1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শহিদের রক্ত বৃথা যায় না!’

১৬ ডিসেম্বর ২০১৩

আজ ১৬ ডিসেম্বর৷ মহান বিজয় দিবস৷ ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবসটিকে ঘিরেই নানা লেখা ও প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে, যা সংকলন করা হলো ব্লগওয়াচে৷

https://p.dw.com/p/1AaG4
Bangladesch Nationalflagge Aktion
ছবি: Reuters

সামহয়্যার ইন ব্লগে মিজানুর রহমান মিলন তাঁর পোস্টের শিরোনাম দিয়েছেন, বিজয় দিবসে শহিদদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও কিছু কথা৷ লিখেছেন, ‘‘এ মহান বিজয়ের সাথে মিশে আছে লাখো শহিদের রক্ত ও আত্মত্যাগ৷ এ আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের চলার পাথেয়, আমাদের চেতনা৷ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্ত করে তোমাদের রক্তের বিনিময়ে তোমরা আমাদের দিয়েছ স্বাধীনতা, কিন্তু আমরা এখনো নব্য উপনিবেশবাদের অন্তর্জালে বন্দি! তোমরা আমাদের মুক্ত করেছ পাকিস্তানি নামক নরপিশাচদের নিষ্ঠুর যাতাকল থেকে, কিন্তু আমরা এখনো মুক্ত হইনি সাম্রাজ্যবাদের কড়াল থাবা থেকে৷

তোমরা চুপিসারে দেখে যাও বাংলা মায়ের আজ করুণ আর্তনাদ৷ এ ব্যর্থতা আমাদের, এ ব্যর্থতা আমাদের রাজনীতিকদের! তোমরা যে পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলে, যুদ্ধ করেছিলে সেই জান্তাও নতুন খোলসে, নতুন পোশাকে, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে পালাক্রমে ধর্ষণ করে যাচ্ছে তোমাদের চেতনাকে, তোমাদের স্বপ্নকে৷... তারা আগুনে ঝলসে দিচ্ছে, বোমায় ক্ষত-বিক্ষত করছে আমাদের প্রিয় বাংলা মায়ের শরীর!''

এরপর ব্লগার মিলন লিখেছেন, ‘‘তোমাদের রক্তের শপথ, তোমাদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না৷ কবির কণ্ঠের সাথে গাহিতে চাই –আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ৷''

একই ব্লগে কাওসার রুশোর লেখার বিষয় স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন'৷ ‘‘সদ্য যুদ্ধফেরত দুই তরুণ খসরু ও মাসুদ পারভেজ চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী কঠিন সময়টিকে সবার কাছে তুলে ধরতে৷ এমন একটি মাধ্যমের কথা তারা ভাবছিলেন যাতে করে একসঙ্গে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে৷ এমনকি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও যা হয়ে থাকবে একটি প্রামাণ্য দলিল৷ অপরদিকে চাষী নজরুল ইসলামও এমন একটি ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সহযোগিতার আশায়৷ এভাবেই নির্মাণ শুরু হয় ‘ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রটির৷ চার মাসের খাটা-খাটুনির পর ১৯৭২ সালের ১১ আগস্ট আলোর মুখ দেখে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র৷''

Demonstrationen in Bangladesch Abdul Quader Mollah
ছবি: Reuters

শাহ আজিজ তাঁর ব্লগে তুলে ধরেছেন যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা৷ শিরোনাম, ‘‘৭১ সালের এই দিনে আমি এবং আমার সত্ত্বা৷'' লিখেছেন, ‘‘ভোর বেলাতে তোপধ্বনির গুরুধ্বনি ভুল করে বড়সড় বোমার আওয়াজ ভেবে শুরু করলাম আমার বিজয়ের অনুভূতি৷ একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর আমরা দু ভাই মুক্তাঞ্চলে ঢুকে পড়েছি৷ দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল থানা ভবন এর পতাকা ঠিক পাকিস্তানি পতাকা লাগছে না৷ আমি দাড় বাওয়া বন্ধ করে মাথা ঘুরিয়ে এক নজরে তাকিয়ে দূরের পতাকার দিকে৷ মেজ ভাই ছই এর ভিতর দিয়ে এগিয়ে আমার পাশে দাঁড়ালেন৷ মাঝি এখন একাই নৌকা বাইছে জোয়ারের বিপরীতে৷ মৃদু বাতাসে পতাকা নড়ছে বটে তবে পুরোপুরি বোঝার মতো নয়, আমাদের গ্রাম কি এখনো পাকিস্তানিদের দখলে! হটাত দমকা বাতাসে খুলে গেল পুরো পতাকা৷ আরে এ যে স্বাধীন বাংলার পতাকা! আনন্দে দু ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম, একসাথে চিৎকার করে উঠলাম ‘জয় বাংলা'৷ ১৬ ডিসেম্বর আকাশবাণীতে সন্ধ্যাবেলায় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁপানো কান্নাজড়িত কণ্ঠে একটি স্বাধীন দেশের জন্মলগ্নের আবেগমথিত বাণী পড়ে শোনালেন৷ আমরা চোখ মুছলাম আমাদের ৯ মাসের এক বীর মিডিয়া সহযোদ্ধার সাথে৷''

এরপরই শাহ আজিজ ফিরে আসেন বর্তমানে৷ লিখেছেন, ‘‘আজ ৪২ বছর বাদে আমাদের জীবন হুমকির মুখে৷ উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সর্বত্র পাকিস্তানি ধারার একটি ঘরানা গড়ে উঠেছে৷ এ ঘরানায় যারা আছে তারা সবাই শাসক, যারা ৪২টি বছর শাসন করেছে অদল বদলের আঁতাত করে৷ একজন পুচকে মোল্লার ফাঁসিতে যেভাবে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ তাতে এই কথাই মনে আসে এই ফুঁসে ওঠার আস্কারা শাসকরাই দিয়েছে৷ কিন্তু কেন?''

জনি তারেক লিখেছেন, ‘‘বিজয় ঠিকই অর্জন করেছি কিন্তু স্বাধীনতার বেয়াল্লিশটি বছর পরে এসেও আমরা পারিনি আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে৷ মানবাধিকার নামে কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা জানি না৷ মুক্তিযোদ্ধাকে বানানো হয় রাজাকার, আর রাজাকারকে বানানো হয় মুক্তিযোদ্ধা৷ যেদিন এই সব বিষয়ে বিজয় অর্জন করতে পারবো সেদিনই উল্লাস করে বলতে পারবো আমরা স্বাধীন আমরাই বিজয়ী৷''

আবুল মোকারম সামহয়্যার ইন ব্লগে একটি কবিতা লিখেছেন,

আজ থেকে ৪২ বছর আগে, মার্চে

মহান নেতা যেদিন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন আগুন পাকিদের হৃদয়ে

নয় মাসের রক্ত রক্ত আর রক্তের জোয়ারে

তিরিশ লক্ষ প্রাণ আর অগণিত সম্ভ্রমের বিনিময়ে

আজকের এই দিনে এখন যাকে সোহরাওয়ারদী উদ্যান বলো

৯৩ হাজার উপস্থিত আর অসংখ্য অনুপস্থিত পাকি মস্তক ঘোষণা দিয়েছিলো

Bangladesch Kriegsverbrecher Abdul Quader Molla gehängt
ছবি: Mustafiz Mamun

‘পৃথিবীর বুকে জেগেছে বাঙালিরা, আমরা হার মেনে পালালাম!'....

সেই নিয়াজীর জারজ সন্তানেরা বেলুন উঁচিয়ে মুক্তি চায় গোলামদের

নিজের অক্ষমতায় নিজেকে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!

শহীদের রক্ত বৃথা যায় না, যেতে পারে না!

বীরাঙ্গনাদের সেই অশ্রু, সেই চিৎকার, সেই হাহাকারই যথেষ্ট

সেইসব হায়েনাদের ধ্বংস হওয়ার জন্য-

সেইসব অভিশপ্ত বৃক্ষকে শিকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলাই হউক তোমার আমার

আমরা যারা নিজেরে বাঙালি বলি তাদের দৃপ্ত শপথ!

কামরুন নাহারও একটি কবিতা লিখেছেন, শিরোনাম ‘বিজয় দিবস দু'হাজার তেরো'

যে শিশুটির জন্ম হলো আজ

তাকে শোনাতে চাই ভালোবাসার গান

তাকে বলতে চাই অভিন্ন সৃষ্টির ইতিকথা

তাকে দেখাতে চাই রক্ত ও বেদনার

একটি মাত্র রঙ

...

তাকে শেখাতে চাই মা কখনো ভাগের নয়

তার হাত ধরে যেতে চাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে

তারই সাথে গাইতে চাই বিজয়ের গান

এই যাত্রার আজই অভিষেক হোক৷

ইরফানুর রহমান রাফিন লিখেছেন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন শুরু না করলে, কে বলতে পারে, আজ হয়তো জামায়াত, খুনি নিজামীদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করতো! শহিদ জননী এবং একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের ফলে যে প্রবল গণআদালত তৈরি হয়েছিলো এইসব জানোয়ারদের বিচারের জন্য, ২০১৩ সালের শাহবাগ সেই মহান আন্দোলনেরই উত্তরাধিকার বহন করে এবং যেই আওয়ামী লীগ শহিদ জননীর আন্দোলনে পেছন থেকে ছুড়ি মেরেছিলো সেই দলই আজ শাহবাগ আন্দোলনকে নিজেদের নির্বাচনি ভোটব্যাংক তৈরির উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে৷ আর বিএনপি একাত্তরের গণহত্যাকে অস্বীকার করার খায়েশে যেখানে সেখানে গণহত্যা দেখে বেড়াচ্ছে, ইসলাম হেফাজতের নামে জামায়াতে ইসলামীকে হেফাজত করছে৷

‘‘মানুষের মানচিত্রের স্বপ্নের জন্য ইতিহাসের যে লড়াই মুক্তিযুদ্ধ, তা কারো জন্যই অপেক্ষায় থাকে না কখনো, কারো জন্যই না৷ ইতিহাস তার নিজের ধারায় ঠিকই চলতে থাকবে, ভদ্রলোকি ‘ইতিহাসের' নিগড়ে সে আটকে থাকবে না, মুক্তিযুদ্ধ ভদ্রলোকি চর্চার ওপর নির্ভর করেনি কোনোদিন৷ আমি মনে করি, আমাদের আদি মুক্তিযুদ্ধ যে স্বপ্ন নিয়ে হয়েছিলো সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন এই বাংলায় অবশ্যই হবে, তবে তার জন্য স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদেরকে সংগঠিত হতে হবে ও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে সকল প্রকার শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে৷''

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য