1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাদী সা’দর - সাহসী এক ইরানি নারী

৩১ মার্চ ২০১০

সাদী সা’দর পেশায় আইনজীবি৷ মেয়েদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা বন্ধ করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন৷ মার্চ মাসেই তিনি তাঁর এই তৎপরতার জন্য পেয়েছেন ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার৷

https://p.dw.com/p/Mivg
ইরানের আইনজীবি সাদী সা’দরছবি: Shadi Sadr

প্রথম দর্শনেই সাদী সা'দরকে দেখলে কিছুতেই মনে হবে না, যে তিনি অত্যন্ত সাহসী একজন নারী৷ পেশায় আইনজীবি সা'দর কাজ করছেন মানবাধিকার নিয়ে৷ মার্চ মাসের দশ তারিখে সাদী সা'দর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের কাছ থেকে গ্রহণ করেন ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অফ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ২০১০৷ প্রতি বছর বিশ্বের দশজন নারীকে জনকল্যাণমূলক কাজে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়৷ মেয়েদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার অমানবিক রীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার সাদী সা'দর৷ এই নির্মম অত্যাচার বন্ধ করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন৷

৩৫ বছর বয়স্কা সাদী সা'দর ইরানে মানবাধিকার বিশেষ করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার৷ মেয়েদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার নির্মম প্রথার বিরুদ্ধে তিনি৷ ইরানের দণ্ডবিধি থেকে এই অমানবিক শাস্তির ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে - এর কৃতিত্ব পুরোপুরি সাদী সা'দরের৷ তবে নতুন সরকার এই আইন মেনে চলবে কিনা তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না৷

Shadi Sadr iranische Juristin und Frauenrechtlerin
জার্মানিতে বসেই সাদী সা'দর ইরানের মহিলাদের সাহায্য করতে চানছবি: MeydaanNews

গত বছর ইরানে নির্বাচনের পর অশান্ত হয়ে ওঠে ইরান৷ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল মানুষ৷ সাদী সা'দরও ছিলেন এসব প্রতিবাদী মানুষের কাতারে৷ তিনি জানান, ‘‘২০০৯ সালের জুলাই মাসে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমি৷ তখনই ঘটনা ঘটে৷ সেদিন রাফসানজানিও জু্ম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজন লোক আমাকে গ্রেপ্তার করে৷ তারা তাদের পরিচয় পত্র দেখাতে অস্বীকার করেছিল৷ আমাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ তাদের কে দিয়েছে তা আমি এখনো জানিনা৷ তারা আমাকে এভিন কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল৷''

এই বিশেষ কারাগারে যে শুধু রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মানুষদের বন্দি করে রাখা হয় তা কিন্তু নয়৷ সাধারণ গৃহবধূও রয়েছেন৷ যারা লেখাপড়া করেননি৷ কিন্তু নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছিলেন৷ পথে নেমেছিলেন৷ এল হাম হচ্ছেন এমনই এক প্রতিবাদী গৃহবধূ৷ সাদী জানান, ‘‘এল হাম দেখেছে আমাদের সমাজে নারীদের কোন মূল্যই দেয়া হয় না৷ নারীদের কোন অধিকার নেই৷ এল হাম পুরো ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল, প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল৷ কেন বছরের পর বছর নারীদের সঙ্গে এরকম অমানবিক আচরণ করা হয় সেই প্রশ্ন তুলেছিল৷ এল হামের ক্ষমতা রয়েছে এসব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, কিছু একটা করার৷''

২১ মার্চ পালন করা হল নওরোজ৷ প্রতি বছরের মত এবছরও সবাই আনন্দ-উৎসবে মেতেছিল৷ সবাই নেমেছিল রাস্তায়৷ পথ-ঘাট ছিল মুখরিত৷ অনেকে সবুজ রঙের পোষাক পড়ে রাস্তায় নেমেছিল৷ সবুজ রঙটি ছিল নির্বাচনের প্রতিবাদের রঙ৷ সবুজ প্রতিবাদ৷ যদিও সেই প্রতিবাদে মহিলাদের দেখা গেছে প্রথম সারিতে কিন্তু তার পরেও অন্যান্য ক্ষেত্রে মহিলাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷ সাদী সা'দর আরো বললেন, এসব আন্দোলনে অনেক মহিলা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের দেখা গেছে৷ সবসময়ই দেখা গেছে এসব প্রতিবাদের সময়, মিছিলের সময় মহিলারা সাথে রয়েছেন৷ কিন্তু সত্যিকারের রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই৷ আমার মনে হয় ‘সবুজ আন্দোলন' নারীদের খুব বেশি সাহায্য করতে পারবে না৷ সবুজ আন্দোলনে নারী অধিকার যুক্ত করতে হবে৷ প্রয়োজন হবে ভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডের৷ সেখানে নারীদের সমস্যার কথাগুলোই তুলে ধরা হবে৷

বলা প্রয়োজন, সাদী সা'দর বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ জার্মানির সবুজ দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাইনরিশ বোল ফাউন্ডেশন তাঁকে সাহায্য করেছিল জার্মানিতে আসার জন্য৷ জার্মানিতে বসেই সাদী সা'দর ইরানের মহিলাদের সাহায্য করতে চান৷ তাঁর কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে চান৷

প্রতিবেদক : মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক : আবদুল্লাহ আল-ফারূক