1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউটিউবে টাকা উড়ে

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
৩ মার্চ ২০২৩

গ্রামের এক স্কুল শিক্ষকের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ইউটিউব চ্যানেল থেকে এখন মাসিক আয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা৷ সাংবাদিকতা ছেড়ে ইউটিউবিং শুরু করা ব্যক্তির এখন মাসে আয় ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা৷

https://p.dw.com/p/4ODYC
‘তন্নি আর্ট অ্যাণ্ড ক্রাফট’ চ্যানেলের স্ক্রিনশট৷
‘তন্নি আর্ট অ্যাণ্ড ক্রাফট’ চ্যানেলের জিন্নাত সুলতানা তন্নি তার মাসিক আয় ১২ থেকে ১৫ হাজার ডলার বলে ডয়চে ভেলেকে জানান৷ছবি: YouTube/Tonni art and craft

এক সময়কার জনপ্রিয় ইউটিউবার, এখন ইউটিউবিং না করলেও দেশজুড়ে পরিচিতির কল্যাণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করেন, যার সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক এখন সাড়ে তিন লাখ টাকা৷

এরকম নানা গল্প এখন বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে আছে৷ এক সময় যেখানে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার টাকা যেতো গণমাধ্যমের কাছে, সেটার বড় একটা অংশ এখন ঘুরে-ফিরে পাচ্ছেন কনটেন্ট নির্মাতারা৷ 

একজন বাজার বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কেবল ইউটিউব বিজ্ঞাপনে ৬শ কোটি টাকা ব্যয় করেন দেশি বিজ্ঞাপনদাতারা৷ ফেসবুক, গুগলের মতো অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো মিলিয়ে এই বাজারের আকার ২ হাজার কোটি টাকার মতো৷

অন্য এক কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই বাজারের আসলে সীমা নেই৷ নানা খাতে বিদেশি বিজ্ঞাপন আসছে৷ প্রবাসীদের জন্য টার্গেট করে বানানো কনটেন্টে সেখানকার বিজ্ঞাপন পাওয়া যাচ্ছে৷ ভালো কনটেন্ট নির্মাণ করলে এই বিজ্ঞাপন পাওয়ার হার আরো বাড়বে৷

বাংলাদেশে কনটেন্ট নির্মাণের শুরু

ইউটিউবের প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ করিম৷ ২০০৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশি বংশদ্ভূত এই ব্যক্তি মি অ্যাট দ্য জু’—শিরোনাম দিয়ে এই ভিডিও প্রকাশ করেন৷

ইউটিউবের প্রথম ভিডিও আপলোডকারীর পূর্বপুরুষদের দেশ হলেও বাংলাদেশের মানুষে এই প্ল্যাটফর্মে আসে কিছুটা পরেই৷

পলাশ মাহমুদ
পলাশ মাহমুদছবি: Privat

২০০৯-১০ সালের দিকে  বাংলাদেশে নানা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন৷ গতানুগতিক সাংবাদিকতা থেকে কনটেন্ট নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় আসা পলাশ মাহমুদের মতে, ওই সময়টা ছিল একটু ভিন্ন৷ অধিকাংশ টেলিভিশন মাধ্যম তখন ইউটিউবকে আমলে নেয়নি৷ এটা যে কনটেন্ট নির্মাণ ও আয়-রোজগারের আলাদা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনি৷

তার মতে, তখন যারা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন, তাদের মধ্যে অনেক টিভি চ্যানেলের আইটি বিভাগের লোকজনও ছিল, যারা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে সেখানে টিভির জন্য আসা ভিডিও আপলোড করতেন৷

তবে এখনকার সুপরিচিত ইউটিউবাররা কাজ শুরু করেছেন আরেকটু পরেরদিকে৷ এদের মধ্যে অনেকেই এগিয়ে রাখেন সালমান মুক্তাদিরকে৷ অনেকের কাছেই তিনি বাংলাদেশের ‘ইউটিউব গুরু’৷ তাদের কারো কারো মতে, তাকে দেখেই বাংলাদেশের পরবর্তী তরুণ কনটেন্ট নির্মাতারা ইউটিউবে এসেছে৷

সালমানের সালমন দ্য ব্রাউনফিশ চ্যানেলটি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৈরি করা হয়৷ চ্যানেলে থাকা সবচেয়ে পুরনো ভিডিওটি ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তোলা হয়েছে৷  এখন পর্যন্ত এই চ্যানেলের ভিডিও প্রায় ১৫ কোটিবার দেখা হয়েছে৷

বাংলাদেশে তো কনটেন্টের খুব একটা ভ্যারিয়েশন নেই: সালমান মুক্তাদির

ইউটিউবিং শুরুর পর গত ১১ বছরের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তখন সালমান মুক্তাদিরকে কেউ চিনতো না৷ ওই সময় আমি নিজেকে ব্যর্থ মনে করতাম৷ পড়াশোনায়ও ভালো ছিলাম না৷ সুতরাং কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না৷ এখন এসে এটার বিপরীতটাই মনে হয়৷’’

বাংলাদেশে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হাতে গোনা কয়েকজন বলে মনে করেন সালমান৷

এতদিন হলেও কনটেন্টের খুব বেশি বৈচিত্র্য নেই বলে মনে করেন তিনি৷  তিনি বলেন, ‘‘অডিয়েন্সদের মধ্যে এক ধরণের একঘেয়েমি চলে এসেছে৷ ওরা একই রকম ভিডিওই দেখছে৷ আমাদের বাংলাদেশে তো কনটেন্টের খুব একটা ভ্যারিয়েশন নেই৷’’

সালমান এখন ইউটিউবে কনটেন্ট নির্মাণে নিয়মিত নন৷ তিনি তিনটি প্রতিষ্ঠানের কনটেন্ট হেড হিসাবে কাজ করেন৷ সেখান থেকে তিনি বেতন এবং শেয়ার পান৷ এছাড়া আরো নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে বাৎসরিক চুক্তি বা এককালীন চুক্তিতে কাজ করেন৷ তার যে কোনো কাজের ন্যূনতম পারিশ্রমিক সাড়ে তিন লাখ টাকা৷

চাকরি ছেড়ে কনটেন্ট নির্মাণে সালাউদ্দিন সুমন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়া সালাউদ্দিন সুমন টিভি সাংবাদিকতা করতেন৷ সময় টেলিভিশনে বিশেষ প্রতিনিধিও হয়েছিলেন তিনি৷

সালাউদ্দিন সুমন
সালাউদ্দিন সুমনছবি: Privat

দেশের সাংবাদিকতা পেশায় অনিশ্চয়তা, বেশি বেতনের কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রবণতার কারণে সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য একটা আয়ের উৎস সন্ধান করছিলেন তিনি৷ নানা ব্যবসায় হাত দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনোটাই ঠিক জমে উঠেনি৷ এরই মাঝে ২০১৯ সালে তিনি শুরু করেন ভ্লগিং৷

তার তৈরি নানা কনটেন্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে নানা সময়ে৷ কনটেন্ট তৈরির কারণে ২০২১ সালে তাকে চাকরিও ছাড়তে হয়৷

তবে যে চাকরিতে তার মোট মাসিক উপার্জন ছিল ৭৫ হাজার টাকার মতো৷ সালাউদ্দিন সুমনের ভাষায়, ‘‘যখন আমাকে চাকরি অথবা ইউটিউবিং বেছে নিতে বলা হয়, তখন আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই সহজ ছিল৷ আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলাম৷’’

কারণ, এর আগেই ইউটিউব থেকে ব্যাপক সাড়া পেতে শুরু করেছিলেন সালাউদ্দিন সুমন৷ সময় টিভির চাকরি ছাড়ার পর কিছুদিন বিবিসি বাংলায় ফ্রিল্যান্সিং করলেও শিগগিরই সেটাও ছেড়ে দেন৷ এখন পূর্ণকালীন কনটেন্ট তৈরি করেন তিনি৷

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের আয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় সোশ্যাল ব্লেড নামের একটি ওয়েবসাইটে৷ এই ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তার চ্যানেল এখন মাসিক ১,৬০০ ডলার থেকে ২৫,৫০০ ডলার আয় করছে৷

এই অংকের সত্যতা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা বিভিন্ন রকম হয়৷ কোনো মাসে হয়ত ১০ লাখ টাকা হয়, কোন মাসে তিন লাখ টাকা হয়৷’’

কুষ্টিয়ায় ইউটিউব গ্রাম

বাংলাদেশে এই ইউটিউব কন্টেন্ট নির্মাণে গ্রাম-গঞ্জের মানুষও এগিয়ে এসেছে৷ এর মাঝে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মানুষকে সংযুক্ত করে তিন মামা-ভাগ্নে গড়ে তুলেছেন ৫টি ইউটিউব চ্যানেল৷

ইউটিউব গ্রামের সদস্যরা৷
ইউটিউব গ্রামের সদস্যরা৷ছবি: Privat

এর মাঝে কেবল এরাউন্ড মি বিডি নামের চ্যানেলের ভিডিও এ পর্যন্ত ১৪৯ কোটি বার দেখা হয়েছে৷  সোশ্যাল ব্লেডের মতে, এই চ্যানেলের মাসিক আয় ২২শ ডলার থেকে ৩৫,১০০ ডলারের মতো৷ ভিলেজ গ্র্যান্ড পা'স কুকিং নামে তাদের আরেকটি চ্যানেল দেখা হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি বার৷ সোশ্যাল ব্লেড বলছে, এই চ্যানেলের মাসিক আয় ২৪শ ডলার থেকে ৩৮ হাজার ৮শ ডলার৷ ফরচুনেট গেস্ট নামে তাদের আরেকটি চ্যানেল দেখা হয়েছে সাড়ে চার কোটি বার৷ এই চ্যানেলের আয় দেখানো হয়েছে, ১১৪ থেকে ১৮০০ ডলার৷

ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এই গ্রামের মানুষ একত্রে রান্না করে, খাওয়া-দাওয়া করে, উৎসব আনন্দে মেতে থাকে৷

চ্যানেলের উদ্যোক্তা মামা দেলোয়ার হোসেন গ্রামের মোল্লাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক৷ আর ভাগ্নে লিটন আলী একজন সফটওয়ার প্রকৌশলী৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন দেলোয়ারের আরেক ভাই৷ এই তিনজনে মিলেই পরিচালনা করেন এই চ্যানেলগুলো৷

দেলোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, চ্যানেল থেকে পাওয়া অর্থে তারা মানুষের ঘর নির্মাণ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, এমনকি গ্রামে একটি ইউটিউব পার্কও নির্মাণ করছেন৷

চ্যানেল থেকে এখন তারা মাসে ৪-৫ লাখ টাকার মতো আয় করেন৷ তাদের চ্যানেলের কনটেন্টের বড় একটা অংশ যেহেতু খাবার নিয়ে, তাই খাবারের উপকরণ কিনতে এবং এখানকার কর্মীদের বেতনে চ্যানেলের বড় একটা অংশ ব্যয় হয়৷ বাকিটা মানুষের পেছনেই ব্যয় করে ফেলেন বলে দাবি দেলোয়ার হোসেনের৷

যে ধরনের কনটেন্টের তুমুল জনপ্রিয়তা

বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে ইউটিউবারদের নিয়ে নানা সময়ে প্রতিবেদন করেছেন সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ৷

‘‘বাংলাদেশের ‘ইউটিউব কিং’ কে? যাকে ভাবছেন তিনি নন’’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে তিনি ঢাকার ইউটিউবারদের মূল ধারার বাইরে থাকা মতিউর রহমান মিথনের কথা তুলে আনেন৷  প্রতিবেদনটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক হইচই হয়৷ 

বাংলাদেশের ইউটিউবের কনটেন্টের রকমফের নিয়ে প্রশ্ন করলে মাসুম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ইউটিউব, ফেসবুকে বাংলা নাটক, খাদ্য ও ভ্রমণ ভ্লগ, ধর্মীয় বক্তব্য, তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক ভিডিও, রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম, নবিশ অভিনেতাদের ফানি ভিডিও, রান্নার ভিডিও'র বড় একটা শ্রেণির দর্শক রয়েছে৷ কনটেন্ট ক্রিয়েটররা এখানে সেই বিষয়গুলোই দেখাতে চান, যেগুলোতে বেশি ভিউ পাওয়া যাবে৷’’

এবং কপি রাইট ইস্যু

সোশাল মিডিয়ার কনটেন্ট নির্মাণে ঘুরেফিরে আসে কপি রাইট প্রসঙ্গ৷ এই বিষয়ক নিয়ম-নীতি না জানার কারণে সমস্যায় পড়েন অনেকে৷ আবার অনেকে এর সুফলও পাচ্ছেন৷ ছবি, ভিডিও, গ্রাফিক্সের মতো বিষয়গুলোর কারণগুলো কপি রাইট ইস্যুতে থাকলেও এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আসে মিউজিকের প্রসঙ্গ৷

গত বছর শাহ আবদুল করিমের গান থেকে ১০ হাজার ডলার রয়্যালিটি পেয়েছেন তার পরিবার৷ এ প্রসঙ্গে তার ছেলে শাহ নূর জালাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর আগে এটা আর কখনোই হয়নি৷ কেউ আমাদের গানের জন্য কোনো টাকাই দেয়নি৷’’

সোশাল মিডিয়া নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলেও ক্ষোভ উগড়ে দেন কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির নামে৷ তার মতে, এসব মোবাইল কোম্পানি তাদের অনুমতি না নিয়েই বা তাদেরকে কোনোরকম টাকা -পয়সা না দিয়ে তার বাবার গানকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে৷

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে বলে থার্ড পার্টি থেকে নিয়েছে৷ মালিক আমি, সেখানে থার্ড পার্টি থেকে কীভাবে নেয়?’’

এই বিষয়ে ঢাকায় এসে আইনজীবী নিয়োগ করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করবেন সেই সামর্থ্য নেই বলেও জানান তিনি৷

শাহ আবদুল করিমের গানের কপিরাইট নিয়ে কাজ করছে জেডএম স্টুডিও নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ এর স্বত্ত্বাধিকারী জুয়েল মোর্শেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, আরো অনেক শিল্পীর গানের কপিরাইট সংরক্ষণের কাজ করছেন তারা৷

এই কাজ করতে তারা সরকার এবং শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করছেন বলেও জানান৷

তিনি বলেন, ‘‘শাহ আব্দুল করিমের গান থেকে যে অর্থ আমরা পেয়েছি, এতটা আমরা আশা করিনি৷  অন্যদের ক্ষেত্রেও আমরা ভালো ফল পাবো বলে আশা করছি৷’’

বদলে যাচ্ছে বাজার

সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের এই সময়ে বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিংয়ের বাজারও বদলে যাচ্ছে নানাভাবে৷ ২০২১ সালে দেশের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার হঠাৎ করে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দেয়৷  তখন অনেকেই এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছিলেন৷

ব্রতী তাসনিম নূরীন
ব্রতী তাসনিম নূরীন ছবি: Privat

মার্কেটিং এজেন্সি ম্যাগনিটো ডিজিটাল লিমিটেডের হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড কনটেন্ট ব্রতী তাসনিম নূরীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষ এখন আর শুধু বিজ্ঞাপন দেখে কিছু কেনে না৷ বিজ্ঞাপন থেকে তারা হয়ত প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে, কিন্তু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা যাচাই-বাছাই করে, রিভিউ দেখে, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞেস করে; তারপর সিদ্ধান্ত নেয়৷ সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন বিজ্ঞাপনের পরের স্টেপগুলোতে যেকোনো ব্র্যান্ড সহজেই নিজেকে বিভিন্নভাবে হাজির রাখতে পারে৷’’

‘‘সরাসরি বিজ্ঞাপন ছাড়াও ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে, ইন্টারেস্টিং কনটেন্টের মোড়কে সাজিয়ে বা এন্টারটেইনিং কনটেন্টের মাঝে সুক্ষ্মভাবে প্লেস করে ব্র্যান্ডগুলো সব সময় মানুষের চোখের সামনে আর মাথার মধ্যে জায়গা করে নিতে পারছে৷ তাই ব্র্যান্ডগুলো এখন মূলধারার বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এ সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে৷’’

‘‘আমরা যারা বিজ্ঞাপন বানাই, আমরাও এখন একটাই ভিডিও বানিয়ে ক্যাম্পেইন শেষ করে ফেলি না৷ কীভাবে সেই বিজ্ঞাপনের বার্তাকে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাবো, সেটার উপরও আমরা ফোকাস করছি৷ কাজ বেড়েছে৷ তবে একইসাথে কাজের মজাটাও বেড়েছে বহুগুণে৷’’

এ বি এম জাবেদ সুলতান পিয়াস
এ বি এম জাবেদ সুলতান পিয়াসছবি: Privat

ইউটিউবের বাজার

নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে বাংলাদেশে যেসব গণমাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সফলতার মুখ দেখছে, তাদের শীর্ষে রয়েছে প্রথম আলো৷

এই প্রতিষ্ঠান ডিজিটালের চিফ বিজনেস অফিসার এ বি এম জাবেদ সুলতান পিয়াসের মতে, গুগল ফেসবুক মিলিয়ে বাংলাদেশে এই বাজার মোটামুটি ২ হাজার কোটি টাকার মতো৷ ডলার সংকটসহ নানা কারণে গত বছরের শেষের দিকে এই বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়েছে৷ এর মাঝে শুধু ইউটিউবের বাজারই ৬০০ কোটি টাকার মত৷ এই টাকা ভাগাভাগি হয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে৷

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সোশাল মিডিয়া কনটেন্ট নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় পলাশ মাহমুদ সুপরিচিত এক নাম৷

তিনি বলেন, ‘‘এই বাজারের আসলে সীমা নেই৷ যত ভালো ভালো কনটেন্ট আসবে, বাজার তত বড় হবে৷ এখনই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে আমাদের কনটেন্ট প্রচুর বিদেশি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে৷ ভালো কনটেন্ট বাড়লে এই হার আরো বাড়বে৷’’