1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হুমকির মুখে সাগরের প্রবাল প্রাচীর

রিয়াজুল ইসলাম১১ নভেম্বর ২০০৮

সাগরতীরে ঘুরতে কার না ভালো লাগে৷ সাগরের নীল পানির বুকে জেগে থাকা রংবেরংয়ের প্রবাল প্রাচীর দেখতে ছুটে আসে কত দেশের হাজারো পর্যটক৷ কিন্তু আমাদের দোষেই সেই প্রবাল প্রাচীরগুলো এখন হুমকির মুখে৷

https://p.dw.com/p/FroF
সাগরের নীল পানির বুকে জেগে থাকা রংবেরংয়ের প্রবাল প্রাচীর দেখতে ছুটে আসে কত দেশের হাজারো পর্যটকছবি: AP

সাগরের নীল পানির হাতছানি এড়াতে পারে এমন লোক কমই আছে৷ তার ওপর নীল সাগরের বুকে প্রবাল প্রাচীর যেন সমুদ্রপ্রেমীদের আরও বেশি কাছে টানে৷ স্কুবা ডাইভারদের অতি আগ্রহের বিষয় এই প্রবাল৷ কিন্তু কিভাবে গঠিত হয় এই প্রবাল প্রাচীরগুলো?

Taucher im Roten Meer
স্কুবা ডাইভারদের অতি আগ্রহের বিষয় এই প্রবালছবি: picture-alliance /dpa

মাইলের পর মাইল জুড়ে থাকা দেখতে দেয়ালের মত এই প্রবাল প্রাচীর কিন্তু গঠিত হয় আসলে এক প্রকার প্রাণীর শরীর থেকে৷ প্রবাল আসলে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী৷ অপরিণত দেহযন্ত্র বিশিষ্ট কোটি কোটি প্রবাল জমে সৃষ্টি হয় প্রবাল প্রাচীরের৷ হাজার হাজার বছর ধরে এসব প্রবাল তাদের শরীরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমিয়ে থাকে৷ ফলে একসময় তা জমে শক্ত হয়ে যায়৷ এভাবেই বছরের পর বছর প্রবাল জমে আস্তে আস্তে গড়ে উঠতে থাকে প্রবাল প্রাচীর৷

সাগরের বুকে চরে বেড়ানো জলজ প্রাণীদের অন্যতম বিচরণস্থল এই প্রবাল প্রাচীর যা সমুদ্রপিয়াসী মানুষেরও আকর্ষণের বিষয়৷ কেবল পর্যটকদের আকর্ষণই নয় মাইলের পর মাইল জুড়ে থাকা এ প্রবাল প্রাচীর সামুদ্রিক ঝড় থেকে রক্ষা করে সাগরতীরের স্থলভাগকেও৷ সুনামি কিংবা জলোচ্ছ্বাসের বিপরীতে প্রাকৃতিক দেয়ালের মত কাজ করে থাকে এ প্রবাল প্রাচীর৷

কিন্তু প্রকৃতির অন্যতম দান এ প্রবাল প্রাচীর আজ হুমকির মুখে৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের পানিও উষ্ণতর হয়ে উঠছে যা প্রবাল জমার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে৷ কিন্তু তার চেয়েও বড় ক্ষতি করছে পরিবেশ দুষণ৷ প্রবাল প্রাচীর সংলগ্ন সৈকতগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকদের আগমন বেশি৷ তাদের জন্য সেসব এলাকায় গড়ে উঠছে বড় বড় হোটেল ও রেস্তোরা৷ পরিবেশবাদী গ্রুপ নেচার কনজারভেটরির তথ্য মতে পর্যটন ও মাছ ধরা থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলারের ব্যবসা করে থাকে এসব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো৷ কিন্তু এসব জায়গার বর্জ্য ক্রমেই দূষিত করে ফেলছে সাগরতীরের পানি৷

গত বছর এক গবেষণায় বলা হয়েছিলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী শতাব্দীর আগেই পৃথিবীর প্রবাল প্রাচীরগুলো নষ্ট হয়ে যাবে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, যেভাবে পরিবেশ দূষিত হয়ে চলেছে তাতে আরও অনেক আগেই সাগরের বুকে থাকা প্রবাল প্রাচীরগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর মেরিন সায়েন্স স্টেশনের জীববিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন রবার্তো ইগলেসিয়াস৷ তিনি প্রবাল প্রাচীরের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন৷

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রবার্তো ইগলেসিয়াস জানিয়েছেন, পরিবেশ দূষণের মূল প্রভাবটা প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবের চেয়েও খারাপ৷ উল্লেখ্য, গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্ক এর তথ্য মতে গত তিন দশকে উত্তর আমেরিকার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় প্রবাল প্রাচীরের উপরের অংশ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে৷ এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত হাওয়াই দ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থিত প্রবাল প্রাচীরগুলো প্রতিবছর শতকরা এক ভাগ করে ক্ষয়ে যাচ্ছে৷ পরিবেশ দূষণের কারণে গত ২৫ বছর ধরে এই ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷