1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশংসা জার্মানির

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংগঠন জার্মানির অর্থনীতি সম্পর্কে তার সর্বাধুনিক বিবরণ পেশ করেছে৷ ২০১০ সালে জার্মানি অসাধারণ ফলাফল করেছে, যা অন্যান্য দেশের পক্ষেও দৃষ্টান্ত স্বরূপ, বলছে ওইসিডি৷

https://p.dw.com/p/144cW
ছবি: Fotolia/svort

ওইসিডি'র মহাসচিব এঞ্জেল গুরিয়া'কে মঙ্গলবার বার্লিনে উচ্ছ্বসিত দেখা গেল: ‘‘আমরা অভিনন্দন জানাতে এসেছি৷ খুব ভালো কাজ হয়েছে এবং আরো হোক, এটুকুই বলার আছে৷''

গুরিয়া'র ভাষ্যে, বিগত কয়েক বছরে জার্মানি অর্থনৈতিক বিচারে অসাধারণ ফলাফল করেছে৷ জার্মানির এই সাফল্যের চাবিকাঠি হল শ্রম বাজারের সংস্কার, শ্রমিক-মালিক দু'পক্ষেরই গঠনমূলক নমনীয়তা এবং সুবিবেচিত বাজেট নীতি৷ এবং এটা এমনই এক ফর্মুলা যে, অন্যান্য দেশও সেটা মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করছে৷

শুধু ইউরোপেই নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানি যে'ভাবে তার অর্থনীতিকে সামাল দিতে পেরেছে, সেটাই গুরিয়া'কে উদ্বুদ্ধ করেছে:

‘‘জার্মানির অর্থনীতি সংক্রান্ত ওইসিডি বিবরণে জার্মান অর্থনীতির এই বিকাশধারাকে স্বীকৃতি জানানো হয়েছে৷ জার্মানির প্রবৃদ্ধির মডেল এতোই সফল যে, অর্থনৈতিক সংকটের সব ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও তা দিক ঠিক রাখতে পেরেছে৷ শ্রম বাজারের সংস্কারের ফলে কর্মহীনতা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে৷ পরিবেশ বান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নীতি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন হ্রাসে অবদান রেখেছে৷ একটি সর্বাঙ্গীণ কর নীতি বাজেট ঘাটতি কমাতে সাহায্য করেছে৷ কাজেই আপনারা এই সব সুন্দর ফলাফলের জন্য আমাদের অভিনন্দন গ্রহণ করুন৷''

অবশ্য ওইসিডির বিবরণ অনুযায়ী জার্মান অর্থনীতি চলতি বছরে শূন্য দশমিক চার শতাংশ বাড়বে, অর্থাৎ খোদ জার্মান সরকার যে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তার চেয়েও অনেক কম৷ কিন্তু ওইসিডি বলছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জার্মানি ২০১১'র শেষে কিছুটা ধাক্কা খেলেও, ২০১২'র দ্বিতীয়ার্ধে আবার কিছুটা তেজির মুখ দেখবে৷

OECD-Wirtschaftsbericht, Jose Angel Gurria
ওইসিডি’র মহাসচিব এঞ্জেল গুরিয়া বেশ উচ্ছ্বসিতছবি: picture-alliance/dpa

অপরদিকে জার্মানির এই সাফল্যে নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না, বলেছেন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংগঠনের প্রধান এঞ্জেল গুরিয়া৷ এক্ষেত্রে জার্মান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বিপদ আসতে পারে জনসংখ্যাতত্ত্বের একটি বাস্তব তথ্য থেকে: জার্মানির জনসংখ্যায় প্রবীণদের অনুপাত ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং নবীনদের অনুপাত সেই পরিমাণে কমছে৷ এই প্রবণতা রুখতে না পারলে চলতি দশকের মাঝামাঝি থেকেই জার্মানিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক ও কর্মীদের অভাব দেখা দিতে পারে৷ দেশে জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে গেলে জার্মানিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং বিদেশ থেকে আরো বেশি উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক আকর্ষণ করতে হবে৷

ওইসিডি'র বিচারে জার্মানিতে মহিলাদের আরো বেশি পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের শ্রমিক-কর্মচারীদের আরো বেশি দিন পেশায় থাকার প্রেরণা দিতে হবে৷ জার্মানিতে যে সব শ্রমিকদের শিক্ষাগত ও পেশাগত প্রশিক্ষণ কম, তারাই সর্বাগ্রে অবসর নেয়৷ এই গোষ্ঠীর শ্রমিকরা যা'তে তাদের অবসরের বয়স অবধি কাজ করে, সেজন্য বেশি বয়সে কাজ করার জন্য তাদের অবসরভাতাও আনুপাতিক ভাবে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ওইসিডি৷

এছাড়া জার্মানিকে বিদেশ থেকে আরো বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের জার্মানি আসার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে, বলছে ওইসিডি৷ বর্তমানে জার্মানিতে পাকাপাকি ভাবে থাকার ভিসার জন্য বাৎসরিক আয় অন্তত ৬৬ হাজার ইউরো হওয়া প্রয়োজন৷ জার্মান শ্রম মন্ত্রণালয় দৃশ্যত বিচার করছে, যে'সব শিল্পশাখায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বিশেষ অভাব, সেখানে সর্বনিম্ন আয়ের সীমা কমিয়ে বছরে ৩৩ হাজার ইউরো করা চলে কিনা৷ এবং সাধারণভাবেই এই সীমা কমিয়ে ৪৮ হাজার ইউরো করা চলে কিনা৷

ওইসিডি'র আরেকটি পরামর্শ হল, গুরিয়া'র ভাষায়:

‘‘জার্মান অর্থনীতিকে আজ বিশ্বের এমন বহু দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে, যাদের অর্থনীতি অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ এর মধ্যে আছে জার্মানির একাধিক প্রতিবেশী দেশ এবং সেই সঙ্গে উত্থানশীল দেশগুলি - বিশেষ করে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে৷ কাজেই জার্মানির এখন রফতানি ভিত্তিক অর্থনৈতিক সাফল্য থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সাফল্যের দিকে যাওয়া উচিত৷''

প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকার্জ / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন