1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিসিলিয়ায় শরণার্থী পরিস্থিতি

কার্ল হফমান/আরবি৩০ জুন ২০১৪

ইটালির সিসিলিয়ায় শরণার্থীদের ভিড় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তবে জনগণের সহায়তা না পেলে কর্তৃপক্ষ এই ভার সামালাতেই পারতেন না৷ স্থানীয় মানুষ যে সেখানে আতঙ্কের বদলে আতিথেয়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1CRvS
Immigranten in Sizilien
ছবি: K. Hoffmann

আদমের বয়স মাত্র ১৮ হলো৷ কিন্তু এই বয়সেই এক জীবনযোদ্ধায় পরিণত হয়েছে সে৷ সিসিলিয়ার লাম্পেডুসাতে তার যেন পঞ্চমবারের মতো জন্ম হলো৷ স্বদেশ ঘানায় এক হামলার শিকার হয়ে প্রায় মারা যাচ্ছিল সে৷ লিবিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পথে তিনবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচেছে৷ ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার পথে এক চুলের জন্য পানিতে ডোবার হাত থেকে রক্ষা পায়৷ এক সহযাত্রী চুল ধরে টেনে তুলেছিলেন তাকে৷

Immigranten in Sizilien
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বৈধ কাগজপত্রের জন্য এক থেকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়ছবি: K. Hoffmann

জনসাধারণের সহায়তা

আদম এখন লাম্পেডুসাতে এক জেলের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে৷ ইটালিয়ান ভাষা ও পিৎসা বানানো শিখছে সে নব উদ্যোমে৷

আদমের মতো শয়ে শয়ে অল্পবয়সি শরণার্থী গত কয়েক মাস ধরে ইটালিতে আসছে৷ যথেষ্ট আশ্রয়শালা না থাকায় বিভিন্ন পরিবারে ভাগাভাগি করে রাখা হয়েছে তাদের৷ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ ২০১১ সালে শরণার্থীদের বিশাল স্রোতকেও যেন ছাড়িয়ে গিয়েছে এবারকার শরণার্থী সমাগম৷ সেই সময় কয়েকদিনের মধ্যে ২৫০০০ তরুণ টিউনিশিয়ান ইটালির মাটিতে পা রাখে৷ লাম্পেডুসাতে দিনরাত বেকারি জ্বলতে দেখা যায়৷ অন্ততপক্ষে শরণার্থীদের যাতে অভুক্ত না থাকতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়৷ জেলে এনজো ও তাঁর সহযোগীরা ম্যাট্রাস পাতার জন্য আসবাব-পত্র সরিয়ে ফেলেন৷ তারপর আশ্রিতদের জন্য খাবার সংগ্রহ করার জন্য মাছ ধরতে যেতেন তাঁরা৷ ‘‘এই মানুষগুলি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলেন৷ তাঁদের আশ্রয় দেওয়া তো একান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার৷'' বিনয়ের সাথে বলেন এনজো৷

ইটালিয়ানরা অতিথিপরায়ন

‘‘আমরা ইটালির মানুষরা অতিথিপরায়ন৷'' বলেন জিওভানি গামবুজা৷ দক্ষিণ সিসিলিয়ার এক শরণার্থী শিবিরের পরিচালক তিনি৷ কিন্তু শুধু আতিথেয়তা দিয়ে তো কাজ হয় না৷ এর ফলে সমস্যারও সৃষ্টি হয়৷ বলেন জিওভানি৷ বিশেষ করে তরুণ শরণার্থীদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন তিনি৷ ইটালি সরকারে একার পক্ষে এই চাপ নেওয়া সম্ভব নয়৷ ইউরোপীয় ইন্সটিটিউশনগুলিরও সরাসরি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা উচিত৷

তবে ততদিন পর্যন্ত নাগরিক উদ্যোগ, বিভিন্ন সংঘ-সমিতি, বিশেষ করে গির্জা এইসব অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে৷

দীর্ঘ সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর ক্যাথলিক গির্জা আফ্রিকার সংকটপূর্ণ অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা মানুষজনের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপের নির্দেশে খালি গির্জা ভবনগুলিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ পাতা হয়েছে সারি সারি ক্যাম্পখাট৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে আত্মীয়স্বজনের কাছে যাওয়ার আগে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে৷

‘আশার আশ্রয়স্থল'

‘আশার আশ্রয়স্থল' স্টেশনের পেছনে প্রাক্তন ব্যারাকটিকে এই নামই দিয়েছেন ফ্রানসিসকান ব্রাদার, বিয়াগো কন্টে৷ তাঁর উদ্যোগে গত ১৫ বছর ধরে দক্ষিণ ইটালির সবচেয়ে বড় বেসরকারি শরণার্থী শিবির হিসাবে কাজ করছে এটি৷ ধ্বংসাবশেষের মাঝখানে একটি ক্যান্টিন তৈরি করেছেন তিনি৷ সেখানে দৈনিক ১২০০ প্লেট খাবারের ব্যবস্থা করা হয়৷ মানুষের দানের অর্থ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা দিয়ে চালানো হয় এইসব কর্মকাণ্ড৷ ৭০০ ব্যক্তি প্রাক্তন ব্যারাকে ঘুমাতে পারেন৷ অনেকে অল্প কিছুদিন থাকেন সেখানে৷ কেউ কেউ আবার পাদ্রিদের কাছেও আশ্রয় নেন৷ কেননা সেখানে খাবার দাবার সাদামাটা হলেও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে৷

সরকার পরিচালিত শিবিরগুলিতে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বৈধ কাগজপত্রের জন্য এক থেকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়৷ শিবিরে মাত্র এক প্লেট পাস্তা খেয়ে সারাদিন কাটাতে হয় তাঁদের৷ এতে দিন দিন দুর্বল হতে থাকেন তারা৷ কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন৷

কাটানিয়া শহরের পশ্চিমে শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি চাষিরা অতিরিক্ত ফলমূল ও তরিতরকারি আশ্রিতদের মধ্যে বিলি করেন৷

চাষিরাও এগিয়ে এসেছেন

কোথাও আবার প্রতীক হিসাবে কিছু ‘সেন্ট' নেওয়া হয়৷ এইভাবে সোমালিয়ার এক তরুণী মা পেলেন এক ব্যাগ তাজা শাকসবজি৷ তাঁর বাচ্চাটির জন্ম হয়েছে ইটালিতে আসার পরপরই শিবিরে৷ মায়ের প্রয়োজন এখন পর্যাপ্ত ভিটামিন৷ বলেন চাষি আলেসান্দ্রো৷ যিনি তাঁর খেত থেকে এইসব তরিকারি এনেছেন৷

সিসিলিয়ার অন্যদিকে ত্রাপানিয়ায় টইটুম্বর শরণার্থী শিবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিন যুবক৷ সেখানে তাঁরা এক বছর ধরে বাস করছেন৷ শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শিবির৷ তাঁরা হলেন জাম্বিয়া থেকে আসা সিসাও, আবদি ও ইসা৷ বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর৷ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দুটো বাইসাইকেল না পেলে তাঁদের দিন কাটতো হতাশায়৷ এই সাইকেলে চেপে সাধারণ মানুষজনের কাছাকাছি আসতে পারেন তাঁরা৷ একদিন হয়ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, এই আশা তাঁদের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য