1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবশেষে দুর্নীতির মামলা হারালেন বিচারপতি অভিজিৎ

২৮ এপ্রিল ২০২৩

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গেপাধ্যায়ের হাত থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা সরিয়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট।

https://p.dw.com/p/4Qfjl
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচার আর করতে পারবেন না অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচার আর করতে পারবেন না অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।ছবি: Subrata Goswami/DW

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাতে নিজের ব্যক্তিগত কথা, ভালোলাগা, পছন্দের বই নিয়ে যমন বলেছিলেন, তেমনই মামলা সম্পর্কেও বলেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি ভি নরসিমহা দেখেন। তার অনুবাদ পড়েন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে রিপোর্ট চান। তারপর  সেই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রাথমিক নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়ে অন্য কোনো বিচারপতিকে দেবেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায় এখনো আপলোড করা হয়নি। এই নির্দেশ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কিছু আইনজীবী মনে করছেন, প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার বিকাশ ভট্টাচার্যের মতো কিছু আইনজীবী মনে করছেন, শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রান্ত মামলাটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় আপলোড করা হলে, বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

শুধু তাই নয়, গত ২১ এপ্রিল পুরসভায় নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরের দিন থেকেই সিবিআই ও ইডি তদন্ত শুরু করে দেয়। এই নির্দেশের উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলেছে, তিনদিনের মধ্যে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দেবে। তারপর সাতদিনের মধ্যে হাইকোর্ট ঠিক করবে, এই নিয়ে কী নির্দেশ দেয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত সিবিআই-ইডি তদন্ত বন্ধ রাখবে।

বিচারপতির দেয়া নির্দেশের কী হবে?

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। যেমন প্রশ্ন উঠেছে, এবার কোন বিচারপতির কাছে এই মামলা যাবে? এর জবাব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এটা ঠিক করবেন।

দ্বিতায় প্রশ্ন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এতদিন এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কী হবে? আইনজীবীদের বক্তব্য, নতুন বিচারপতি বিষয়টি দেখবেন। তিনি ওই নির্দেশ বহাল রাখতে পারেন। পরিবর্তনও করতে পারেন।

তৃতীয় প্রশ্ন হলো, এর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? এই বিষয়ে প্রচুর রাজনীতিক মুখ খুলেছেন। অধিকাংশের মত হলো, নিয়োগ-দুর্নীতিকে যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যে জায়গায় জনমত চলে গেছে, তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাদের আশা, যে বিচারপতিই এই মামলা বিচারের ভার পান না কেন, তিনি একই পথে চলবেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন

তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে তার সাক্ষাৎকারের অনুবাদ চেয়ে পাঠিয়েছেন। স্বচ্ছতার স্বার্থেই তিনি এটা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, সেটাও তার কাছে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন।  তিনি বলেছেন, রাত বারোটার মধ্যে এই অনুবাদ  ও রিপোর্ট তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি রাত সওয়া বারোটা পর্যন্ত তিনি চেম্বারে অপেক্ষা করবেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি এখন থেকে আর প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা শুনবেন না।

এর পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ''কুণাল ঘোষকে প্রণাম জানাব। তিনি যে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন তা পুরোপুরি মিলে গেছে। তিনি যে এত বড় ভবিষ্যৎদ্রস্টা তা জানা ছিল না।''

পরে কুণাল টুইট করে বলেন, ''সারা দেশে প্রথম কেউ বুঝলেন, সবকা বিকাশ কাকে বলে। বিকাশ ছুঁলে কী হয়। কমরেড, সমবেদনা রইলো।''

রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া

যিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,  ''সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা শিরোধার্য। তদন্ত হোক। কেউ দোষী হলে নজিরবিহীন শাস্তি হোক। বিচারব্যবস্থার উপর আমার ভরসা আছে। প্রধান বিচারপতির রায়কে স্বাগত জানাই।'' অভিষেকের বক্তব্য, ''২২ মাসে ২৩টা সিবিআই হয়েছে। এই মাসে আরো তিনটি সিবিআই। দুই-একজনই এই রায় দিয়েছেন। আমরা এখন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ে যাচ্ছি।''

পশেচিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, ''এই রায় দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার মানুষ চিরদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে রাখবেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আশাহত হয়েছেন। মানুষ চেয়েছিলেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করন।'' সুকান্তর দাবি, ''এই রায়ের ফলে তৃণমূল নেতাদের স্বস্তির কোনো কারণ নেই। হয়ত কিছুদিন দেরি হবে, কিন্তু তাদের জেলে যেতে হবেই।''  

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ  বলেছেন, ''আমাদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় নির্ধারিত মামলার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উইশ লিস্ট দিচ্ছেন। আইনের বাইরে গিয়ে এটা করছেন। তারই প্রতিবাদ করেছিলাম।''

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী মনে করেন, বিচারপতি বদল হলেও সিবিআই-ইডি আছে। ফলে দুর্নীতিবাজরা রেহাই পাবে না।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্যই নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা এই জায়গায় পৌঁছেছে। এত কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এতজন জেলে গেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা মানুষ দেখেছে।'' 

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ''এর ফলে তৃণমূলের কিছু নেতা উচ্ছ্বসিত হতে পারেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা মানুষগুলির চোখে জল আসতে পারে। কিন্তু এই লড়াই আরো তীব্র হবে। চোরেরা শাস্তি পাবেই। মানুষ ন্যায় পাবে।''

লড়াই হারিয়ে যাবে না তো!

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ''প্রক্রিয়া মানতে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হারিয়ে যাবে না তো?

আর দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো চাকরিপ্রার্থীরা বলেছেন, তারা আশাহত হলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাদের মনে আশা জাগিয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পাবে, তারা ন্যায় পাবেন, এটা মনে হচ্ছিল। এই অবস্থায় এই নির্দেশ তাদের কাছে ধাক্কা। তারা চাইছেন, যে বিচারপতি এবার মামলার ভার পাবেন, তিনিও যেন তাদের আশার আলো দেখাতে পারেন।

জিএইচ/এসিবি (পিটিআই, এএনআই, এবিপি আনন্দ)