1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিমালয়ের পানির ধারা কমে যাচ্ছে

১২ জুলাই ২০১০

কমে যাচ্ছে হিমালয়ের পানির ধারা৷ আর এ কমতে থাকার কারণে তা সরাসরি আঘাত করবে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর৷ নদী বিধৌত এই অঞ্চলের মানুষের সামনে সত্যিই বিপদ৷ পানি কমে যাওয়ার কারণে চাষাবাদের জমির উর্বরতা কমে যাবে৷

https://p.dw.com/p/OGYw
ফাইল ফটোছবি: AP

‘নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? কবির এই প্রশ্নের উত্তর কি আমাদের জানা আছে? আমি জানি এটা সকলের জানা৷

হিমালয় থেকে নেমে আসছে হাজারো ধারা৷ এসব ধারা থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক নদী৷ কুল কুলিয়ে নদীগুলোর পানি বয়ে যাচ্ছে চীন, ভারত, বাংলাদেশ আর নেপালের ওপর দিয়ে৷ আহা ভরা বর্ষার নদী৷ কী সুন্দর উথাল-পাতাল৷ কিন্তু খুবই দুঃখের কথা হচ্ছে, আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই নদীগুলোয় পানি কমতে শুরু করবে৷ এমন আশঙ্কার কথাই জানাচ্ছে ভারত ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা৷ স্ট্যাটেজিক ফরসাইট গ্রুপ নামের এই সংস্থার গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারণেই তা হতে যাচ্ছে৷

পানি কমে যাওয়ার কারণে চাষাবাদের জমির উর্বরতা কমে যাবার কারণে চীন কিংবা ভারতের মতো জনবহুল দেশে খাদ্য সংকট হবে৷ এই দুই দেশে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের কারণে আমদানি করতে হবে গম৷ দুই দেশের প্রয়োজনীয় দুই থেকে তিনশ মিলিয়ন টন গম আমদানি করতে হলে তা সারা বিশ্বের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ নদী শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টির কারণে হাজার হাজার মানুষকে ছাড়তে হবে তাদের আবাসস্থল, খাদ্য আর জীবিকার সন্ধানে৷

সম্প্রতি বাংলাদেশে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে বলা হলো, হিমালয় থেকে বয়ে আসা নদীগুলোর জন্য আঞ্চলিক যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে৷ হিমালয়ের নদীগুলোর অববাহিকা অঞ্চলের দেশ চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এজন্য সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷ দেশগুলোর মধ্যে গড়ে তুলতে হবে আস্থার সম্পর্ক ৷

সেখানে পানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর অববাহিকা অঞ্চলগুলো নিয়ে (ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও চীন) জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আঞ্চলিক কমিশন গঠন করে পানিসম্পদ ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন, কৌশল নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে৷

ভারতের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী সোমপাল এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন৷ তিনি বললেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর পানি বণ্টন নিয়ে যে সমস্যাগুলো ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মাধ্যমে তা দূর করার পথে যাত্রা শুরু হয়েছে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের আস্থার সম্পর্কের ওপর ভর করে অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে৷ তিনি দুই দেশের পানি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এ নিয়ে আলোচনা চালানোর আহ্বান জানান৷

নেপালের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী দীপক গেওয়ালী বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এলে পানিসংক্রান্ত যে কোনো সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব৷ ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার মতো বড় নদীগুলোর পাশাপাশি ছোট নদীগুলোর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজকেও এ ব্যাপারে জনমত গঠনে এগিয়ে আসতে হবে৷ আন্তর্জাতিক নদীর একতরফা পরিবর্তন করা বা পরিবর্ধন করা অথবা পানি প্রত্যাহার করা বেআইনি,মন্তব্য এই রাজনীতিবিদের৷

বলে রাখা ভালো, ভুটান, চীন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান ঘেঁষে থাকা হিমালয় পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ২ হাজার ২শ ৫০ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ২শ কিলোমিটার৷ যেখানে রয়েছে ৬ হাজার ৮শ ৪৮ মিটার থেকে শুরু করে ৮ হাজার ৮শ ৪৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু ১শটিরও বেশি পর্বত৷ আরও আছে বিস্তৃত বনভূমি, বিখ্যাত সব নদী৷

এত বিশাল প্রকৃতির প্রাঙ্গণে প্রাণিপ্রাচুর্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু আমরা জানি, হিমালয়ের দক্ষিণের নিচু অঞ্চলের তাপমাত্রা গরমে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শীতে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস; আর মধ্য হিমালয়ের তাপমাত্রা গ্রীষ্মেই ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে৷ এমন আবহাওয়ায় এ অঞ্চলে প্রাণিরাজ্য কতটা আর সমৃদ্ধ হতে পারে? কিন্তু জেনে অবাক হতে হয়, এই হিম-আবহাওয়ায়ও প্রায় ৩শ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯শ ৮০ প্রজাতির পাখি, ১শ ৭৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২শ ৬৯ প্রজাতির মাছ, ১শ ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং প্রায় ১ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেখানকার প্রাণিকূল রয়েছে হুমকির মধ্যে৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: জাহিদুল হক