1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুয়ান্ডার মহিলা সাংসদরা পুরুষদের চেয়ে সংখ্যায় এগিয়ে

মারিনা জোয়ারদার২ অক্টোবর ২০০৮

দু সপ্তাহ আগে রুয়ান্ডায় শুরু হয়েছে সংসদীয় অধিবেশন৷ প্রথম দিনের অধিবেশনেই একটি সাধারণ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়৷ দেখা যায় ৫৩ জন সাংসদদের মধ্যে মহিলা সাংসদই হচ্ছে ২৪ জন

https://p.dw.com/p/FTCq
এসব মহিলা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন মহিলা এম পিদেরছবি: AP

এগনেস মুকাবারাংগা একজন সাংসদ এবং আগামী দিনগুলোতেও তাঁকে সাংসদ হিসেবে দেখা যাবে৷ বেশ গর্বের সঙ্গেই তিনি জানালেন, আমরা এ মুহুর্তে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র দেশ৷ রুয়ান্ডার জাতীয় সংসদে অর্ধেকেরও বেশী হচ্ছে মহিলা সাংসদ৷ আমরা এদিক থেকে

এগিয়ে রয়েছি৷

৩৯ জন মহিলা এবং ৪১ জন পুরুষ – এই হচ্ছে সংসদের চিত্র৷ কয়েক বছর আগে রাজদানী কিগালীতে সংসদের নিম্নকক্ষে এভাবেই নির্বাচিত হয়ে সাংসদের আসনে নিজেদের আসীন করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত রুয়ান্ডার মহিলারা৷ ২৪টি আসনের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকার পরও ১৫ জন মহিলা সরাসরি নির্বাচিত হন সাংসাদ হিসেবে৷ সাধারণ নির্বাচনে তারা পুরুষ প্রতিদ্বন্দীদের পরাজিত করে নিজেদের এতদূর নিয়ে এসেছে৷বোঝাই যাচ্ছে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে৷

রুয়ান্ডার জাতীয় সংসদে মহিলারা নিজস্ব গতিতে চলছে, তাদের অভিমত ব্যক্ত করছে - এ যেন এক নতুন রুয়ান্ডা৷ মুকাবারাংগা আরো জানান, মহিলারা সবসময়ই সমঝোতা করতে চায়, এক ধরনের বোঝাপড়ায় আসতে চায়, সবকিছুর সহজ সমাধানের দিকে সবসময়ই তাদের ঝোঁক থাকে৷ এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত রুয়ান্ডায় এই মুহুর্তে এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী৷

Opfer des Völkermordes in Ruanda Vorwürfe gegen Frankreich
গণহত্যার শিকার রুয়ান্ডা - কে ভুলিয়ে দেবে ?ছবি: AP

মুকাবারংগা তুলে ধরেন আরো স্পষ্ট চিত্র

তিনি বললেন, আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা বলি একজন মহিলা হল নিয়ামবিংগা৷ এর অর্থ হল সে হচ্ছে একটি সেতুর মত৷ সেতু যা সমাজ এবং পরিবারকে একত্রে নিয়ে আসে৷ মানুষকে জড়ো করে৷ কোন বাড়ীতে মেহমান এলে বাড়ীর গৃহকত্রীকেই সর্বপ্রথম স্বাগত জানাতে হবে৷ মেহমানদারীর দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে তার হাতেই৷

৪৬ বছর বয়স্ক রাজনীতিবিদ, আইনজীবি, গৃহিনী এবং চার সন্তানের মা মুকাবারাংগা৷ সবকিছু হাতের মুঠোয় রেখেই তিনি গড়েছেন তাঁর ক্যারিয়ার এবং বেশ সফলভাবেই৷ রুয়ান্ডার যুদ্ধে পুরুষরা প্রায় নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যায় অথবা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়৷ তখন মহিলারাই এগিয়ে আসে দেশকে সচল করতে৷ তখন সবার দাবী, সময়ের দাবী ছিল একটাই – শক্ত হাতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সবাইকে নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা৷ মুকাবারাংগা ব্যক্ত করলেন তারঁ তিক্ত অভিজ্ঞতা

Kids in Ruanda
নতুন প্রজন্মের হাতে ভিন্ন এক রুয়ান্ডা - এরাই রুয়ান্ডার ভবিষ্যত্‌ছবি: Deutsche Welle/Mark Caldwell

আক্ষেপের সঙ্গে তিনি জানালেন, পুরুষ,অল্প বয়স্ক ছেলে এবং যুবক – সবাই ছিল গণহত্যার মূল লক্ষ্য৷ তাদের হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে৷ যার কারণে আমরা বাধ্য হয়েছি এগিয়ে আসতে৷ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি, দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি৷ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, দেশের পুনর্গঠন সবকিছুর জন্যই আমাদের লড়তে হয়েছে৷ রুয়ান্ডার মহিলারা এসব ইতিবাচক পরিবর্তনে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷

এত সাফল্যের পরও নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ভুলে যাননি এগনেস মুকাবারাংগা৷ ঐতিহ্যবাহী সিল্কের পোশাক, মুক্তার মালা সব সঙ্গে নিয়েই তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন৷ তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে কিছুটা হিমশিম তাকে খেতেই হচ্ছে৷ তিনি প্যান আফ্রিকান সংসদের একজন সক্রিয় সদস্য, এবছর জিম্বাবুয়ের নির্বাচনে ছিলেন একজন পর্যবেক্ষক এবং রুয়ান্ডার আইজিবী সমিতির একজন সদস্য৷ রুয়ান্ডার গণহত্যা বিচারের মূল দায়ভার দেশের আইনের ওপরই বর্তায়৷ নিষ্প্রাণ জীবণ কেড়ে নেয়া এবং দোষীদের বিচার করা, দোষী সাব্যস্ত করা – এসব নিয়ে রুয়ান্ডা ভীষণভাবে ব্যস্ত৷ আইনজীবি মুকাবারাংগার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, দশ বছরে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে৷ কিন্তু এখনো আমাদের অনেক দূর যাওয়া প্রয়োজন, আমাদের সামনে পড়ে রয়েছে বিস্তৃত, কন্টাকাকীর্ণ পথ৷

যদিও রুয়ান্ডার যুদ্ধে এগনেস মুকাবারাংগার পরিবারের কেউও মারা যায়নি কিন্তু তার কয়েকজন ভাই হারিয়ে গেছে চিরতরে৷ নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে৷ তাঁর জন্য এসব ভুলে যাওয়া এত সহজ নয়৷ তখন যারা গণহত্যার জন্য দায়ী ছিল তাদের আজ সাহায্য করা হচ্ছে৷ মুকাবারাংগা চেষ্টা করছেন সত্যকে তুলে ধরতে, নির্মম ইতিহাসকে সাক্ষী করে দেশকে, নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে৷ এ ধরনের অমানবিক, নির্মম হত্যাকান্ড যেন রুয়ান্ডার আর কখনো স্পর্শ না করে৷