1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেকায়দায় সরকার

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১২ মে ২০১৪

নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার দায় এখন স্পষ্টতই র‌্যাবের ওপর৷ রবিবার হাইকোর্ট র‌্যাবের তিন সাবেক কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে সেটা আরো স্পষ্ট করেছেন৷

https://p.dw.com/p/1By4D
Bangladesch Verbot der Islamistischen Partei Jamaat-e-Islami
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

এদিকে, বিএনপি সরাসরি র‌্যাবের প্রয়োজনীয়তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷ এছাড়া র‌্যাব বিলুপ্তের আন্তর্জাতিক চাপতো আছেই৷ তবে সরকার এখনো বলছে, কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় বাহিনীর ওপর বর্তায় না

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়৷ ৩০ এপ্রিল তাঁদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে৷ ৪ মে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জ এলাকার র‌্যাব-১১'র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাইদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্প প্রধান লে. কমান্ডার এস এম মাসুদ রানা প্রতিপক্ষ নূর হোসেনের কাছ থেকে কোটি টাকা ঘুস নিয়ে এই অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে৷ র‌্যাবের এই তিন কর্মকর্তার সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে দিপু চৌধুরী৷ র‌্যাব-১১'র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাইদ মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা৷ অপহরণের পর শহিদুল তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও পুলিশ তখন মামলা নেয়নি৷

নিহতদের পরিবারসহ বিভিন্ন মহল থেকে তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে দাবি উঠলেও তাদের গ্রেফতার না করে র‌্যাব থেকে প্রত্যাহার এবং সেনা ও নৌ বাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়৷ র‌্যাব দাবি করেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐ তিন কর্মকর্তাকে অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলা যাবে না৷ হাইকোর্টের নির্দেশে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি এবং র‌্যাবের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে৷ কিন্তু হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ রবিবার তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়৷ তাদের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনো না থেকে থাকে তাহলে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়৷ আদালত তার আদেশে বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া না গেলে তো তাদেরকে বরখাস্ত করা হতো না৷'' ফলে র‌্যাবের অবস্থান আর ধোপে টিকছে না৷

Islamistische Proteste in Bangladesh
বিএনপি সরাসরি র‌্যাবের প্রয়োজনীয়তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/dpa

এই নির্দেশ এখন কার্যকর হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল কলেছেন, ‘‘হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷'' তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রবিবার রাতে বলেছেন, ‘‘র‌্যাব জনগণের নিরাপত্তার জন্য গঠন করা হয়েছিল৷ তখন তারা ভালো কাজ করেছিল৷ কিন্তু এখন তাদেরকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে সরকার৷ তারা এখন গুম-খুনে জড়িয়ে পড়েছে৷ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করছে, অত্যাচার নির্যাতন করছে৷ তাই অবিলম্বে এই বাহিনী বাতিলের দাবি জানাচ্ছি৷''

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে৷ তদন্তের স্বার্থে প্রশাসন এবং র‌্যাব-পুলিশকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সরকার নীরব বসে থাকেনি৷'' তবে র‌্যাব বাতিল প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একদিন আগে বলেছেন, ‘‘ব়্যাব তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করছে৷ কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায় না৷''

কিন্তু তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বিদায় দিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণের প্রক্রিয়ায় এখন আর কাজ হচ্ছে না৷ র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হচ্ছে৷ আর এ নিয়ে সরকার এখন নানামুখী চাপে রয়েছে৷ র‌্যাবের সঙ্গে সরকারের এক মন্ত্রীপুত্রের নাম আসায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে৷

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘র‌্যাব তার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে৷ এই বাহিনীর সদস্যরা এখন তাদের মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে ক্রসফায়ার, অপহরণ, খুন এবং গুমে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে৷ ফলে এই বাহিনীকে চালিয়ে রাখা কঠিন৷'' সরকার চেষ্টা করলেও তা কতদূর সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘এই বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে৷ ২০০৪ সালে র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১,৪০০ মানুষ ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন৷ আর তাদের হাতে গত ৪ মাসে অপহৃত হয়েছেন ৫৩ জন৷ তাই এই বাহিনীর জবাবদিহিতা আছে বলে মনে হয় না৷''

তাঁর মতে, ‘‘যদি র‌্যাবকে রাখতেই হয় তাহলে র‌্যাবের শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত বদলে ফেলতে হবে৷ আর এপর্যন্ত র‌্যাবের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তা স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ র‌্যাবের সব অফিস এবং ক্যাম্প একটি নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ র‌্যাব তার বিভাগীয় তদন্তের নামে এতদিন উল্টো র‌্যাব সদস্যদের বেআইনি কাজকে ধামাচাপা দিয়েছে,'' বলে মনে করেন নূর খান৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য