনা ব্যক্ত করেছেন, ‘‘একজন গ্রিক হবার দুর্ভাগ্য'', এই নামের একটি সংকলনে৷ বইটির উদ্দেশ্য: জাতির সত্তার অনুসন্ধান এবং গ্রিকরা আত্মসমালোচনায় অপারগ কেন, সেই রহস্যের উদঘাটন করা৷ গ্রিসের সমাজবিজ্ঞানীরাই বলছেন, এ'দেশে প্রতিভা ও কর্মকৃতির পরিবর্তে বংশপরিচয় ও যোগাযোগই বেশি কাজ দেয়৷ সামন্তপ্রথা জনিত কায়দায় স্বজনপোষণের ফলে উপরতলার মানুষরাই শুধু উপকৃত হয়৷ এটা এমন একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থা যা নিজে থেকেই চলে৷ ভাসিলিকি গিয়র্গিয়াদু এথেন্সের পান্তেইয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা৷ তিনি কিন্তু সতর্ক করে দিয়েছেন:

‘‘বাইরে থেকে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের পার্থক্যটা মনে রাখতে হবে এবং গ্রিসের সুশীল নাগরিকদের অপমান করলে চলবে না৷ ... জার্মান নাগরিক এবং করদাতাদের জানতে হবে যে, লক্ষ লক্ষ গ্রিক ভালোভাবে কাজ করেন এবং কর জমা দিয়ে থাকেন৷ এরা হলেন গ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা বড় অংশ৷ যে সব সৎ গ্রিক বর্তমান সংকটে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন, এবং ওপরমহলের যারা এই সংকটের জন্য দায়ী, তাদের মধ্যে ফারাক করতে হবে৷''

গ্রিস এবং জার্মানির মধ্যে যে ধরণের অপবাদের আদান-প্রদান হচ্ছে, গিয়র্গিয়াদু সে বিষয়ে চিন্তিত৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সিমেন্স'এর মতো একাধিক জার্মান শিল্পসংস্থার বিরুদ্ধে গ্রিসে উৎক্রোচ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে৷ ফলে গ্রিক গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে জার্মান কোম্পানিগুলি দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেয়৷ কিন্তু গিয়র্গিয়াদু বলছেন:

‘‘শুধু জার্মান কোম্পানিগুলির কারণেই যে গ্রিসে দুর্নীতি আছে, এমন নয়৷ গ্রিসে দুর্নীতি থাকার কারণ, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সম্ভবত অর্থনীতিও অংশত ঐ দুর্নীতির মাধ্যমেই বেঁচে আছে৷''

দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটানোর পন্থা দেখিয়েছেন এক গ্রিক পত্রিকার কার্টুনিস্ট৷ জার্মান কোচ অটো রেহাগেল ছিলেন গ্রিক ফুটবল দলের সফল কোচ৷ কার্টুনে রেহাগেল'কে গ্রিসের ব্যয় সংকোচ তত্ত্বাবধানকারী কমিশনার হবার অনুরোধ করছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জার্মান অর্থমন্ত্রী ভোল্ফগাং শয়েবলে৷

প্রতিবেদন: ইয়ানিস পাপাদিমিত্রু / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক   

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য