1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে নানা তথ্য

২৭ এপ্রিল ২০০৯

গোটা বিশ্বেই সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই রোগ ঠেকাতে ইতিমধ্যে দেশে দেশে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে৷ সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য৷

https://p.dw.com/p/HfCw
শূকরের কাছ থেকে ছড়ায় সোয়াইন ফ্লুছবি: AP

সোয়াইন ফ্লু কী?

সোয়াইন ফ্লু হচ্ছে মানব দেহের ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতোই এক ধরণের ভাইরাস যা প্রধানত শূকরের দেহে দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে৷ শূকরের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মানবদেহের সাথে বেশ মিল থাকায় এ ভাইরাসটি পাখির চেয়ে বেশি দ্রুত মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে৷ গত দশকে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল এই যে, এভিয়েন ফ্লু অর্থাৎ এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাস পাখির দেহ থেকে শূকরের দেহে আশ্রয় নিয়ে সহজেই তা মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারতো৷ তবে সৌভাগ্যবশত এমন কিছু ঘটেনি৷

সোয়াইন ফ্লু কতটা উদ্বেগের বিষয়?

সোয়াইন ফ্লু কতটা উদ্বেগের বিষয় তা এই মুহূর্তে কারো জানা নেই৷ বর্তমানে যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হচ্ছে তা এইচওয়ানএনওয়ান নামে পরিচিত৷ এটি পাখি, মানুষ এবং শূকরের ভাইরাসের সংমিশ্রণ, যা আগে কখনো দেখা যায়নি৷ সেই কারণে এটির প্রতিষেধক ব্যবহার এখনি সম্ভব হচ্ছে না৷ বিজ্ঞানীরা এখন এই ভাইরাসটির সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যসমূহ, এর সংক্রমণের লক্ষণ এবং রোগ ও মৃত্যু ঘটানোর সক্ষমতা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেন৷

সোয়াইন ফ্লু কি মানবদেহে আগে কখনো সংক্রমিত হয়েছিল?

১৯৫০ সাল থেকে কখনো কখনো শূকর লালন পালনকারী মানুষদের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে৷ ১৯৫৮ সাল থেকে ইউরোপে ১৭ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি সেনা ছাউনিতে ১৯৭৬ সালে ২০০ সৈন্যের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল৷ এদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং একজন মারা গিয়েছিল৷

সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের লক্ষণগুলো কী কী?

মানবদেহের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই কাশি, হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যাথা, পেশির খিঁচুনি ইত্যাদি৷ তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে৷ সাধারণ ফ্লু-র মতোই এরাও দুই থেকে পাঁচদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে৷

এটার কি চিকিৎসা সম্ভব?

হ্যাঁ, একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত এর চিকিৎসা সম্ভব৷ মেক্সিকো এবং আমেরিকায় সঠিক সময়ে চিহ্নিত রোগীদের ভাইরাস নাশক ঔষধ টামিফ্লু এবং রিলেঞ্জা দ্বারা আরোগ্য লাভ সম্ভব হয়েছে৷ তবে এসব ঔষধ এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে না পারলেও এর মারাত্মক রূপ ধারণ ঠেকাতে এবং জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে৷ আগের প্রচলিত ভাইরাস নাশক ঔষধ এ্যামানটাডিন সোয়াইন ফ্লু-এর ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না৷

কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন?

মেক্সিকোতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ এটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়৷ কেননা গত শতাব্দীর ভয়াবহতম মহামারীতে ১৯১৮ সালেও ঠিক এরকমই ঘটেছিল৷ ঐ সময় ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল৷ এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হচ্ছে, সুঠাম সুস্বাস্থ্যবান যুবকদের দেহ এই ধরণের ভাইরাসের আক্রমণে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটায়৷ ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তীব্র প্রদাহ ফুসফুসে অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটায় এবং রোগী বেশ কাহিল হয়ে পড়ে৷ অবশ্য আমেরিকায় এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে সামান্য অসুস্থ শিশুদের মাঝে৷ এই দুই দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের মাধ্যমে পার্থক্যের কারণ এখনও অগোচরে রয়ে গেছে৷

এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোন প্রতিষেধক আছে কি?

এই ভাইরাস প্রতিরোধে মানবদেহে ব্যবহারের মতো কোন প্রতিষেধক নেই তবে শূকরের জন্য প্রতিষেধক রয়েছে৷ তবে এই ভাইরাসের সাথে মানবদেহের এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের বেশ মিল থাকায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক ব্যবহার করলে তা কিছুটা সুরক্ষা দেবে৷ তবে এই ভাইরাসের জন্য সাধারণ প্রতিষেধক কতটা কার্যকর হবে – এ বিষয়ে গবেষণা চলছে যার ফলাফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে৷

প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক