1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হিন্দু’ মরে ভয়ে, ‘মুসলমান’ প্রাণভয়ে

১৭ জুন ২০১৩

জামায়াত-শিবির সমর্থকদের হামলায় ভাই নিহত৷ বিচার চান সাজু মিয়া৷ হবে বিচার? কবে? কে করবে? বিচারপ্রার্থী হয়ে সাজুর জীবনই বিপন্ন৷ আসামী ধরায় পুলিশের তৎপরতা নেই৷ শত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সাজুর প্রাপ্তি শুধু কান্না৷

https://p.dw.com/p/18qWy
ছবি: Shayantani Twisha

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চা দোকানদার সাজু মিয়া ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে সত্যি সত্যিই কেঁদেছেন৷ তাঁর কষ্ট, বেঁচে থাকার নীরব যুদ্ধ, মৃত ফুপাতো ভাই শরিফুলের বিচার চেয়ে ডেকে আনা বিপদে নিজেকে একাকী দেখার বেদনা –এসব যে কেউ একজন শুনতে চেয়েছেন সাজু তাতেই অভিভূত৷ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে পুলিশকে পাননা পাশে, আওয়ামী লীগ কর্মী হয়ে দল ক্ষমতায় থাকতেও দেখেন দলীয় নেতাদের উদাসীনতা, স্বার্থপরতা এবং অসহায়ত্ব৷ হামলাকারীরা ঘুরে বেড়ায় বুক ফুলিয়ে, সাজু থানায় গেলে কিংবা নিজের দোকান খুলতে গেলেও আসে বাধা, আসে হত্যার হুমকি৷ সহানুভূতি নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করার আশ্বাসটুকুও কেউ দিলে তো!

‘হিন্দু’ মরে ভয়ে, ‘মুসলমান’ প্রাণভয়ে

সুন্দরগঞ্জ থানার পুলিশ কখনো দেয় মিথ্যা আশ্বাস, রাত দুটো পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করেও আশ্বাসে বিশ্বাস হারিয়ে ফিরে আসতে হয় সাজুকে, কখনো কনস্টেবলের কণ্ঠে ঝরে অসহায়ত্ব, মনে করিয়ে দেয়া হয় – পুলিশেরও পরিবার থাকে, পরিবারের জন্য তাঁদেরও বেঁচে থাকতে হয়! কখনোবা এজাহারভুক্ত আসামী না ধরে ধরে আনা হয় নিরীহ কোনো মানুষ৷ বিচারপ্রার্থী সাজু দিশেহারা৷ গিয়েছিলেন গ্রাম কমিটির আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে৷ সভাপতি হিন্দু৷ তিনি দলীয় কর্মীকে সহযোগীতা করবেন কী, সাহস জোগাতেও ব্যর্থ৷ ‘ঠুঁটো জগন্নাথ' সভাপতি বলেন, ‘‘আমার ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিল, মামলা করার সাহস পেলাম না, তোমার জন্য কী করব বলো!''

যাঁরা কিছু করতে পারেন তাঁদের টিকিটির নাগাল পাওয়ার সাধ্য সাজুর মতো খেটে খাওয়া অতি সাধারণের অন্তত নেই৷ কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিলেন ঘটনার পরপর৷ কথায় ছিল মন ছুঁয়ে যাওয়া আন্তরিকতা, দিয়ে গেছেন সুবিচারের আশ্বাস, কেউ কেউ নিজের হাতখরচের টাকাটাও গুঁজে দিয়েছেন সাজুর হাতে৷ সবচেয়ে বেশি ‘দানশীল' সরকার৷ ২০ হাজার টাকা আর ৫০ কেজি চাল পাওয়ার কথা তাই কৃত্জ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন সাজু৷ এ সাক্ষাৎকারে জামায়াত-শিবির সমর্থকদের আক্রমণের শিকারদের পাশে দাঁড়ানো সংগঠন ‘আমরা'-র দেয়া ৩০ হাজার টাকারও প্রাপ্তি স্বীকার করতে ভুল হয়নি সাজুর৷ কিন্তু তিন মাসে এই প্রাপ্তিতে তো সংসার চলে না৷

সাজু মিয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে মনে হতে পারে, হয়ত জামায়াত-শিবির কর্মীদের মুখোমুখি হতে গিয়েই তাঁর জীবনে এই বিপর্যয়৷ ঘটনা একেবারে অন্যরকম৷ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল যেদিন ফাঁসির আদেশ দেয় সেদিন ঘর থেকেই বেরোননি৷ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেদিন ১০-১৫ হাজার উন্মত্ত মানুষ নির্বিচারে পুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি সম্পদ, মেরেছে পুলিশ, প্রাণ দিতে হয়েছে শিবির কর্মীদেরও৷ সাজু দুই ভাই আর কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে তছনছ হওয়া বাজারে গিয়েছিলেন পরের দিন৷ নিজের দোকানের অবস্থাটা না দেখে আর পারছিলেন না৷ দোকানের কাছে যেতেই হামলা৷ দৌড়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি৷ ধাওয়া করে মারা হয় তাঁদের৷ ফুপাতো ভাই শরিফুল মারা যায় চোখের সামনে৷ সাজু আর তাঁর বড় ভাই ফুল মিয়া আহত হয়ে যান হাসপাতালে৷ সেখানেও মৃত্যুআতঙ্ক৷ থেকে থেকে হত্যার হুমকি৷ চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই ফিরতে হয় বাড়িতে৷

বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সাজু জানান, বড় ভাইয়ের ভাঙা হাত এখনো সারেনি৷ নিজে তখন জ্বরে কাঁপছেন৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন৷ কাঁদতে কাঁদতেই জানান সাংবাদিকের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করার৷

যেখানে পুলিশ নিষ্ক্রিয়, সরকার নিরুদ্বিগ্ন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিন্দু বলে জামায়াত-শিবিরের আক্রমণে প্রায় সর্বস্ব হারিয়েও মামলা করতে ভীত, সাংবাদিক সেখানে কতটা সক্ষম?

সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য