1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুস্থ জীবন কাটাতে চান? নাকডাকা আগে সারান

২৩ জুলাই ২০১১

নাসিকা গর্জন৷ যাকে নিয়ে আমরা হাসিঠাট্টা করে থাকি৷ সেই নাকডাকা ব্যাপারটা যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তাই জানালেন জার্মানির গবেষকরা৷ সুস্থ জীবন যাপনের জন্য আগে এটাকে বন্ধ করা প্রয়োজন৷

https://p.dw.com/p/1228o
03.08.2011 DW-TV FIT UND GESUND SCHNARCHEN
সঙ্গীর নাকডাকার শব্দ থেকে বাঁচার চেষ্টা

রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা.. / এমন কেন সত্যি হয়না আহা! রবি ঠাকুরের এই কবিতাটি অবশ্যি অন্য কারণে লেখা হয়েছিল৷ কিন্তু এই যে মানুষের বদভ্যাস৷ উদাহরণ, নাক ডাকা, নিঃশ্বাসের শব্দ, শরীর থেকে তৈরি হওয়া আরও কিছু শব্দটব্দ, এসব যদি না থাকত? তাহলে জীবনটা আরও নিরাপদ হত না কী! কিন্তু সেটা সত্যি হয়না৷ আর সেসব ভুলভাল কারণেই প্রতি বছর প্রচুর যুগল, অসংখ্য দম্পতি হারিয়ে ফেলে ভালোবাসা৷ চলে যায় বিচ্ছেদের পথে৷ দেখা দেয় হাজারো দুঃখ বিষাদ, এই জীবনে৷

তারপরেও বিজ্ঞান বলছে, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা মানেই অসুস্থতা, তা কিন্তু নয়৷ বার্লিনের শারিটে ইউনিভার্সিটির স্লিপ মেডিসিন বিভাগের প্রধান গবেষক আলেক্জান্ডার ব্লাউ বেশ দীর্ঘ গবেষণার পর একথা জানিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই নাকডাকা কোন একটা অসুস্থতার লক্ষণ৷ কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেটা বাস্ততবসম্মত নয়৷

কিন্তু ঘুমের মধ্যে কেন ডাকে আমাদের নাক? নাক কান ও গলার সমস্যা নিয়ে জার্মান গবেষণাকেন্দ্র ডিজিএসএম- এর তরফে ইয়ান লোয়লার বলছেন, নাকের হাড়ের গঠনে বিচ্যুতি থেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মদ্যপান, নাক ডাকার কারণ এক নয়, বহু৷ সেগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁর মন্তব্য, যে সমস্ত ব্যক্তির নাক ডাকে বিস্তর পরিমাণে, তাঁদের কিন্তু সতর্ক হওয়া দরকার৷ কারণ, এই নাক ডাকা এমনকি বড়মাপের অসুস্থতাও ডেকে আনতে পারে!

Woman awaking by her husband snoring © Irina Karlova #21742461 © Irina Karlova - Fotolia.com
ছবি: Fotolia/Irina Karlova

কীভাবে, নাক ডাকা থেকে অসুস্থতা? ডিজিএসএম- এর গবেষণা বলছে, যে সব মানুষ ঘুমের মধ্যে বিস্তর পরিমাণে নাক ডাকায় ভোগেন, তাঁদের চিকিৎসায় পরিভাষায় বলা হয়, ম্যালিগন্যান্ট স্নোরিং৷ আরও বিশদে বললে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ আপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea) বা সংক্ষেপে ওএসএ৷ এই ওএসএ-র শিকার যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ভোগেন হৃদযন্ত্রের সমস্যায়৷ এঁদের মধ্যে কারও যদি থাকে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের মত রোগ, তাহলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়৷ সেক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতে ডাকতে অনেক সময় ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত কোন অক্সিজেন শরীরে পৌঁছয় না সেই ব্যক্তির৷ রক্তে কার্বনের পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ সেটা তো মস্ত এক জটিলতা৷

এ বিষয়েই সতর্কতা শুনিয়েছে ডিজিএসএম৷ তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা এ ধরণের ওএসএ- তে ভুগছেন, সচরাচর সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়েও পরের দিনটা তাঁরা অবসন্ন বোধ করেন, ঝিমুনি আসে, কাজে ছন্দ পান না৷ তার কারণটাও ওই রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা তাঁদের জন্য জরুরি৷ ডিজিএসএম- এর সেটাই পরামর্শ৷

দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলিতে শতকরা ৫০ জন পুরুষ আর ৩০ জন মহিলা নিয়মিত নাক ডাকেন ঘুমের সময়ে৷ তাঁদের মধ্যে জটিল নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভোগেন ২০ শতাংশ পুরুষ আর ১০ শতাংশ মহিলা৷ এই সমস্যা দূর করার উপায়ও বাতলেছে ডিজিএসএম৷ বলেছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়াটা জরুরি৷ ঘুমের আগে কোন অবস্থাতেই অ্যালকোহল পান না করা দরকার এবং সেইসঙ্গে চিকিৎসা তো বটেই!

নাসিকা গর্জন নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা করে থাকি আমরা৷ কিন্তু, সে যে এমন সমস্যার খনি, তা কে-ই বা জানত? সুতরাং, আর হাসাহাসি নয়, এবার বরং প্রয়োজন এই নাকডাকা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো৷ কেউ নাক ডাকে, এটা স্রেফ মজার বিষয় নয়৷ এর থেকে অনেক রোগেরও সৃষ্টি হতে পারে৷ তাই ভালো করে ঘুমোতে চান, সুস্থ হয়ে বাঁচতে চান, তো নাকডাকা আগে কমান৷ এমন একটা ধুয়ো তুলে দেওয়াটা মনে হয় সবার আগে দরকার৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক