1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শরণার্থী-তাঁবুর বিকল্প

ইউলিয়া মানকে / আরবি১৯ জুলাই ২০১৩

এতদিন শরণার্থী শিবিরগুলো ছিল তাঁবুঘেরা একটা অঞ্চল৷ তবে এখন জাতিসংঘ ঐ তাঁবুর বিকল্প খুঁজছে৷ কারণ এই আশ্রয়গুলি খুব টেকসই নয়৷ তাই ইথিওপিয়াতে পরীক্ষা করা হচ্ছে, শরণার্থীদের জন্য ছোট ঘর স্থাপন করা যায় কিনা৷

https://p.dw.com/p/19AJg
ছবি: IKEA Foundation

প্রায় কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরগুলোর ছবিতে শুধুই সাদা ও জরাজীর্ণ তাঁবু দেখা গেছে৷ খুব বেশি হলে ছয় মাসের মতো টিকে থাকে এইগুলি৷ অবশ্য এটা নির্ভর করে বাতাসের তীব্রতা, রৌদ্রের প্রখরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রার ওপর৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ইনোভেশন টিমের মুখপাত্র রোচো নুরি বলেন, ‘‘আসলে তাঁবুর ডিজাইন করা হয়েছিল জরুরি অবস্থার জন্য৷''

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা যায় না

এছাড়া তাঁবুর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা যায় না৷ নুরির ভাষায়, ‘‘রাতের অন্ধকারে পাশের তাঁবুতে আলো জ্বালানো থাকলে সেখানে মানুষের ছায়া দেখা যায়৷'' এই অবস্থা অনেকেই মেনে নিতে পারেন না৷ ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে নুরি জানান, ‘‘তাঁবুর আরেকটি সমস্যা এর তাপ পরিবহনের ক্ষমতা৷ গ্রীষ্মকালে এগুলো খুব গরম এবং শীতকালে খুব ঠান্ডা হয়ে যায়৷ ফলে এটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে না৷'' অথচ এখন পরিস্থিতি এমন যে, শরণার্থীদের বছরের পর বছর ঐ শিবিরগুলিতেই দিন কাটাতে হচ্ছে৷

UNHCR Flüchtlingslager Zelte Äthiopien
প্রায় কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরগুলোর ছবিতে শুধুই সাদা ও জরাজীর্ণ তাঁবু দেখা গেছেছবি: picture-alliance/dpa

তাই প্রায় তিন বছর ধরে টেকসই ছোট ছোট ঘর তৈরির প্রক্রিয়া শেষে এখন সেগুলো পরীক্ষা করে দেখছে জাতিসংঘ৷ সুইডিশ সংস্থা ‘রিফিউজি হাউজিং ইউনিট'-এর তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে৷ এতে অর্থ জোগান দিচ্ছে ‘ইকেয়া (বা আইকিয়া) ফাউন্ডেশন'৷ এ পর্যন্ত তারা এই খাতে প্রায় ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে৷ অবশ্য এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ কারণ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত সুইডিশ এই ফার্নিচার কোম্পানির তৈরি শেল্ভ এবং আলমারির নির্মাণকৌশলে, অর্থাৎ অনেকটা ‘লেগো'-র মতো করে এই ঘরগুলোকে দাঁড় করানো হচ্ছে৷

যেখানে সোমালীয় শরণার্থীরা বাস করেন

জুন মাসের শেষের দিকে ইউএনএইচসিআর ইথিওপিয়ার দক্ষিণের ডোলো আডো অঞ্চলে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের এরকম অনেকগুলো ঘর নির্মাণ ইউনিট পাঠিয়েছে৷ সেখানে মূলত প্রতিবেশী দেশ সোমালিয়ার শরণার্থীরা বাস করেন৷ তাঁদের সংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার৷

যে প্যাকেটগুলিতে ঘর নির্মাণের প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো থাকে, তার একটা বহন করতে দু'জন শক্ত-সামর্থ্য মানুষের প্রয়োজন৷ এই প্যাকেটে থাকে হাল্কা ও নমনীয় প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ঘরের দেয়ালের জন্য আলাদা আলাদা কয়েকটি পাত৷ অন্য একটি ব্যাগে থাকে এসব দেয়ালের পাত সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ধাতব আংটা, তার এবং কানেক্টর৷ বলা বাহুল্য, ইকেয়া-র অন্যান্য সাধারণ সব আসবাবের মতো এই সব ঘর তৈরি করতে কোনো যন্ত্রপাতির দরকার হয় না৷ তাই এগুলি তৈরি করা খুবই সহজ৷

বিদেশি ত্রাণ, বিদেশি ধারণা

এই ঘরের প্রকল্পের প্রশংসা করে ডির্ক ডোনাথ বলেন, ঘরগুলো অবশ্যই তাঁবুর চেয়ে বেশি মজবুত হবে৷ তবে ভাইমারের বাউহাউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের এই অধ্যাপক এটিকে কৃত্রিম ও চাপিয়ে দেওয়া সমাধান বলে মন্তব্য করেন৷ ডিডাব্লিউ-এর সাথে সাক্ষাৎকারে ডোনাথ বলেন, ‘‘ধাতব কাঠামোর এই সব ঘর তৈরির ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন এবং অঞ্চলের কোনো সম্পৃক্তি নেই৷ তাই এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হবে৷''

IKEA Foundation Flüchtlingsunterkunft
তাই প্রায় তিন বছর ধরে টেকসই ছোট ছোট ঘর তৈরির প্রক্রিয়া শেষে এখন সেগুলো পরীক্ষা করে দেখছে জাতিসংঘছবি: IKEA Foundation

বিকল্প এই ব্যবস্থার সমস্যা

এই বিকল্প ব্যবস্থা এখনই কার্যকর করা যাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তার অবশ্য কিছু কারণও রয়েছে৷ অধ্যাপক ডোনাথ মনে করেন, ইথিওপিয়ানদের বাড়ি-ঘর নির্মিত হয় যেসব উপকরণ দিয়ে, তেমনটাই চান শরণার্থীরা৷ ঐতিহ্যগতভাবে সেখানে বাড়ি-ঘর তৈরি করা হয় বাঁশ, কাদা এবং সিমেন্ট দিয়ে৷ অথচ শরণার্থীদের জন্য এই বিকল্প ঘর তৈরিতে ব্যবহার করা হবে গ্লাস, প্লাস্টিক ও ধাতব উপকরণ৷ এছাড়া দু'বার ডোলো আডো ঘুরে ডোনাথের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে তিনি মনে করেন, সেখানকার শরণার্থীদের সবাই এই ঘর তৈরির কাজে সহযোগিতা করতে প্রস্তুতও নয়৷ অনেকে চান, এই কাজের জন্য দৈনিক ভাতা আরও বাড়ানো হোক৷

তিন বছর টিকে থাকবে

এই সব ঘর অন্তত বছর তিনেক টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এছাড়া ঘরের ছাদে রাখা সোলার সেল থেকে একটি বাতি ও অন্য একটি যন্ত্র চালানোর জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে৷ তার ওপর এই ঘরগুলোতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে৷ বাঁচা যাবে খারাপ আবহাওয়ার হাত থেকেও৷ আর একটা সুবিধা হলো, তাঁবুর চেয়ে সহজে মেরামত করা ও বাড়ানো যাবে ঘরগুলোকে৷

ইউএনএইচসিআর-এর রোচো নুরি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘এই ঘরগুলোর ব্যাপারে প্রচণ্ড অনীহা দেখা দিলে এগুলোর আরও উন্নয়ন করা হবে কিংবা অন্য কোনো সমাধান খোঁজা হবে৷'' তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই আবাসন ব্যবস্থা সাদরে গৃহীত হবে৷ তাছাড়া এক সময় এই সব ঘর তৈরির খরচ কমে আসবে৷ একটা ঘরের জন্য ব্যয় হবে আনুমানিক ১০০০ ইউরো, যা তাঁবু তৈরির খরচের চেয়ে আদতেই কম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য