রাশিয়ায় মানবাধিকার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত
১৩ আগস্ট ২০০৯রাশিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জনগণ এর পূর্ব ইউরোপীয় অংশে, উরাল পর্বতমাল পশ্চিমে, বাস করেন৷ রাশিয়া বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ এভাবেই পরিচয় দেয়া হয় রাশিয়ার৷ কিন্ত সেই রাশিয়ায় আজ মানবাধিকার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত৷
রাশিয়াতে একের পর এক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী হত্যা ও নির্যাতেনের ঘটনায় ধিক্কারের ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বে৷ অল্প কিছুদিন আগে রাশিয়ার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নাতালিয়া এস্তেমিরোভা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন ৷ চেচনিয়ার রাজধানী গ্রজনি থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়৷ তিনি নিহত সাংবাদিক আনা পলিটকভস্কায়ার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন৷
মানবাধিকার সংগঠন এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের রির্পোট অনুসারে উত্তর ককেসাস অঞ্চলে চরম ভাবে লংঘিত হচ্ছে মানবাধিকার৷ গুপ্ত হত্যা যেমন সেখানে থেমে নেই, তেমনই আছে নানা ধরণের নির্যাতনের ঘটনা৷ রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনা করে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এই রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, জর্জিয়ার সঙ্গে লড়াইকালে সেখানকার বেসামরিক মানুষের উপর নানা ধরণের নির্যাতন চালায় রুশ সৈন্যরা৷
রাশিয়ার সরকারি বাহিনী বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকদের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে৷ সরকার বিরুদ্ধবাদীদের নানা ভাবে নাজেহালও করছে তারা৷ এছাড়া বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে যারা অভিযুক্ত তাদেরকেও আটক অবস্থায় নানা নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি৷ তারা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তারা বণর্বাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা কথা বললেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্ণবাদী হামলা থেমে নেই৷ বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাও কখনো কখনো হুমকির সম্মুখিন বলেও দাবি৷
এমনি পরিস্থিতিতে রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়ালের হয়ে চেচনিয়া প্রদেশের রাজধানী গ্রজনিতে কাজ করছিলেন নাতালিয়া এস্তেমিরোভা৷ চেচনিয়া যুদ্ধ চলাকালে রুশ সেনাবাহিনীর নির্মমতার বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন তিনি৷ আততায়ীর হাতে নিহত সাংবাদিক আনা পলিটকভস্কায়া যখন চেচিনিয়ায় গিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করছিলেন তখন তাঁকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন এস্তেমিরোভা৷
এই হত্যাকান্ডের পর চারিদিকে ধিক্কার উঠেছে ৷ মার্কিন সরকারও জানিয়েছে তীব্র নিন্দা৷ তাদের মতে, এই ধরণের জঘন্য ঘটনা রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজের জন্য একটি শীতল বার্তা বহন করছে৷ একই সঙ্গে প্রমাণ করছে যে গত কয়েক মাসে ককেসাস অঞ্চলে নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি হয়েছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভেও কঠোর সমালোচনা করেছেন এই ঘটনার৷ অবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুটিনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি৷ মানবাধিকার কর্মী হত্যার ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতি দেশ সুইডেনও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হত্যাকান্ডের জন্য আঙ্গুল তুলেছে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকেই৷ তাদের অভিযোগ, বিগত মাসগুলোতে চেচনিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে৷
প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক