1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যালিগ্রাফির কদর

Sanjiv Burman২ আগস্ট ২০১৩

কম্পিউটারের এই যুগে মানুষ টাইপ করতেই অভ্যস্ত৷ হাতের লেখার যুগ কি তাহলে শেষ? না, ফ্রান্সের এক ক্যালিগ্রাফার এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করেছেন৷ কারণ তাঁর ব্যস্ততার কোনো শেষ নেই৷

https://p.dw.com/p/19InT
ছবি: picture alliance/Tone Koene

আজকাল যখন প্রায় সবাই কম্পিটারেই টাইপ করেন, তখনও নিকোলা উশনির কলম ছাড়েন নি৷ হাতের লেখা এতই ভালো যে, ক্যালিগ্রাফার হিসেবে তিনি ফ্রান্সে বেশ নাম কুড়িয়েছেন৷ অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ বছর বয়স্ক এই মানুষটির বিষয় ছিল অর্থনীতি৷ চিত্রকলা জাতীয় কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণও পাননি তিনি৷ উশনির বলেন, ‘‘বাবা, দাদা ও তাঁর বাবার মতো আমারও হাতের লেখা চিরকাল বেশ ভালোই ছিল৷ এটা আসলে আমাদের পরিবারে, আমাদের রক্তেই রয়েছে৷''

নিকোলা তাঁর শখকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ কাস্টমারদের তালিকায় কে না নেই! বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড-গুলির জন্য কাজ করেন তিনি৷ সব রকমের আমন্ত্রণপত্র তৈরি করেন৷ উপলক্ষ্য অনুযায়ী লেখার শৈলি স্থির করেন – কখনো রোম্যান্টিক, কখনো আধুনিক৷ বাকিদের জন্য ব্র্যান্ড লোগো ও নিজস্ব হরফের স্টাইল তৈরি করেন তিনি৷ যেমন ফ্রান্সের ‘ভোগ' ম্যাগাজিন বা হলিউডের হোটেল ‘শাতো মারমঁ'-র জন্য৷ উশনির বলেন, ‘‘আসলে সব কিছুতেই ক্যালিগ্র্যাফি চলতে পারে৷ তাতে একটা ব্যক্তিগত ছোঁয়া রাখা যায়৷ মানুষ খুশি হয়, আবেগ অনুভব করে৷ প্রযুক্তির চাপে ক্যালিগ্র্যাফি উধাও হয়ে যাবে – এ ধারণা একেবারেই ভুল৷ বরং বিপরীতটাই দেখা যাচ্ছে৷ আজকের এই হাইট টেক যুগে ক্যালিগ্র্যাফি-র চাহিদা বেড়েই চলেছে৷''

সাধারণ মানুষও নিকোলা-র স্টুডিওতে আসেন৷ যেমন সেসিল টোগনি কয়েক সপ্তাহ পর বিয়ে করছেন৷ অনুষ্ঠানে যাঁরা সাক্ষী হবেন, তাঁদের জন্য সুন্দর চিঠি লেখানো দরকার৷ সেসিল মনে করেন, ‘‘অবশ্য শুধু ই-মেল লিখলেও চলতো৷ তবে মেল তো চিঠি নয়, যা লেটারবক্সে পাওয়া যায়, বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দেওয়া যায়৷ ঘনিষ্ঠ কোনো মানুষের কাছ থেকে পাওয়া চিঠির মর্মই আলাদা৷ কাগজের উপর কালির ছোঁয়া৷ মারি অঁতোয়ানেৎ-এর যুগের মতো৷ আইডিয়াটা আমার বেশ ভালো লাগে৷''

পরের কাজ প্যারিসের ‘কার্লা অটো' পিআর এজেন্সিতে৷ ক্যালিগ্রাফার হিসেবে নিকোলা বিভিন্ন রকমের আমন্ত্রণপত্রের জন্য মানানসই হরফ খুঁজছেন৷ আপাতত ফ্যাশন ডিজাইনার আলবেয়ার এলবাস ও লঁকোম-এর বিশেষ সান্ধ্য অনুষ্ঠানের জন্য৷ উশনির বলেন, ‘‘এই হরফের মধ্যে একটু নাটকীয়তা চাই৷ কারণ আমন্ত্রণপত্রের মোটিভ আমাকে মঞ্চের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তবে এর জন্য কালি ব্যবহার করবো কিনা, তা আমি জানি না৷ ফেল্ট পেন আরও আধুনিক ছাপ রাখতে পারে৷ ফ্যাশন শো-র মাঝেই এই পার্টি হবে৷ দেখা যাক, কোনটা মানানসই হয়৷''

প্যারিসের এক পাড়ায় নিজের কাজের উপকরণ খুঁজে পেয়েছেন নিকোলা৷ লুই ভুইতোঁ ব্র্যান্ড কয়েক মাস আগে সেখানে লেখালেখির সরঞ্জামের এক বুটিক দোকান খুলেছে৷ নানা রংয়ের কালি, ক্রিস্টালের দোয়াত, ফাউন্টেন পেন রাখার দামি পাত্র৷ এই সব সরঞ্জাম তৈরির ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন নিকোলা৷ উশনির বলেন, ‘‘ডট পেন ও ফাউন্টেন পেনের মধ্যে কোনো একটি বেছে নিতে হলে আমার মতে, ভালো মানের ফাউন্টেন পেনের দিকেই ঝোঁকা উচিত৷ কারণ মানুষ তখন সময় নিয়ে পরিশ্রম করে লেখার আগে প্রতিটি শব্দ ভেবে দেখতে বাধ্য হয়৷ আসলে কালির আঁচড় তো বহুকাল থেকে যায়৷''

বিশেষ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র লিখতে লিখতে নিকোলা উশনির-এর আরেকটি বিষয়ে জ্ঞান বেড়ে গেছে৷ তারকাদের ঠিকানা তো বটেই, তাঁদের একান্ত জগতেও ঢুঁ মারার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি৷ উশনির বলেন, ‘‘কিছু নাম বার বার লিখতে হয়৷ তখন বুঝতে পারি কে বাসা বদল করেছে, কার নতুন সঙ্গী হয়েছে বা কার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে৷ কেউ মারা গেলেও তা জানতে পারি৷ আবার এমনও হয়, যে কেউ আর আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না৷ ফ্যাশন শো-র সময় কাউকে তাঁর নির্দিষ্ট আসন ছাড়তে হলেও বুঝতে পারি৷ আসলে যাঁর যত উঁচু স্ট্যাটাস, তিনি ব়্যাম্প-এর তত কাছে বসার সুযোগ পান৷''

নিকোলা উশনির-এর কাজের চাপ কম নয়৷ মাঝে মাঝে রাত জেগেও কাজ শেষ করতে হয়৷ এই যেমন প্যারিস ফ্যাশন সপ্তাহের আগে৷ ঠিক সময়ে হাজার-হাজার আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে হবে৷ সবকটি তাঁর নিজের হাতেই লেখা৷

এসবি/ডিজি