1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোগীর বাঁচার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই মেনে নিতে হবে চিকিৎসককে

১৯ জুন ২০০৯

জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি লিখিতভাবে বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে না চাইলে চিকিৎসকদের সেই ইচ্ছা মেনে নিতে হবে – এমনকি তার ফলে রোগীর মৃত্যু হলেও এই বিধান মেনে চলতে হবে৷

https://p.dw.com/p/IUPP
রোগীর বাঁচার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সংক্রান্ত বিবৃতির জন্য এমন ফর্ম পূরণ করা যেতে পারেছবি: AP

সংসদের সিদ্ধান্ত

বহু তর্ক-বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার সাংসদরা এই মর্মে আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছেন৷ দলমতনির্বিশেষে নিজেদের বিবেক অনুযায়ী সাংসদরা এদিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ উপস্থিত ৫৫৫ জন সাংসদের মধ্যে ৩১৭ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন – বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৩৩ জন৷ ৫ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন৷ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাংসদরা এই ব্যবস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে যাবতীয় যুক্তি খতিয়ে দেখেন৷ এক সাংসদ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মৌলিক অধিকারের প্রতি নজর আকর্ষণ করেন৷ তাঁর মতে, জীবনের অন্তিম মূহূর্তের ক্ষেত্রেও সেই অধিকার খাটে৷ পাল্টা যুক্তি হিসেবে আরেকজন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে৷ এক সাংসদের মতে, সংসদের এই সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কার্যক্ষেত্রে রোগীর ইচ্ছা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থাও রাখতে হবে৷ এই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় হলে চলবে না৷

প্রেক্ষাপট

দুরারোগ্য ব্যাধিতে যাঁরা ভুগছেন বা এমন ব্যাধি হলে কী করা উচিত, এবিষয়ে যাঁরা এখন থেকেই ভাবনা-চিন্তা করছেন, তাঁদের কথা ভেবেই আইনের ক্ষেত্রে স্পষ্টতা আনতে চাইছেন সাংসদরা৷ কোনো ব্যক্তি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে অসাড় অবস্থায় হয়তো নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন না৷ অথবা কেউ যদি এখন থেকেই স্থির করেন, এমন অবস্থা হলে চিকিৎসা অযথা প্রলম্বিত না করে মৃত্যুই বাঞ্ছনীয়, তিনি সেটা আগেভাগেই লিখিতভাবে স্থির করতে পারেন৷ সেরকম অবস্থা দেখা দিলে আত্মীয়-স্বজন ও চিকিৎসকদের রোগীর ইচ্ছাই মেনে নিতে হবে৷ এমনকি রোগের চিকিৎসা সম্ভব হলেও রোগীর ইচ্ছাকেই চূড়ান্ত মর্যাদা দিতে হবে৷ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই জার্মানিতে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ লিখিতভাবে নিজেদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন৷ সংসদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তাঁদের সেই ইচ্ছা আইনী বৈধতা পাবে৷

Sterbehilfe, Hospiz, Morphium
এমন অবস্থায় স্বেচ্ছামৃত্যু বাঞ্ছনীয় – নাকি যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ?ছবি: dpa

কার্যক্ষেত্রে কী হবে

বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জার্মানিতে যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রোগশয্যায় যদি নিজের মত প্রকাশের অবস্থায় না থাকেন, সেক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কী করা উচিত – সেটা আগেভাগেই লিখিতভাবে জানাতে পারবেন৷ রোগীর দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন অথবা রোগী নিজেই যদি কাউকে মনোনীত করে থাকেন – এমন ব্যক্তির দায়িত্ব হবে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে সেই লিখিত নির্দেশ পালন করা৷ এর পূর্বশর্ত হলো, রোগীর বিবৃতিতে যে পরিস্থিতির উল্লেখ রয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তার সঙ্গতি থাকবে হবে৷ অতএব অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় এই লিখিত নির্দেশ দিতে হবে৷

প্রতিক্রিয়া

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রিগিটে স্যুপ্রিস সংসদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, অবশেষে রোগীর ইচ্ছার বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট আইনী কাঠামোর সৃষ্টি হলো৷ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতারা অবশ্য বিষয়টি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ যেমন প্রশ্ন উঠছে, কোমা থেকে জেগে ওঠার সময় রোগী অসাড় অবস্থায় থাকলেও তার পরিণতি মৃত্যু নাও হতে পারে৷ এমন অবস্থায় কি কারো চিকিৎসা বন্ধ করা উচিত? রোগী নিজে সেক্ষেত্রে কী চাইতেন, তা বলা কঠিন৷ চিকিৎসকদের এক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নীতিগতভাবে স্পষ্ট আইন প্রনয়ণকে স্বাগত জানানো হয়েছে৷ তবে গোটা প্রক্রিয়ায় এমন বিবৃতি লেখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনার কোনো বিধানের উল্লেখ না থাকায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷

প্রতিবেদক: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম