1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যবসা নয়, দায়িত্ব

২৭ ডিসেম্বর ২০১১

পাকিস্তানের তরুণ সাংবাদিক আয়েশা হাসান তাঁর পেশার গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরতে চান৷ তাঁর দেশে সাংবাদিকতার পেশাতে পুরুষের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়৷

https://p.dw.com/p/13ZfS
লাহোর ভিত্তিক সাংবাদিক আয়েশা হাসানছবি: Ayesha Hasan

জার্মানির ফ্রিডরিশ এবার্রট ফাউন্ডেশানের আমন্ত্রণে আয়েশা হাসান এখন ডয়চে ভেলেতে ইন্টার্নশিপ করছেন৷ তিনি ডি ডব্লিউ'এর মার্টিনা ব্যার্ট্রাম-এর সঙ্গে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন৷

ডি ডাব্লিউ: পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র৷ সেখানে ইসলাম সম্পর্কে লেখালেখি করা কতটা কঠিন?

আয়েশা হাসান: খুবই কঠিন৷ যে কেউ খুব সহজেই লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য বা তারকাদের নিয়ে লিখতে পারেন৷ কিন্তু পাকিস্তানে ধর্ম নিয়ে লেখা কষ্টকর৷ ধরুন আপনি হয়তো নারী নির্যাতন নিয়ে কিছু লিখলেন, অনেক সংগঠন তখন সেই নির্যাতিত নারীর দুর্নাম রটাবে৷ তারা বলবে ঐ নারী অত্যাচারের শিকার নয়, বরং সে নিজেই অপরাধী কারণ তার পোশাক পরিচ্ছদ এবং চালচলন ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থি৷ স্বামীর হাতে লাঞ্ছিতা মহিলারাও একই ধরনের নিন্দার সম্মুখীন হন৷

ধর্মীয় সংগঠনগুলি ইসলামি আইনের সঙ্গে সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে লেখালিখি পছন্দ করেনা৷ সাংবাদিকরা এই সব বিষয় নিয়ে লিখলে তাদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়৷ কেননা সাংবাদিকদের সম্পর্কে একটা ধারণা রয়েছে যে, তারা ইসলামি আইন পুরোপুরি সমর্থন করেন না৷ ইসলামি সংগঠনগুলি মনে করে, ইসলামি আইন তাদের পক্ষে৷ কিন্তু ইসলাম সহিংসার ধর্ম নয়, কিছু কিছু গ্রুপ ধর্মের নামে অপকর্ম করে থাকে৷

আপনি কখনো কি বিপজ্জনক পরিস্থিতে পড়েছিলেন?

কিছুদিন আগে আমাদের ওয়েব সাইটে কয়েকটি ব্লগে যৌনতা এবং সমকামিতা নিয়ে কিছু লেখা প্রকাশ করেছিলাম৷ অনেক সংগঠন আমাদের ওযেব সাইটটি বয়কটের ডাক দেয়৷ শুধু তাই নয়, তারা পত্রিকা এবং প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে ইন্টারনেট অভিযান শুরু করে৷ তাদের অভিযোগ, আমরা নাকি ধর্ম বিরোধী৷ পাকিস্তানে যে কোন বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে জনমত গড়ে তোলা খুবই সহজ৷ কোন সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা বা ব্যক্তি বিশেষ কিংবা সাংবাদিকদের জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে৷ পাকিস্তানিদের খবর অতিরঞ্জিত করারও প্রবণতা রয়েছে৷

আপনি জন্মসূত্রে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমের খাইবার পাখতুনখাওয়ার বাসিন্দা৷ সেই অঞ্চলটি রাজনৈতিক ভাবে খুবই অস্থিতিশীল৷ রাজনীতি সংক্রান্ত খবর পরিবেশন করতে কিরকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন আপনারা হয়ে থাকেন?

রাজনীতি বড় কঠিন এক ব্যপার৷ বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্কে গবেষণা বা তাদের নিয়ে কিছু প্রকাশ করা মোটেই সহজ নয়৷ ছোটখাটো বিষয় প্রকাশ করা নিয়ে কেউ চাকরি হারাতে পারে আর বড় কিছুর জন্য প্রাণ হারানোও বিচিত্র নয়৷ দোসরা মে তে অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন হত্যার অল্প কিছুদিন পর সাংবাদিক সালিম শাহজাদ করাচি নৌঘঁটিতে আক্রমণের পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনীর সম্ভাব্য যোগ সম্পর্কে লিখেছিলেন৷ এর অল্প কিছুদিন পর ২২ মে নিহত হন এই সাংবাদিক৷ তাই এই ধারণা হতে পারে, সরকার সালিম শাহজাদ হত্যার ব্যপারটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করেনি বরং সাংবাদিকতা পেশার ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সাংবাদিকতা ব্যবসা নয়, এটি একটি দায়িত্ব৷

স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম পাকিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কী ভাবে সহায়তা করতে পারে?

আমার দৃষ্টিতে সংবাদ মাধ্যম শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে৷ সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলি তথ্য আদান প্রদান করে থাকে, তারা মানুষ ও সমাজের চিত্র তুলে ধরে৷ তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম৷ সে জন্যেই আমরা সংঘাতের খবর অতিরঞ্জিত না করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ বৃদ্ধির কথা বলতেই আগ্রহী৷ সাংবাদিকতা সঠিক তথ্য এবং নিখুঁত খবর পরিবেশনার মাধ্যমে রাজনীতিতে আগ্রাসী মনোভাবের অবসান ঘটাতে পারে৷ দু:খজনকভাবে হলেও একথা সত্য যে, পাকিস্তানে প্রচুর উত্তেজনায় ভরা নিম্ন মানের সাংবাদিকতা লক্ষ্য করা যায়৷ সেগুলো হয়তো খবর সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে ব্যর্থ হয়৷ এসব অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন৷

সাংবাদিক হিসেবে আপনি কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?

ভবিষ্যতে আমি আরো কঠিন সব বিষয় নিয়ে লেখার কথা ভাবছি৷ যেমন রাজনীতি বা নারী সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে৷ আমি যে প্রদেশে বাস করি, সেখানকার নারীরা নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন নয়, তাদের অনেকেই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত৷ কেউ কেউ পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ঘর পরিষ্কার করার সময়ই কেবল সংবাদ মাধ্যমের কাছাকাছি যেতে পারে, কেননা পুরুষরা টেলিভিশন সেটটি সাধারণত: নিজেদের ঘরেই রাখে৷ আমি মনে করি, আমার দায়িত্ব তিনগুণ৷ আমি কেবল একজন সাংবাদিকই নই, আমি একজন পাকিস্তানি এবং একজন পাশতুনও৷ সৎ সাংবাদিকতা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে৷ পাকিস্তানে সাধারণত নারী সাংবাদিকদের অবহেলা করা হয়৷ বেশিরভাগ কর্মকর্তা মেয়েদের ছোটখাটো বিষয়, যেমন লাইফ স্টাইল, ফ্যাশন বা সামাজিক কোনো বিষয়ের দায়িত্ব দেন৷ সাংবাদিকতায় মেয়েদের গুরুত্ব দিতে হলে এই ধারা এখনি বদলানো প্রয়োজন৷

সাক্ষাত্কার: মার্টিনা ব্যার্ট্রাম

ভাষান্তর: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য