1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশু পর্নোগ্রাফি এবং নির্যাতন রোধে সোচ্চার ইইউ

৮ এপ্রিল ২০১০

শিশু পর্নোগ্রাফি রোধ এবং শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বন্ধে নতুন আইনের কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করা হবে, নাকি অশালীন চিত্রসমূহ মুছে ফেলা হবে - এই নিয়ে রয়েছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/Mpup
ছবি: picture-alliance/ dpa

রয়েছে তথ্য অধিকারের প্রশ্ন৷ তাই তথ্য প্রযুক্তির সকল মাধ্যমেই জনগণের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে৷ অপরদিকে, যৌন শিক্ষায় অজ্ঞ থাকলে ভয়াবহ নানা যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা৷ তাই যৌন শিক্ষা নিয়ে এতো রাখঢাক কেন? আধুনিক সমাজে এমন দাবি যখন বেশ জোরালো, ঠিক তখনই শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে আরো কঠোর পন্থার কথা জানালো ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

তবে এনিয়ে এখনও চলছে বিতর্ক৷ কারণ, কারিগরি দিক দিয়ে নতুন এই প্রস্তাবনা কতটা নিখুঁত তা আরো খতিয়ে দেখতে হবে বলে দাবি উঠেছে৷ তবে শুধু শিশু পর্নোগ্রাফি রোধই নয়, ইউরোপীয় কোন নাগরিক নিজ দেশে কিংবা অন্য দেশে গিয়ে শিশু নির্যাতন করলেও তাদের জন্য আরো কঠোর দণ্ডের দাবি তুলেছে ইইউভুক্ত দেশগুলো৷ সম্প্রতি শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনসহ শিশু পর্নোগ্রাফির ঘটনা উচ্চ হারে প্রকাশের ফলেই ইইউ গোষ্ঠীর এমন উদ্বেগ৷ ইইউ-এর এক হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালে এক হাজার বাণিজ্যিক ও পাঁচশ' অবাণিজ্যিক শিশুপর্নো সাইট চিহ্নিত করা হয়৷ তাই গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া লিসবন চুক্তির আওতায় এসব অপরাধের একটা বিহীত করতে চাই সদস্য দেশগুলো৷

Cecilia Malmström Flash-Galerie
‘‘এটা নৃশংস অপরাধ, যা শিশুদের মর্যাদা চিরতরে ধ্বংস করে দেয় : ইইউ’র স্বরাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিশনার সেসিলিয়া মাল্মস্ট্রমছবি: picture-alliance/ dpa

ইইউ স্বরাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিশনার সেসিলিয়া মাল্মস্ট্রমের কণ্ঠেই উচ্চারিত হলো এমন সুর৷ বিশেষ করে শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে সকল সদস্য দেশের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷ মাল্মস্ট্রম বলেন, ‘‘শিশুরা নির্যাতন এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ আর এসব দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এটা বাক স্বাধীনতা হতে পারে না৷ এটা নৃশংস অপরাধ, যা এসব শিশুদের মর্যাদা চিরতরে ধ্বংস করে দেয়৷ এটার বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়তে হবে৷''

তিনি বলেন, শিশু পর্নোগ্রাফি সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ বন্ধে কারিগরি ব্যবস্থা তৈরি করা হবে৷ কারণ এসব সাইট যেখানে আছে সেখান থেকে তা বন্ধ করা কঠিন, বিশেষত সেগুলো যদি ইইউ-র বাইরে থাকে৷ এই ব্যবস্থা ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে৷ এবং তা কাজও করছে৷

এছাড়া ভিন্ন কোন দেশে গিয়ে যারা শিশুদের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়, সেসব ইউরোপীয় নাগরিক বর্তমান আইনে ছাড় পেয়ে গেলেও সেই সুযোগ আর রাখতে চায় না ইইউ৷ আগের আইন অনুযায়ী, ঘটনা যে দেশে, সেদেশেই বিচার হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু এখন নতুন প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে, ঐসব ইউরোপীয় নাগরিকের বিচার নিজ দেশেই করার বিধান রাখতে হবে৷

Symbolbild Kinderpornographie
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে শিশুদের অশোভন ভিডিওছবি: picture-alliance/ dpa

নতুন এই প্রস্তাবনায় সব ধরণের অশোভন তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন বন্ধের কথা বলা হচ্ছে৷ এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিষয়বস্তু শুধুমাত্র সংরক্ষণ কিংবা বিতরণই নয়, বরং এধরণের কিছু খোঁজা কিংবা এই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট পরিদর্শনও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ এছাড়া, যৌন নির্যাতনের উদ্দেশ্য নিয়ে ইন্টারনেটে শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে কিংবা শিশুদের অশোভন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ালেও তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে৷ আর এই ধরণের অপরাধের জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হবে৷ এমনকি কোন ইউরোপীয় নাগরিক ইউরোপের বাইরে কোথাও এমন অপরাধ করলে, তাকেও একই শাস্তি পেতে হবে৷

অবশ্য, শিশুদের এমন নিগ্রহের হাত থেকে সুরক্ষায় এই প্রস্তাবনাটিকে আইনে পরিণত করতে হলে ইইউভুক্ত সবগুলো দেশের সমর্থন থাকতে হবে৷ অনুমোদিত হতে হবে ইউরোপীয় সংসদেও৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত জার্মানিসহ কিছু সদস্য দেশ এই প্রস্তাবনার সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেছে৷ জার্মানির আইনমন্ত্রী জাবিনে লয়েটহয়জার-শ্নারেনবের্গার বলেন, ‘‘এসব নিষিদ্ধ বিষয় ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলা হোক৷ কিন্তু আমরা ব্লক করতে চাই না৷ কেননা তা সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়৷'' তাঁর দাবি, ‘‘এই পন্থা খুব একটা কার্যকর হবেনা৷ কারণ কারিগরি দিক থেকে ওয়েবসাইট ব্লক করার পরও তা পরিদর্শনের আরো উপায় রয়েছে৷ আর তাতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরও আস্থা নষ্ট হয়৷''

এছাড়া বাক স্বাধীনতার নীতিতেও ইন্টারনেটের উপর এমন খড়গহস্ত হওয়া যায় না৷ তাই ইন্টারনেট ব্লক করার বদলে বরং এমন অশালীন সাইটগুলো পুরোপুরি মুছে ফেলার পক্ষে জার্মানি৷ তাছাড়া এসব অবৈধ কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারে আইন তো রয়েছেই৷ কিন্তু জার্মানির এমন অবস্থানের সমালোচনা করেন ইউরোপীয় সংসদের সদস্য মানফ্রেড ভেবার৷ তিনি বলেন, ‘‘শিশু পর্নোগ্রাফি রোধ বাক স্বাধীনতার পথে বাধা হতে পারে না৷ এটা আমার বোধগম্য নয় যে, সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া সেন্সর আরোপ হলে, অশালীন উপাদানগুলো মুছে ফেলা কেন সেন্সর আরোপ হবে না৷''

প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ