সরকারি খরচে বিপুল কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিল জার্মানি
৮ জুন ২০১০চার বছরে আশি বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিল জার্মান সরকার৷ খরচ কমানোর এই বিপুল কোপ পড়বে মোটের ওপর পরিবার কল্যাণ এবং বেকারভাতার ওপরেই বেশি৷ দুদিনব্যাপী মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর চ্যান্সেলর ম্যার্কেল এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন সোমবার সন্ধ্যায়৷ চ্যান্সেলর এদিন সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আমাদের অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে গেলে ২০১৪ সালের মধ্যে আমাদের ৮০ বিলিয়ন ইউরো সঞ্চয় করতেই হবে৷ গত কয়েকমাসের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি গ্রিস এবং অন্য কয়েকটি দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা কী ভীষণ আকার ধারণ করেছে৷ তাই শক্তপোক্ত অর্থনীতিই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার একমাত্র উপায়৷’’ জার্মান জোট সরকারের অন্যতম প্রধান জোটসঙ্গী মুক্ত গণতন্ত্রী বা এফডিপি দলের শীর্ষনেতা তথা জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে সাংবাদিকদের জানান, ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ১১.২ বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
সরকারি খরচ কমানোর এই বিপুল বহর সবচেয়ে বেশি যে খাতে প্রভাব ফেলতে চলেছে, তা হল পরিবারকল্যাণ এবং বেকারদের জন্য প্রদত্ত সরাকরি ভাতা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল জানান, যে সমস্ত ব্যক্তি সরকারি বেকারভাতায় দিনযাপন করে থাকে তাদেরকে কাজে ফিরে যেতে হবে৷ এক্ষেত্রে এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে যারা বেকারভাতা পেয়ে আসছে, তাদের ওপরেই প্রথম কোপ পড়ার সম্ভাবনা৷ এছাড়া, কর বাড়ানোর কিছু সিদ্ধান্তও শোনা গেছে ইতিমধ্যে৷ যেমন, জার্মানির জাতীয় বিমান পরিবহণ সংস্থা লুফতহানসার যাত্রীদের এখন থেকে টিকিটের দাম ছাড়াও দিতে হবে বিদায়ী কর বা বিশেষ ‘ডিপারচার ট্যাক্স'৷ এই বিদায়ী করের সিদ্ধান্ত জার্মানির বিমান পরিবহণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন লুফতহানসার মুখপাত্র৷
কিন্তু যে সমস্ত খাতে সরকার খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তা জার্মানির সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা৷ বিশেষ করে বিরোধী বামপন্থীদের মন্তব্য, ধনী এবং প্রভাবশালীদের ওপর করভার না বাড়িয়ে ম্যার্কেলের মধ্য দক্ষিণপন্থী জোট সরকার অসহায় গরীবদের জন্য সরকারি সুযোগসুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না৷ বামপন্থী নেতা গ্রেগর গিসি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত জার্মানির সামাজিক শান্তিকে বিনষ্ট করবে৷ সরকারের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও শুনিয়েছেন বামপন্থীরা৷ সামাজিক গণতন্ত্রী বা এসপিডি দলের শীর্ষনেতা সিগমার গাব্রিয়েলের মতে এই সিদ্ধান্ত ‘যন্ত্রণাদায়ক' এবং ‘পরিবারের ওপর ভয়ংকর চাপ'৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম