1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা

দেবারতি গুহ৩০ ডিসেম্বর ২০০৮

১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানে, শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা বাদে তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করে পাকিস্তান বাহিনী৷

https://p.dw.com/p/GP3I
ভোটার শেখ হাসিনাছবি: Mustafiz Mamun

স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান নেতা, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের মৃত্যুতে, নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে দলের নেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে৷

Mujibur Rahman
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি: picture-alliance / dpa

রাজনীতিতে আত্বপ্রকাশ

১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষনা করে আওয়ামী লীগ৷ ১৯৮৬ সালে আবার ঐ সামরিক শাসকের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তারা৷ কিন্তু, তারপর সেই এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা৷ ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্যও করেন তিনি৷ আর এরপরই, অর্থাৎ ১৯৯১ সালে আওয়ামী-লীগ বাংলাদেশের তৎকালিন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়৷

১৯৯৬ সালে তিনি তত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হাসিনা৷ কিন্তু, এতো কিছুর পরও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে হেরে যায়৷

দায়ভার যখন অন্যের ঘারে

শেখ হাসিনা দলের এই পরাজয়ের জন্য দায়ী করেন তারই মনোনীত তত্‍কালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে৷ এরপর, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৪-এর জুন মাস পর্যন্ত সংসদ বর্জন করে এবং সব রকম গণতান্ত্রিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকে৷

Bangladesch Wahlen 2008
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক হাতে সমর্থকরাছবি: Mustafiz Mamun

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথম গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে৷ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল ঘোষণা করে তাকে সেখানে রাখা হয়৷ আর তার বিরুদ্ধে জারি করা হয় দু-দুটি মামলা৷ একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য হত্যা মামলা এবং অন্যটি তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা৷ শারিরিক অসুস্থতার কারণে বিদেশে গিয়ে, অবশেষে ২০০৮-এর ৬-ই নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি৷

মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জানান, মহাজোট গঠন করেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে৷ তার ভাষায়, আমরা কোন প্রতিহিংসা বা সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না৷ দেশ আজ চরম সংকটে আছে৷ তাই এই সংকট থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে৷ আর নির্বাচন বানচালের জন্য যারা চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি৷ প্রথমে প্যারোলে মুক্তি আর তারপর জামিন পান আওয়ামী লীগ নেত্রী৷ ততোদিনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই আবারো শুরু হয়ে গেছে৷

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

অর্থাৎ, শেখ হাসিনা চিরচরিত সেই ক্ষমতার লড়াই-এ নাম লেখান৷ আর এ ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়৷ ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে, যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র মানেই হলো দলা-দলি, সমঝোতা, আপোস, ধর্মঘট, অবরোধ কর্মসূচী আর হরতাল মূখর৷ তাই নির্বাচন প্রচারাভিযানে বিএনপি-র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের বুলি মানুষের মননে আদৌ যে দাগ কাটতে পারবে - সে নিয়ে সংশয় থেকে যায়৷

Tagelöhner in Dhaka, Bangladesch
বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে৷ তাই নির্বাচনে জেতার পর এবার হাসিনার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়তো বাংলাদেশকে বিশ্ব আর্থিক মন্দার হাত থেকে রক্ষা করা৷ছবি: picture-alliance/ dpa

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা

কিন্তু তারপরও জয়ের লাট্টু ঘুরতে ঘুরতে শেখ হাসিনার সামনে নতজানু হয়৷ এর কারণ হিসেবে চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যার্থতা এবং শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন-ও পান তিনি৷ নির্বাচনে মহাজোটের বিপূল সংখ্যা গরিষ্ঠতা আর জামাতের ভোটের আকাল মহাজোটকে সমর্থনই করে৷ নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ ও সহনশীল করে তোলার অঙ্গিকার, ২০০১ সালের পরাজয়ের ওপর মলম হিসেবে কাজ করে৷

বিশ্ব আর্থিক সংকটের সামনে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে৷ তাই নির্বাচনে জেতার পর এবার হাসিনার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়তো বাংলাদেশকে বিশ্ব আর্থিক মন্দার হাত থেকে রক্ষা করা৷ চ্যালেঞ্জ সঠিক পদ্ধতিতে গণতন্ত্রের বিস্তার করাও৷ আর তার জন্য আর যাই হোক সামরিক শাসন যে নৈব নৈব চ - তা বলাই বাহুল্য৷ কারণ, যে কোন অনির্বাচিত সরকারই দেশকে চলমান সংকট থেকে মুক্তি দিতে অক্ষম৷ আর হাসিনার মহাজোট তো নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে৷

তাই মহাজোট না পারলে - আর কে পারবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশকে ত্বরান্নিত করতে?