1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হরতালের আগুন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ নভেম্বর ২০১৩

হরতালের আগুনে পোড়া মানুষগুলো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে একের পর এক বিদায় নিচ্ছেন৷ এপর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1AIH5
Smoke rises as a bus burns on a street after a nationwide strike was called, in Dhaka November 9, 2013. The opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) on Saturday announced another 84-hour nationwide strike, starting on Sunday, after police arrested BNP leaders, triggering violent protests across the country. No one claimed responsibility for setting the bus on fire and no casualties were reported, authorities said. Picture taken November 9, 2013. REUTERS/Mahmud Opu (BANGLADESH - Tags: POLITICS CIVIL UNREST)
ছবি: Reuters

কে, কখন মারা যান তা নিয়ে ভয়৷ চিকিৎসকরা আশ্বাস দিচ্ছেন৷ সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন৷ তবুও আশঙ্কা রয়ে গেছে৷ তাই বার্ন ইউনিটে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরা এখন সারাক্ষণ প্রার্থনা করছেন তাঁদের প্রিয়তমের প্রাণের জন্য৷

১০ নভেম্বর হরতালের রাতে মন্টু চন্দ্র পাল (৩৫) একটি লেগুনায় (হিউম্যান হলার) করে পুরান ঢাকা থেকে তাঁর বাসা নারায়ণগঞ্জে ফিরছিলেন৷ লক্ষ্মীবাজারের কাছে হরতাল সমর্থকরা লেগুনায় আগুন দিলে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে মন্টুও অগ্নিদগ্ধ হন৷ তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে৷ মন্টু শুক্রবার মারা যান৷ বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, মন্টুর শরীরের প্রায় ৯০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল৷ তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷

মন্টুর স্ত্রী মঞ্জু পাল গত ৫ দিন হাসপাতালেই ছিলেন৷ আহত স্বামীকে ছেড়ে তিনি কোথাও যাননি৷ কিন্তু স্বামী তাঁকে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে গেল৷ তাঁর শোক আর বিলাপে শুক্রবার হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে৷ তাঁর একটিই প্রশ্ন, কেন মন্টুকে রাজনীতির বলি হতে হলো? সে জানায়, মন্টু পুরনো ঢাকায় একটি সোনার দোকানে কাজ করত৷ তাঁর আয়েই তাঁদের সংসার চলত৷ এখন সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই৷

একইভাবে গত কয়েক দিনে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন গার্মেন্টস কর্মী নাসিমা বেগম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান, কিশোর মনির হোসেন এবং বোমার কারিগর বলে পরিচিত আবুল কাশেম৷

পোশাক কর্মী নাসিমা বেগম কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হরতালের আগুনের শিকার হন৷ বাসে করে বাসায় ফেরার সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় বাসে আগুন দেয়া হলে তিনি অগ্নিদগ্ধ হন৷ নাসিমা মারা যান বুধবার৷ তাঁর বড় বোন রহিমা বেগমও পোশাক কারখানায় কাজ করেন৷ তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে৷ রহিমা জানান তাঁর বোন নিজের পায়ে দাঁড়াতে ৬ মাস আগে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিল৷ নাসিমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় সে প্রতিবাদী হয়ে ঢাকায় আসে৷ কিন্তু তাঁকে শেষ পর্যন্ত হরতালের আগুন বাঁচতেই দিল না৷ নাসিমার মৃত্যুর দিন তাঁর বোন রহিমা হাসপাতালে চিৎকার করে বলেন, ‘‘হরতালে ক্ষতি হয় গরিবের, মরলেও গরিব মরে, নেতাগো কিছু হয় না৷''

এপর্যন্ত ৩ সপ্তাহের হরতালে ঢাকায় ককটেল এবং যানবাহনে আগুন দেয়ায় ৭৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন৷ ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে এখন ২৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন৷ ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, যাঁরা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তাঁদের সবাই নিম্নবিত্তের৷ আর তাঁদের অনেকেই এখনো আশঙ্কামুক্ত নন৷ তিনি বলেন শরীরের ৪০ ভাগের বেশি পুড়লেই কাউকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন৷ এখন যাঁরা চিকিৎসাধীন আছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই ৪০ ভাগের বেশি পুড়েছে৷ তাঁরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছেন সুস্থ করতে৷ এজন্য বার্ন ইউনিটের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ তাঁর আশঙ্কা, যাঁরা বেঁচে থাকবেন তাঁদের বড় একটি অংশ পঙ্গু হয়ে যাবে৷

এদিকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আহতদের প্রতিটি ক্ষণ এখন কাটছে আতঙ্ক আর ভয়ে৷ কোনো খবর শুনলেই তাঁরা দৌড়ে যান৷

আগুনে পোড়া ইব্রাহিমের স্ত্রী জানান, তিনি এখন দিন-রাত শুধু প্রার্থনা করছেন তাঁর স্বামী যেন সুস্থ হন৷ তাঁকে যেন আর কোনো খারাপ খবর শুনতে না হয়৷ গত সপ্তাহের হরতাল আপাতত শেষ হলেও হরতালের ভয়াবহতার শিকার এই মানুষগুলোকে টানতে হচ্ছে হরতালের জের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য