1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রমজানে ইরাক

২৮ জুলাই ২০১২

ইরাকে শান্তি ফেরার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ বিগত কয়েক বছর ধরে রমজান মাস এলেই বোমা হামলার ঘটনা বেড়ে যায়৷ ইরাকে হিংসালীলার এই প্রবণতার পিছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/15fV2
ছবি: Reuters

আবার হিংসার চক্র

২০১০ সালের পর ইরাকে এমন রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে নি৷ ১১৫ জনেরও বেশি মানুষ নিহত, প্রায় দ্বিগুণ আহত৷ সোমবার দেশের ১৪টি শহরে প্রায় একই সঙ্গে ২২টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে৷ সিরিজ বোমা হামলার পরেও প্রায় প্রতিদিন গোটা দেশে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ শুধু জুন মাসেই হতাহতের সংখ্যা প্রায় ২ বছর আগের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সেই ২০১১ সালের নভেম্বর মাসকে মার্কিন সেনা অভিযানের পর সবচেয়ে শান্ত মাস হিসেবে তুলে ধরেছে ‘ইরাক বডি কাউন্ট' নামের এক ওয়েবসাইট৷ তারপর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে৷ হিংসার চক্র কি আবার ইরাকে ফিরে আসছে?

আল কায়েদার অবস্থান

সোমবারের হামলার ঠিক দুই দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাগদাদে আল-কায়েদার প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এর প্রায় এক সপ্তাহ আগে আনবার প্রদেশে আল-কায়েদার কয়েকজন নেতাকে হত্যা করা হয়৷ এপ্রিল মাসে টিকরিট প্রদেশে গ্রেপ্তার করা হয় এক আল-কায়েদা নেতাকে৷ দিয়ালা প্রদেশে সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর দাবি, আল-কায়েদা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ ফলে তারা আর কোনো বড় হুমকি নয়৷ বড়জোর ৫ থেকে ১০ হাজার যোদ্ধা ইরাকে সন্ত্রাস ছড়িয়ে আসছিল৷

Irak Autobombe in Kirkuk
রমজান মাস এলেই বোমা হামলার ঘটনা বেড়ে যায়ছবি: Reuters

সাম্প্রতিক হামলার জন্য ইরাকি কর্তৃপক্ষ আবার সেই আল-কায়েদাকেই দায়ী করছে৷ এই সব হামলার পেছনে আল-কায়েদার হাত নাকি একেবারে স্পষ্ট৷ ইরাকে আল-কায়েদা সংগঠন হামলার দায় স্বীকারও করেছে৷ রমজানের সময় সিরিজ বোমা হামলার ধাক্কা এর আগেও দেখেছে ইরাকের মানুষ৷ এ সময় বেড়ে যায় আত্মঘাতী হামলার ঘটনাও৷

২০০৫ সালে ইফতারির সময় বিস্ফোরক বোঝাই দুটি ট্রাক দুটি হোটেলের মাঝে যে তাণ্ডবলীলা ঘটিয়েছিল, তার ফলে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়৷ ইফতারির সময় মানুষের সমাগমের সুযোগ নিয়ে এমন সুপরিকল্পিত হামলা চালিয়ে আসছে আততায়ীরা৷ প্রায়ই সে সব হামলার দায় স্বীকার করে ‘ইসলামি রাষ্ট্র ইরাক' নামের এক সংগঠন৷ চলতি বছরও আল-কায়েদা ও তার সহযোগীরা রমজানের সময় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটানোর চেষ্টা চালাবে বলে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী আশঙ্কা করছে৷

হামলার নেপথ্যে কারা?

প্রশ্ন হলো, কে বা কারা এই সব হামলার পেছনে রয়েছে? তাদের আর্থিক মদতই বা আসছে কোথা থেকে? ইরাকের গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী ‘ইসলামি রাষ্ট্র ইরাক' সংগঠন আর্থিক অনটনের মধ্যে রয়েছে৷ ইরাকি সংসদের খ্রীস্টান সদস্য ইয়োনাদাম কানা মনে করেন, ইরাকে সন্ত্রাস আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷

Irak Autobombe in Najaf
ইরাকে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমেছবি: picture-alliance/dpa

গত বছরের শেষে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর থেকে সরকার কোনো না কোনো সংকটের মধ্যে রয়েছে৷ মাসের পর মাস ধরে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি'র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করে চলেছে৷ মালিকি নাকি বিশাল ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রেখেছেন এবং সুন্নিদের দূরে রাখার চেষ্টা করছেন৷

রাজনৈতিক অচলাবস্থা

মালিকি ও তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াদ আলাউয়ি দুজনেই শিয়া সম্প্রদায়ের হওয়া সত্ত্বেও জোট সরকার গড়তে রাজি নন৷ ফলে মূলত কুর্দিদের সঙ্গে এক জাতীয় ঐক্য সরকার গড়তে বাধ্য হয়েছেন মালিকি৷ স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের দলের হাতে রেখেছেন মালিকি৷ অথচ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও আলাউয়ি'র দল বোঝাপড়া অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না৷ নতুন ‘নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ' কর্তৃপক্ষের সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন মালিকি৷ ইয়াদ আলাউয়ি আবার সুন্নিদের সমর্থন পাচ্ছেন৷ মাসের পর মাস ধরে এই দুই ব্যক্তির সংঘাতের জের ধরে ইরাকে অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি থমকে রয়েছে৷ পেট্রোলিয়াম শিল্প ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না৷

হিংসার বহিপ্রকাশ

মিশরের মতো দেশে মানুষ অসন্তুষ্ট হলে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়ে থাকে৷ ইরাকে সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটছে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে৷ কির্কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান ফরিজ ইয়াজিম হামুদ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আসলে হিংসার একটা ঐতিহ্য রয়েছে৷'' তিনি সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন৷ মার্কিন প্রশাসনের এক সমীক্ষা অনুযায়ী ইরাকের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, যে ধর্মান্ধ মহল ও রাজনৈতিক নেতারা হিংসাকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগান৷ সাদ্দাম হুসেনের আমলে তো বটেই, কুর্দি এলাকার মধ্যে গৃহযুদ্ধের সময়ে হিংসাকে কাজে লাগানো হয়েছে৷ অতীতেও এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷

প্রতিবেদন: বির্গিট স্ভেনসসন / এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য