1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১৪ জনের ফাঁসি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩০ জানুয়ারি ২০১৪

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্‍ফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল৷

https://p.dw.com/p/1AzT2
Rahman Nizami
ছবি: Reuters

২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা বা সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক হয়৷ তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার৷ আটকের দু'দিন পর ৩রা এপ্রিল কর্ণফুলি থানায় অস্ত্র চোরাচালান এবং আটকের ঘটনায় দু-দুটি মামলা করা হয়৷ এরপর ২০০৪ সালে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগে এই মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়৷ তদন্তের পর, ২০১১ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্‍ফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি৷ মামলাটিতে মোট আসামি করা হয় ৫২ জনকে৷ পরে আদালতে নতুন ১১ জনে বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করা হয়৷

Bangladesh Matiur Rahman Nizami
লুত্‍ফুজ্জামান বাবর এবং মতিউর রহমান নিজামীসহ ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডিছবি: picture alliance/AP Photo

চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক এস এম মজিবর রহমান বৃহস্পতিবার বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন৷ রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্‍ফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়৷ অন্যরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলাফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরল আমিন, ডিজিএফআই-র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই-র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.)সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআই-র মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএল-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক(প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ এবং হাজি আব্দুস সোবাহান৷ এঁদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া এবং নুরুল আমিন পলাতক৷ ৫২ জন আসামির মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারা ১৮ ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া তাঁদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানও করা হয়েছে৷ মামলার রায় ঘোষণার সময় পলাতক দু'জন ছাড়া সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷

পাবলিক প্রসিকউটর কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, এই মামলায় আসামি ছাড়াও কয়েকজন সাক্ষী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে পাঠানো হচ্ছিল৷ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই পারস্পরিক যোগসাজসে এই অস্ত্র পাচারের কাজ করছিলেন৷ জানা গেছে, যে পুলিশ কর্মকর্তা এই অস্ত্রের চালান আটক করেন তাঁকে তখন চাকরি থেকে বিদায় করা হয়৷

Lutfozzaman Babar
লুত্‍ফুজ্জামান বাবরছবি: Reuters

এদিকে বাবর এবং নিজামীর আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন৷ রায়ের পর আসামীর কাঠগড়ায় থাকা নিজামী শান্ত থাকলেও বাবর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান৷ বলেন, ‘‘আমি ন্যায় বিচার পাইনি৷ এই বিচারকের পরও বিচারক আছেন৷'' উল্লেখ্য, অস্ত্র আটকের পর বাবর তখন সাংবাদিকদের নিয়ে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন অস্ত্রের চালান দেখতে৷

যেসব অস্ত্র ছিল

২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল রাতে ১০টি ট্রাক থেকে মোট ৪৬৩টি বাক্স উদ্ধার করা হয়৷ এ সব বাক্স থেকে এমটিটি, এসএমজি, টমিগান উদ্ধার করা হয় ৭৯০টি, গ্রেনেড ২৭ হাজার, রকেট লঞ্চার ১৫০, ম্যাগজিন ৬২০ এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি গুলি পাওয়া যায়৷ এই অস্ত্র, গুলি এবং গ্রেনেড পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়৷

এ সব অস্ত্রের বেশিরভাগই চীন থেকে কেনা হয় এবং উলফার ট্রলারে করে বাংলাদেশের জলসীমায় আনা হয়৷ জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ভারতে উলফার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল এগুলি৷ পুরো পরিকল্পনা করা হয় ব্যাংককে৷ ঘটনার সময় নাকি পরেশ বড়ুয়াসহ একাধিক উলফা নেতা চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন৷