রোদ উঠেছে – চলো, চলো ‘গ্রিল’ করি
মাংস গ্রিল করার গন্ধ পেলেই যেন খিদে ভাব হয় আর জিবে জল আসে, গ্রিল করা অনেকটা দেশের পিকনিকের মতো৷ জার্মানিতে গ্রীষ্মকালের সবাই অপেক্ষায় থাকে – কবে , কোথায় গ্রিল পার্টির আয়োজন হবে৷কারণ জার্মানরা মাংস খেতে খুব ভালোবাসে৷
কয়লায় পোড়ানো মাংস
গ্রিল বা বার্বিকিউ, অর্থাৎ কয়লায় পোড়ানো মাংস, সেটাও আবার বাইরে খোলা আকাশের নীচে৷ এরকম কোথাও থেকে গ্রিল করার গন্ধ পেলেই যেন খিদে খিদে ভাব হয় আর জিবে জল আসে, তাই না? যা অনেকটা আমাদের দেশের পিকনিকের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ জার্মানিতে গ্রীষ্মকালের সাথে গ্রিল করা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে৷ সবাই অপেক্ষায় থাকে – কবে কখন, কোথায় গ্রিল পার্টির আয়োজন হবে৷
অনিশ্চিত আবহাওয়া
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়েছে – একথা আজ আর কারো অজানা নয়৷ আবহাওয়াবিদদের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের খবরও আর সেভাবে আজকাল মিলছে না৷ তাই গ্রিলের সব আয়োজন ঠিক থাকলেও প্রায়ই বাঁধ সাধে আবহাওয়া৷ হঠাৎই নামে বৃষ্টি, সে কারণেই বেশি আগে থেকে আর কাউকে গ্রিলের আয়োজন করতে তেমন শোনা যায় না৷
জার্মানদের প্রিয় খাবার ‘সসেজ’
আবহাওয়া যেমনই থাকুক, ক্যালেন্ডারের পাতায় গরম আসার ঠিক আগে থেকেই বিভিন্ন দোকানে গ্রিলের কয়লা থেকে শুরু করে নানা সরঞ্জাম সাজাতে দেখা যায়৷ তাপমাত্রা খানিকটা বাড়ার পর থেকে মাংশের দোকানগুলোতে শুধু গ্রিলের জন্য আলাদাভাবে মাংস বিক্রি হয়৷ তবে জার্মানদের কাছে মাংসের ‘সসেজ’ খুবই প্রিয় খাবার৷ সাথে অবশ্যই পানীয় হিসেবে থাকতে হবে জার্মান বিয়ার৷
মিলে মিশে খাওয়া
কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা গেছে এই সসেজ তৈরি করা হতো শুধুমাত্র শুয়োরের মাংস দিয়ে৷ আজকাল সব দোকানে না হলেও অনেক জায়গাতেই গরুর মাংসের ‘সসেজ’ পাওয়া যায়৷ মুসলমানরা সেভাবে শুয়োরের মাংস খায়না, বলা বাহুল্য জার্মানিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ৷
খোলা আকাশের নীচে
কেউ গ্রিল করে নিজের বাগানে, বাগান না থাকলে বাড়ির বারান্দাতেও অনেকে গ্রিল করে৷ বিভিন্ন পার্কেও গ্রিল করার জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা৷ অনেকে তো নিজের ছোট্ট গ্রিল করার মেশিনটা নিয়ে পার্কের কোনো এক কোণায় ক্ষণিকের রান্নাঘর বানিয়ে ফেলেন৷ গ্রীষ্মে গ্রিল করা হবে না তা হতে পারে না, বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের সকলকে নিয়ে কয়লার আগুনে মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার আনন্দ যে একেবারেই আলাদা!
জার্মানরা মাংস বেশি খায়
শুধু ‘সসেজ’ নয়, গ্রিলের জন্য ভেড়ার মাংশও বেশ জনপ্রিয়৷ এমন কি আস্ত ভেড়াও গ্রিল করা হয়৷ গ্রিলের জন্য কোনো মাংসই বাদ পড়েনা, গরুর মাংস, মুরগি সবই৷ কারণ জার্মানরা বছরে গড়ে ৬০ কেজি মাংস খায়৷
গ্রিল সবজি খেতে মজা
তবে শুধু মাংশ নয়, আজকাল খুব স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই গ্রিলের জন্য বেছে নেয় নানা রকম সবজি৷ তবে সবজি আর সালাদ খাওয়ায় জার্মান নারীরা এগিয়ে আছে৷
নিঃসঙ্গ হয়েও একা নয়
সঙ্গী নেই বলে কি আর স্বাদ নেই ! ‘একলা চলরে’..তেই বিশ্বাসী সে৷ তাই সমুদ্র সৈকতে গ্রিলের যন্ত্রটিকে সঙ্গে করে নিয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ আর গ্রিল করা একসাথেই হচ্ছে৷
খাও দাও আর গল্প করো
মনে হয় বান্ধবীদের অনেক কথা জমে আছে তাই গ্রিল করার মধ্য দিয়ে মনের কথা খুলে বলার জন্য এই আয়োজনকে বেছে নিয়েছে ওরা৷ যদিও গ্রিলের কাজটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেদেরই করতে দেখা যায় জার্মানিতে৷
যেটাই করুন, ভালোভাবে করবেন
গ্রিল মানেই কিন্তু শুধু গ্রিল নয়৷ এতে পুরো স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত বলে মনে করেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা৷ আর সেজন্যই রয়েছে গ্রিল করা শেখার জন্য কোর্সের ব্যবস্থা৷ সেখানে মাছ, মাংস, সবজি গ্রিল করার নিয়ম-কানুন শেখানো হয়৷ কোনটা কি সস দিয়ে খেতে হয় সে বিষয়েও দেওয়া হয় নানা ‘টিপস’৷
সবার জন্যই ব্যবস্থা
আমরা প্রায় সবাই মনে করি কয়লার চুল্লিতে রান্না করা খাবার খেতে স্বাদ হয়৷ তবে এতে ঝামেলাও কিন্তু কম নয়৷ খেতে মজা একটু হলেও খুব সহজে গ্রিল করা যায় গ্যাসের গ্রিলে৷ খাওয়ার পরে পরিষ্কার করার ঝামেলা এড়াতে অনেকে পছন্দ করেন গ্যাসের গ্রিল৷ যারা একেবারেই ঝামেলা পছন্দ করে না, কিন্তু গ্রিল খাওয়ার দারুণ ইচ্ছে, তাদের ঘরে পাওয়া যাবে ইলেকট্রিক গ্রিলের মেশিন৷
মজার সালাদ
গ্রিলের সাথে সবচেয়ে বেশি জমে নানা ধরণের মজার মজার সালাদ৷ শুধু সবুজ পাতা বা টমেটোর সালাদ নয়৷ জার্মানদের প্রিয় বিখ্যাত আলুর সালাদ, নুডলস সালাদ, কুসকুস সালাদ ইত্যাদি৷ গ্রিলের সাথে পরিবেশন করা হয় নানা রকম মজার মজার রুটিও৷