1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বদেশ ফিরে পাবে সবহারারা

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা৫ ডিসেম্বর ২০১৪

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল হাতবদলের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় সায় জানাল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার৷ তবে সেটা সম্ভবত কিছুটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বাধ্যতা থেকেও৷

https://p.dw.com/p/1DzJB
ছবি: DW/P. Mani Tewari

ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে নিঃশর্তে ছিটমহল বিনিময় করতে রাজি আছে ভারত৷ সেই সিদ্ধান্তে অবশেষে সায় জানাল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার৷ রাজ্যের মুখ্যসচিব লিখিতভাবে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিলেন, দু'দেশের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তরে রাজ্য সরকারের সায় রয়েছে৷ একই দিনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে বাংলাদেশের ছিটমহল-লাগোয়া এক প্রত্যন্ত এলাকায় জনসভা করে ঘোষণা করলেন, দুই বাংলার দীর্ঘদিনের এক অধরা স্বপ্ন এবার সত্যি হতে চলেছে৷

ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রায় সাত হাজার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের মোট ৫১টি ছিটমহল রয়েছে, আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১৭ হাজার একর নিয়ে রয়েছে ভারতের ১১১টি ছিটমহল৷ এক দেশের সীমানার ভিতরে ঢুকে থাকা অন্য দেশের অংশ, যেখানে প্রশাসনিক পরিকাঠামো থেকে শুরু করে স্কুল, হাসপাতাল, ব্যবসা, বিনোদন, কোনো কিছুর সুযোগ নেই৷ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একাধিকবার এই ছিটমহল বিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু নানাবিধ কারণে, মূলত রাজনৈতিক বিরোধিতায় কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হয়নি৷

২০১১ সালে তৎকালীন ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি চুক্তি হয়, যাতে ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলে বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার ভারতীয়কে ভারতের নাগরিকত্ব এবং ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে দুই দেশ সহমত হয়৷ ছিটমহল সমস্যার সমাধানে সেটাই ছিল প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ৷

এর পর চলতি বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সাংসদ নাজমুল হক-কে ছিটমহলের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে একটি রিপোর্ট দাখিল করেন৷ বস্তুত সেই সময় থেকেই ছিটমহল বিনিময়ের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দু'দেশেই প্রাপ্য গুরুত্ব এবং গতি পায়৷ নাজমুল হক জানিয়ে যান, ছিটমহল এলাকার উন্নয়নে অতিরিক্ত আর্থিক বরাদ্দের পরিকল্পনাও নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷

গত মাসে বাংলাদেশের যে সংসদীয় প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিল, মুখ্যমন্ত্রী নিজে থেকেই তাঁদের সঙ্গে ছিটমহল নিয়ে কথা তোলেন এবং জানান, ছিটমহলের মানুষদের দুর্দশার যাতে শেষ হয়, তিনিও সেটাই চান৷ আসলে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি-র যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তখন এতটাই বিব্রত যে, অতিথিদের সামনে ছিটমহল প্রসঙ্গ তুলে তিনি আসলে অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন৷

নয়ত ছিটমহল বিনিময়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সায় জানানো ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ কিছু করারও ছিল না৷ কারণ এর আগে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত হয়েও শেষ মুহূর্তে বানচাল হয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি এবং অসহযোগিতায়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে যেতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসেন৷

তখনই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল, বাংলাদেশে সরকারবিরোধী শক্তির সঙ্গে কোনো গোপন বোঝাপড়াতেই সম্ভবত তিস্তা জলবণ্টন চুক্তিতে বাগড়া দিয়েছিলেন মমতা৷ তার প্রভাব বাংলাদেশ এবং ভারতে যে আদৌ ভালো হয়নি, সেটা তখনই বুঝেছিলেন তিনি৷

এর পর পশ্চিমবঙ্গে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে এমন এক সম্ভাবনা উঠে আসে যে সাধারণ মানুষের থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ বাংলাদেশের জামাত গোষ্ঠীর হাতেও গিয়েছে, যা পরোক্ষে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সমর্থনে সংখ্যালঘু ভোট একজোট করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে৷

এর পরেই ঘটে যায় খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং ফের দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে জেএমবি-র মতো কট্টরপন্থি গোষ্ঠী নাশকতার ছক কষেছে অথচ পুলিশ, গোয়েন্দা, কেউ কিছু জানতে পারেনি, যদিও সতর্কতা ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা দপ্তরের দিক থেকে৷

ফলে ছিটমহল বিনিময়ের প্রস্তাবে সায় দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আর কিছু করারও ছিল না৷ তবে কুশলী রাজনীতিকের মতোই তিনি এই সুযোগ নিজের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন৷ জনসভায় দাঁড়িয়ে দুই বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে, হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিতে চেয়েছেন৷ নাম না করে সমালোচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদীর৷ বলতে চেয়েছেন, উচ্চ পদে বসলেই জনগণের নেতা হওয়া যায় না৷

বাংলাদেশের ছিটমহল থেকেও অনেক মানুষ মমতার এই সভা শুনতে হাজির ছিলেন৷ না, তাঁরা কেউ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির অপ্রিয় প্রসঙ্গ তোলেননি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য