1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিজয় দিবসের অঙ্গীকার'

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৬ ডিসেম্বর ২০১৩

স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে আর কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না৷ যে-কোনো মূল্যে তাদের প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠেও যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার৷

https://p.dw.com/p/1AaNb
Bangladesch Nationalfeiertag 2013
ছবি: DW/M. Mamun

স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তিতে সোমবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়ার পর সবার কণ্ঠেই ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার৷ বিজয় দিবসের ঠিক তিন দিন আগে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় এবারের দিনটি অন্যভাবে পালিত হচ্ছে৷

এদিকে ‘গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস'এর অনুমোদিত পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে এদিন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা' তৈরি হয়েছে৷ ২৭ হাজার ১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী এতে অংশ নেন৷ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো কণ্ঠে একসঙ্গে উচ্চারিত হলো ‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি৷''

স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

সোমবার ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা৷ সকাল ছয়টা ৩৯ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিন বাহিনীর একটি দল শহিদদের প্রতি জানায় সশস্ত্র সালাম৷ বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর৷ কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা৷ পরে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী৷ শহিদদের উদ্দেশে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা, তিন বাহিনীর প্রধান ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নামে জনস্রোত৷ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদিমূল৷

বিরোধী নেত্রীর শ্রদ্ধা

সকাল আটটা পাঁচ মিনিটে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ এ সময় তাঁর সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন৷

‘এখনই প্রতিরোধের সময়'

রাজধানীর মিরপুর থেকে স্মৃতিসৌধে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর হোসেন বললেন, ‘‘জামায়াত শিবির যেভাবে দেশে হত্যাযজ্ঞ, নাশকতা চালাচ্ছে তাতে আর সহ্য করা উচিত হবে না৷ এখনই তাদের প্রতিরোধ করতে হবে৷'' পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘‘সরকার যদি যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের রুখতে না পারে তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের জমা দেয়া অস্ত্র যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়৷ মুক্তিযোদ্ধারাই আবার তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে৷''

স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল মতিন বললেন, ‘‘লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না৷ তাই সবাইকে নতুন করে শপথ নিতে হবে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের৷''

‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসী সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর দেখতে চায়৷ একজনের ফাঁসি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না৷

‘সবচেয়ে বড় পতাকা’

বিজয়ের এই দিনে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ দুপুরে লাল আর সবুজ বোর্ড মাথার ওপর তুলে ধরেন ২৭ হাজার ১১৭ জন কিশোর-তরুণ৷ শেরেবাংলা নগরের প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে সূর্যের দিকে মুখ তুলে হাসলো বাংলাদেশের পতাকা৷

গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অনুমোদিত পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা' তৈরির এ আয়োজনের উদ্যোক্তা মোবাইল ফোন অপারেটর রবি৷ আর ‘লাল-সবুজের বিশ্বজয়' শিরোনামের এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী৷

রবি'র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তালাত কামাল জানান, ‘‘গিনেজের সব নিয়ম মেনে সুষ্ঠুভাবে মানব পতাকা তৈরি হলো কি না, তার প্রমাণ হিসাবে তথ্য ও ছবি পাঠাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিট প্রতিষ্ঠান৷ নতুন রেকর্ড হলে গিনেজ কর্তৃপক্ষই সে ঘোষণা দেবে৷''

লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জায়গায় লাখো কণ্ঠে একসঙ্গে উচ্চারিত হলো ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটিই একাত্তরের রণাঙ্গণে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছিল, শক্তি দিয়েছিল – যা পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়৷

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত ‘বিজয় ২০১৩' মঞ্চে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে এই গানে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত লাখো জনতা৷ একাত্তরেও ঠিক এই সময় আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷