‘শ্রমিকের মজুরি নিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা' | পাঠক ভাবনা | DW | 27.09.2013
  1. Inhalt
  2. Navigation
  3. Weitere Inhalte
  4. Metanavigation
  5. Suche
  6. Choose from 30 Languages

পাঠক ভাবনা

‘শ্রমিকের মজুরি নিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা'

বিজিএমইএ ন্যূনতম মজুরি ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে৷ শ্রমিকদের প্রস্তাব ন্যূনতম মজুরি ৮,১১৪ টাকা করতে হবে৷ আর বিশ্লেষকরা বলেছেন, ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা৷ এ বিষয়ে বন্ধু রিপনের মতামত৷

ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত, সেই প্রশ্নে আসার আগে বিশ্লেষণ করা যাক ৮,০০০ টাকার উপরে মজুরি করা হলে কি ঘটবে? ঢাকা শহরে একজন কর্মী আসার সাথে সাথে ৮,০০০ টাকার উপরে মজুরি পেলে বর্তমানে যত শ্রমিক কাজ করছেন, তার ৩০-৪০ শতাংশ কর্মী ছাটাই হয়ে যাবে৷ কারণ এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর বড় মাপের টাকার বাজেট ঘাটতিতে পড়বে৷ প্রাথমিক স্তরে একটি গার্মেন্টস কোম্পানি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয় ঋণের মাধ্যমে, যার ফলে এতে ‘রিস্ক ফ্যাক্টর' থাকে অনেক বেশি৷ গার্মেন্টস মালিককে অনেক দিক হিসেব করে চলতে হয়৷ গার্মেন্টস মালিকদের গাড়িতে চড়ে অফিসে আসা আর তাঁর বাহ্যিক রূপ শ্রমিকদের মাঝে ব্যবধান গড়ে তোলে৷

দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিকরা মোটেও কম বেতন পান না....আমার সামনে যাঁদের দেখেছি নিজের যোগ্যতা দিয়ে তাঁরা অনেক দূর এগিয়েছেন৷ অনেকে তো পরবর্তীতে কোনো একটি গার্মেন্টস কোম্পানির মালিকও হয়ে গেছেন৷ আমার মতে, শুধুমাত্র অযোগ্য মানুষগুলো পড়ে থাকেন তিমিরে৷ সুতরাং, রানা প্লাজাকে ইস্যু করে শ্রমিকের বেতন অতিরিক্ত বাড়ানো হলে বাংলাদেশের উদীয়মান গার্মেন্টস সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাবে৷

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি৷ যাঁদের কোনো কর্মসংস্থান নেই, তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা নিজে ন্যূনতম খেয়ে পরিবারের খোঁজখবর রাখেন৷ ঈদের সময়ে পরিবারকে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাতেও সক্ষম তাঁরা৷ তাই এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে পুরো গার্মেন্টস শিল্প হুমকির মুখে পড়ে৷

আমার মতে, বিজিএমইএ-র ন্যূনতম মজুরি ৩,৬০০ টাকা করাই যুক্তি সঙ্গত৷ এটাকে বাড়িয়ে বড়জোর ৪,০০০ টাকা করা উচিত হবে, এর বেশি করা মোটেও উচিত নয়৷ একজন মানুষের জীবন শুরু হবে ৪,০০০ টাকা দিয়ে৷ তারপর তিনি নিজের যোগ্যতা দিয়ে গাড়ি আর বাড়ির মালিক হবেন, এটাই স্বাভাবিক৷ আমরা অযোগ্যতাকে বেশি মাত্রায় সুযোগ দিয়ে দিলে গার্মেন্টস সেক্টর অবশ্যই ধ্বংস হবে৷

একটা কাজ করা যেতে পারে যে, একটি গার্মেন্টস কোম্পানি যত টাকা লাভ করবে তার একটি অংশ শ্রমিকের মাঝে বিতরণ করা যেতে পারে৷ এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারকে মনিটরিং সেল নিয়োগ করতে হবে, যা ১০০ শতাংশ স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করবে৷ এতে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হবে না৷

পাশাপাশি শ্রমিকদের মেডিকেল সুবিধা, জীবনবিমা আর ভবিষ্যৎ তহবিল সুনিশ্চিত করতে হবে৷ সন্তানের পড়াশোনার জন্য বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে হবে৷ একজন মানুষ যখন নিজে সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার পাবেন, পরিবারের কিছু নিশ্চয়তা পাবেন, একমাত্র তখনই তিনি দেশের একজন সুস্থ, সুন্দর নাগরিক হিসেবে ভাবতে শিখবেন৷ কম বেতন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা পাবেন৷ আগ্রহ পাবেন দেশের জন্য কিছু একটা করার৷

আশা করি আমি আমার কথাগুলো বোঝাতে সক্ষম হয়েছি৷ আশা করি আমার মতামত সকলের পছন্দ হবে৷ নতুন করে অনেককে কিছু ভাবতে শেখাবে৷ ভালো থাকার শুভ কামনা জানিয়ে ইতি টানছি৷ প্রকৌশলী মো. মঞ্জুরুল আলম রিপন, কচুক্ষেত, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে৷

- বিস্তারিতভাবে মতামত জানিয়ে আমাদের কাছে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই রিপন৷

সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

নির্বাচিত প্রতিবেদন