1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যালেরিয়া নির্মূলে আরেক ধাপ অগ্রগতি

২২ মার্চ ২০০৯

বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষ রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একের পর এক বিজয় লাভ করেছে৷ এবার বোধ হয় ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধেও পুরোপুরি বিজয় আসতে যাচ্ছে৷ অন্তত অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মনে করছেন তেমন৷

https://p.dw.com/p/HHK9
ম্যালেরিয়ার জীবাণুছবি: DW-TV

তারা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বেশ কিছু দিক তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন৷ গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর জেম্স উইসটক৷ উল্লেখ্য, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি শিশু মারা যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতি বছর অন্তত ৫০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ৷

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সিডনীর ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজির আরেক প্রফেসর জন ডালটন৷ গবেষণায় জানা গেছে, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং তার চিকিৎসা দুটোই সম্ভব৷ গবেষণার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বা প্যারাসাইটের শেষ ধাপে জীবাণুকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে৷ অর্থাৎ জীবাণু যেন কোন অবস্থাতেই বেঁচে থাকতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে জীবাণুর বেঁচে থাকার উপকরণগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে৷ সহজ ভাবে বলা যেতে পারে প্রতিটি জীবাণুর বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ কিছু উপকরণের প্রয়োজন, সে উপকরণে বাধা পড়লে বা ঘাটতি পড়লে জীবাণু টিকে থাকতে পারে না৷ বিশেষ এই উপকরণগুলোর ঘাটতি ঘটানো হবে যার ফলাফল হিসেবে ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারবে না, রোগটি চলে আসবে নিয়ন্ত্রণে৷ গবেষকরা জীবাণুকে মেরে ফেলার এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন process of Starvation সোজা বাংলায় না খাইয়ে জীবাণুগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলার প্রক্রিয়া৷

Illustration Kinder und Müttersterblichkeit
ম্যালেরিয়ায় শিশুরাই বেশী আক্রান্ত হয়ছবি: picture-alliance/ dpa

প্রফেসর উইসটক বলেন, যে গবেষণা চালানো হয়েছে তার সূত্র ধরেই বৈজ্ঞানিকভাবে এমন কিছু ওষুধ আবিষ্কার সম্ভব হবে যা দিয়ে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা যাবে৷ তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, তারা হুমকির সম্মুখীন৷ এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তবে গবেষণা সফল হলে বিশ্বে সংক্রামিত কোটি কোটি মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত হবে৷

ম্যালেরিয়া রোগের এই সাফল্যের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে৷ মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিজ্ঞানী ডঃ শিনা ম্যাক গোয়ান জানান, রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিভাবে জীবাণুর উপকরণে ঘাটতি ফেলা যায় বা জীবাণুকে অভুক্ত রাখা যায় সে বিষয়ে একটি ধারণা আমরা পেয়েছি৷ যে এনজাইম নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে তার নাম Pfa-M1. এই এনজাইমই ম্যালেরিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে৷

ম্যালেরিয়া নামক এই রোগটিতে কিভাবে একজন মানুষ আক্রান্ত হয়? ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত একটি মশা মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে প্রবেশ করিয়ে দেয়৷ জীবাণু তখন শরীরের রক্তের প্রোটিন কোটকে ভেঙ্গে ফেলে৷ যার ফলে জীবাণু বেঁচে থাকার জন্য তার প্রয়োজনীয় উপকরণ রক্ত থেকে নিতে পারে৷ ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবেশ করে রক্তের মধ্যে বিশেষ একটি কম্পার্টমেন্টে যা ডাইজেসটিভ ভ্যাকিউল নামে পরিচিত৷ ডাইজেসটিভ ভ্যাকিউল দেখতে একটি থলির মত৷ যে এনজাইম নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে গবেষকরা, যে এনজাইম ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তা ডাইজেসটিভ ভ্যাকিউলের বাইরে অবস্থিত৷ যার কারণে গবেষকরা মনে করছে সরাসরি সেখানে আক্রমণ চালানো বা তা নিষ্ক্রিয় করা সহজ হবে৷ ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংসের এই আবিস্কারকে গবেষকরা দেখছেন রোগটির চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ আবিসষ্কারের প্রথম ধাপ হিসেবে৷

Stechmücke Malaria
ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মশা মানব দেহে ঢুকিয়ে দেয় ম্যালেরিয়ার জীবাণুছবি: picture-alliance /dpa

ম্যালেরিয়ার জীবাণুর নাম প্লাসমোডিয়াম৷ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মশার কামড় থেকে এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শরীরে৷ জীবাণু সরাসরি আঘাত হানে লিভারে, জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে যায় দ্রুত৷ লোহিত রক্ত কণিকাও আক্রান্ত হয় এই জীবাণুতে৷

ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বরে ভোগেন৷ সঙ্গে দেখা দেয় মাথাব্যথা এবং বমি৷ মশার কামড়ের সঙ্গে সঙ্গেই ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে না, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন সময়ের প্রয়োজন৷ অতি দ্রুত চিকিৎসা না করালে ম্যালেরিয়া জীবন নাশের কারণ হতে পারে৷

ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায়৷ তবে আফ্রিকা মহাদেশে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ আফ্রিকায় প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে অন্তত একজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত৷ দুঃখজনক হলেও সত্য যে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি এবং দ্রুত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সেখানে৷

প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারুক