১১ বছরে পায়ে হেঁটে বিশ্ব ভ্রমণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১বয়স তখন ৪৫৷ বেশ অবসাদে ভুগছিলেন ক্যানাডার মন্ট্রিয়াল শহরের জঁ বেলিভো৷ মনে হচ্ছিল, আর বেঁচে থেকে কী লাভ? সবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে৷ দুই সন্তান থাকে মায়ের কাছে৷ নিজের ছোট একটা ব্যবসা ছিল৷ তাও লাটে উঠেছে৷ অতএব পিছটান বলতে কিছুই নেই৷
না, আত্মহত্যার পথে এগোলেন না বেলিভো৷ ২০০০ সালের ১৮ই অগাস্ট নিজের ৪৫তম জন্মদিনেই তিনি হাঁটতে বেরিয়ে পড়লেন৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ থেকে পায়ে হেঁটে গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আবার নিজের শহর মন্ট্রিয়াল'এ ফেরার গোঁ ধরে বেরিয়ে পড়লেন তিনি৷ সঙ্গে ৩ চাকার একটা ট্রলি সুটকেস৷ তার মধ্যে স্লিপিং ব্যাগ, কিছু জামাকাপড়, প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু সরঞ্জাম৷ সঙ্গে মাত্র ৪,০০০ ক্যানেডীয় ডলার৷ কোথায় রাত কাটাবেন, কখন কী খাবেন, কিছুই জানা নেই৷ শুধু হেঁটে চলেছেন৷ রওয়ানা হওয়ার পর প্রায় ১১ বছর কেটে গেছে৷ সত্যি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে তিনি মন্ট্রিয়ালের কাছাকাছি এসে পড়েছেন৷ এবার সামান্য যে পথ বাকি রয়েছে, তা অতিক্রম করে আগামী ১৬ই অক্টোবর তাঁর আবার নিজের শহর মন্ট্রিয়াল পৌঁছনোর কথা৷ ৬৪টি দেশ ঘুরে প্রায় ৭৫,০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে তিনি সম্ভবত দীর্ঘতম পদযাত্রার রেকর্ড গড়তে চলেছেন৷
এতদিন পর কার কাছে ফিরবেন বেলিভো? তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন দীর্ঘদিনের বান্ধবী লুস আর্শাম্বো৷ তিনি ও তার দুই সন্তানও বেলিভো'কে বাধা দেন নি৷ ঘরে থেকেই তিনি বেলিভো'র এই অভিযানে মদত দিয়ে চলেছেন৷ তৈরি করেছেন বিশেষ ওয়েবসাইট, যার ঠিকানা ‘ওয়াক ডট অর্গ'৷ তবে ‘ওয়াক' শব্দে একটার বদলে তিনটে ডাব্লু রয়েছে৷ অসাধারণ এই পদযাত্রাকে কাজে লাগিয়ে শান্তি ও অহিংসার বাণী প্রচার করার জন্য বেলিভো'কে উৎসাহ দিয়েছেন তিনি৷ জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনেস্কো'র এক ঘোষণাই হয়ে উঠলো এই পদযাত্রার মূলমন্ত্র৷ অবসাদগ্রস্ত এক মানুষের অভিযান যে এত অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে, বেলিভো তা ভাবতে পারেন নি৷
এই ১১ বছর কীভাবে কাটালেন বেলিভো? কীভাবে তিনি অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরতে পারলেন? আশ্চর্যের বিষয়, যাত্রাপথে তেমন কোনো অপ্রিয় ঘটনা ঘটে নি৷ শুধু আলজেরিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, ইথিওপিয়ায় অকারণে তাঁকে একরাত হাজতবাস করতে হয়েছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই মাতাল তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল৷ তিনি মেক্সিকোয় ৯ দিনের জন্য এক নারীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন, সুদানে থাকতে পাগড়ি পরে লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন৷ আফ্রিকায় পোকামাকড়, দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুর ও চীনে সাপ খেয়েছেন৷ ইথিওপিয়ায় থাকতে বেলিভো'র একবার মনে হয়েছিল, মাঝপথে পদযাত্রা ছেড়ে দেশে ফিরে যাবেন৷ কিন্তু বান্ধবীর উৎসাহে তিনি হাল ছাড়েন নি৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ