1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হীরার আলোকের পিছনে অন্ধকার কাহিনি

২৬ জুলাই ২০১৩

ভারতে হীরা শিল্পের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে৷ দুর্নীতি, শিশু শ্রম থেকে শুরু করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা গড়ে ওঠে নি৷ তবে সে দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/19Dj0

ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে প্রথম হীরা পাওয়া গিয়েছিল৷ পান্না শহরে এখনো হীরার ব্যবসাই হচ্ছে উপার্জনে মূল উপায়৷ তবে এখানকার রাস্তায় কোনো অলঙ্কারের দোকান নেই৷ হীরার শহর পান্না আজ কার্যত রত্ন পাচার এবং কালোবাজারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত৷

মানবাধিকার কর্মী ইউসূফ বেগ-এর বাড়ি এখানে৷ তিনি দিল্লিভিত্তিক সংগঠন ‘এনভায়রনিক্স ট্রাস্ট' এর জন্য কাজ করছেন৷ এই সংগঠনটি অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ভারতের খনিশ্রমিকদের নিয়েও কাজ করে৷ পান্না শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হীরার এলাকা নিয়মিত প্রদর্শন করেন ইউসূফ বেগ৷ অবৈধভাবে অনেক খনি খনন করা হয় সেখানে৷

এখানকার শ্রমিকরা সাধারণত কৃষক এবং দিনমজুর৷ তারা এখানে কাজ করে মাসিক আয় কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করেন৷ এখন প্রখর গ্রীষ্মের কারণে নদীর পানি শুকিয়ে গেছে৷ ফলে খুব বেশি শ্রমিক দেখা যাচ্ছে না৷ খনি খননের জন্য প্রচুর পানির দরকার হয়৷ ইউসূফ জানালেন, ‘‘শ্রমিকরা প্রথমে খনি থেকে মাটি এবং অন্যান্য যা কিছু পায়, তা সংগ্রহ করে৷ এরপর তারা সেগুলো পায়ে করে পানি এবং কাদার সঙ্গে মেশায়৷ এই প্রক্রিয়ায় নুড়ি এবং হীরা নীচের দিকে চলে যায়, কেননা সেগুলি অন্যান্য উপাদানের চেয়ে ভারি৷ এরপর শ্রমিকরা পানি এবং উপরি ভাগের কাদা হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলে৷ বাকি যা থাকে তা তারা গর্ত থেকে তুলে রোদে শুকায়৷

Symbolbild Diamanten Edelsteine Diamant
চকমকে হীরারও কালো দিক রয়েছে বৈকি!ছবি: imago

এই বয়স্ক মানুষটি গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে হীরা সংগ্রহের জন্য খননের কাজ করছেন৷ জীবনধারনের জন্য এই কাজ যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি৷ ইতোপূর্বে তিনি বড় আকারের হীরা সংগ্রহেও সক্ষম হয়েছেন৷ তাই এখনো এই কাজ করে যাচ্ছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘এই পাথরের মধ্যে থেকে হীরা খুঁজে পেতে শ্রমিকদের বেশিক্ষণ কাজ করতে হয় না৷ তারা খুব দ্রুত হীরা দেখতে পায়, কারণ সেগুলো সূর্যের আলোয় জ্বলজ্বল করে৷''

সব সময় অবশ্য এখানে সেরকম উজ্জ্বল কিছু পাওয়া যায় না৷ প্রায়ই দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা হীরার সন্ধানে বড় বড় পাথর ভাঙছে৷ চল্লিশ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার মধ্যে তারা কাজ করছে৷ যেমন একদিন দেখা গেল একটি দলকে৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি ১৩ বছরের ছেলেটি৷ তার ১৬ এবং ২১ বছর বয়সি দুই ভাইও এখানে কাজ করে৷ তবে মেয়েটি নিজের বয়স বলতে চায় না৷

ইউসুফ বললেন, ‘‘এখানে কর্মরত শ্রমিকদের ফুসফুসে প্রায়ই ধুলা ঢোকে৷ ফলে তারা শ্বাসকষ্টের মতো ভয়াবহ শারীরিক সমস্যার শিকার হয়৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য তাদের জন্য চিকিৎসার কোনো সুবিধা নেই৷ অথচ ‘মাস্ক' এবং বিশেষ পোশাক না পরে এ ধরনের কাজ করা বিপজ্জনক৷ এখানে এক শ্রমিক সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে৷ আমি কিছু সময় আগে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়েছিলাম৷''

খনি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে কিছুটা সাফল্য অবশ্য পাওয়া গেছে৷ কারণ ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন খনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে৷   

তবে ইউসূফ বেগ এটাকে যথেষ্ট মনে করেন না৷ তাঁর হিসেবে পান্নায় সত্তর শতাংশ হীরাই অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয় এবং এই কাজে শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়৷ ইউসুফ বললেন, ‘‘এসব সমস্যার মূলে আছে দুর্নীতি৷ সরকার অনেক ভালো ভালো প্রকল্পকে সাহায্য করে, কিন্তু এ সব সাহায্য প্রকৃত অর্থে যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছায় না৷ সরকারের উচিত এখানে কর্মরত শিশুদের শিক্ষা প্রদানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে সম্মানজনক চাকুরি করতে পারে এবং ভালো জীবনযাপন করতে পারে৷''

এই অঞ্চলে কোনো স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন নেই৷ ইউসূফ বেগ বলেন, একটু বড় হলেই সন্তানদের হীরা খনিতে পাঠানো ছাড়া স্থানীয় পরিবারগুলোর কাছে আর কোন বিকল্প নেই৷ কারণ তাদের জীবনধারনের জন্য টাকা প্রয়োজন৷

এআই / এসবি