1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে হারিয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা বাংলাদেশে

১৪ জানুয়ারি ২০১১

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে৷ গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চল এবং পর্বত শৃঙ্গে জমে থাকা বরফ৷ এর অন্যতম বিরূপ ফল হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি৷ গত ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার৷

https://p.dw.com/p/zxQ6
Bangladesh, Flood, climate
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার প্রভাব বিশ্বব্যাপীছবি: Sophie Tarr

পৃথিবীর প্রায় ৬৫ কোটি মানুষ সমুদ্র উপকূলে বাস করে এবং পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ শহর উপকূল এলাকায় অবস্থিত৷ ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার প্রভাব বিশ্বব্যাপী৷ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনেক এলাকা চলে গেছে সমুদ্রগর্ভে৷ বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৩২ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা৷ যেখানে বাস প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিপন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ ধারণা করা হয়, এর ফলে কুতুবদিয়ার ২৫০ কিলোমিটার, ভোলার ২২৭ কিলোমিটার এবং সন্দ্বীপের ১৮০ কিলোমিটার ভূমি এলাকার শতকরা ৬৫ ভাগ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে৷

শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে দেশের মধ্যে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লোনা পানি অনুপ্রবেশ ঘটছে৷ ফলে সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি দেশের প্রায় আট লাখ ৩০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি বিভিন্ন মাত্রায় লবনাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে৷ সম্প্রতি সেই এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন বাংলাদেশের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক রফিকুল বাশার৷ তিনি উপকূলের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানালেন, সেখানে তিনি দেখতে পেয়েছেন অনেক ভূমি সমুদ্রে হারিয়ে যাবার নিশানা৷

Zyklon Aila wütet in Indien und Bangladesch
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিপন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতমছবি: picture alliance/dpa

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিচু জমির উচ্চতা বাড়ানো, কিংবা ভূমি ক্ষয়রোধে উপকূলের কৃষক আবহমানকাল থেকে ব্যবহার করে নিজস্ব প্রযুক্তি৷ তারই সফল প্রয়োগ পারে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে৷ পরিকল্পিতভাবে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ জমিতে ব্যবহার করে পলি আটকে রাখার এই প্রযুক্তির নাম বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা 'টিআরএম'৷

তাঁরা বলেছেন, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরিশালের উপকূল টিআরএমের মাধ্যমে উঁচু করা সম্ভব৷ জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের নিজস্ব অভিজ্ঞতায় উদ্ভাবিত অবাধ জোয়ার-ভাটার প্রবাহে আসা পলি ব্যবহার করে ভূমি উঁচু করা শুরুও হয়ে গেছে৷ নতুন করে জেগে ওঠা ভূমিতে বোরো ধানের আবাদ করে ফলন পাওয়া গেছে বেশ৷

বাংলাদেশ সরকারের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা – ওয়ারপোর বিজ্ঞানীরা জনগণের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন৷

Zyklon Aila wütet in Indien und Bangladesch
যশোর জেলার উপকূলীয় ৮টি বিলে ৬৯ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার জমি অবাধ জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলা সম্ভবছবি: AP

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, জমি উঁচু ও চাষযোগ্য করা, নদীর গভীরতা বাড়িয়ে জলাবদ্ধতা দূর, লবণাক্ততা কমানো ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে উপকূল রক্ষায় টিআরএম পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর৷ আমেরিকার মিসিসিপি অববাহিকাতেও একইভাবে মাটি দেবে যাওয়া ও উঁচু করার প্রক্রিয়া চলছে৷ তবে সেখানে অনেক ব্যয়বহুল প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমি উঁচু করা হচ্ছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, কুয়েতসহ বেশকিছু দেশে এবং ভূমধ্যসাগরে আরও ব্যয়বহুল পদ্ধতি প্রয়োগ করে ছোট ছোট দ্বীপ তৈরি করা হচ্ছে৷

বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদফতরের হিসাবে প্রতি বছর বাংলাদেশ উপকূলে বঙ্গোপসাগরে এক দশমিক দুই বিলিয়ন ঘনফুট পলি আসে৷ এর ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলে জড়ো হয়৷ বিশেজ্ঞরা বলছেন, শুধু যশোর জেলার উপকূলীয় ৮টি বিলে ৬৯ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার জমি অবাধ জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলা সম্ভব৷ আর এর ফলেই জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষতি মোকাবিলা করা সম্ভব৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন