শিশুদের ছাত্র সংসদ
২৩ জুলাই ২০১২বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ সম্পর্কে উন্নয়ন সংস্থা চেঞ্জ মেকার্স-এর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট তানবীর উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই উদ্যোগ নেন বিদ্যালয়গুলোতে অল্প বয়সি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি করার৷ তাদের মধ্যে প্রচারাভিযান চালানো, ভোটাভুটি, ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন - এসব কিছুর মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের বিকাশের চেষ্টা করা হয়৷ তারই অংশ হিসেবে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা হয়েছে৷ আমি যতদূর জানি, ইতিমধ্যে এই উদ্যোগ সবাইকে আকৃষ্ট করছে এবং অনেকেই এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷''
এই উদ্যোগের ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অ্যাডভোকেট সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমি আসলে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটাকেই ইতিবাচক বলে মনে করছি, যদি এর ভেতরে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সংশ্লিষ্টতা না থাকে৷ বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিল্ড্রেন অস্ট্রেলিয়া প্রায় ১৫ বছর আগে থেকেই ঢাকার আশেপাশের কয়েকটি জেলায় বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে৷ সেখানে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিনিধি তৈরি করেছে৷ সেখানেই শিশুদের মাঝে চমৎকার প্রতিভার ছাপ দেখা গেছে এবং এটা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে৷ সেক্ষেত্রেও বলা হয়েছিল যে, শিশুদের যদি ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের সুযোগ দেওয়া যায় এবং ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, তাহলে পরবর্তীতে এর একটা সুফল পাওয়া যাবে৷ আমি মনে করি, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যদি লেখা-পড়ার পাশাপাশি এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়, যেখানে তারা গণতন্ত্র, প্রার্থী, নির্বাচন, স্বচ্ছতা - এসব বিষয়ে ধারণা পায়, তাহলে সেটা বড় হয়েও তাদের কাজে লাগবে৷''
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে সিভিক এডুকেশন তথা নাগরিক শিক্ষা সম্প্রসারণের কাজ করছেন সিদ্দিকী৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে তাঁরা সংবিধান, সংসদ, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, শিশু অধিকার, নারী অধিকার, দুর্নীতি এসব বিষয়ে শিক্ষা সম্প্রসারণে সক্ষম হয়েছেন৷ এই কার্যক্রমের ইতিবাচক ফল থেকেও তিনি মনে করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও পৌরবিষয়ক শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ছাত্র-ছাত্রীরা পাবে৷
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিয়োজিত করার ফলে তাদের মূলকাজ অর্থাৎ লেখাপড়ার ক্ষতির আশঙ্কা থাকতে পারে - এমন অভিযোগের কথাও উঠেছে কিছু মহল থেকে৷ তবে এমনটি মনে করছেন না অ্যাডভোকট সিদ্দিকী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ক্ষতির কোনো আশঙ্কাই নেই৷ বরং আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও খুব বেশি পাঠ্যপুস্তক নির্ভর হয়ে রয়েছে৷ ফলে আমাদের শিশুরা এখনও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব ও সচেতনতার বিষয়গুলি নিয়ে খুব বেশি আলাপ-আলোচনার সুযোগ পায় না৷ বিদ্যালয়ে পৌরনীতি কিংবা সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কিছু বিষয় থাকলেও সেসবকিছুর বাস্তব চর্চা এবং প্রয়োগের দিকটা নেই বললেই চলে৷ তাই এই উদ্যোগের ফলে শিশুরা এসব বিষয়ে প্রাথমকি বিদ্যালয় থেকেই চর্চার সুযোগ পাবে৷''
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ