ভারত
২৫ ডিসেম্বর ২০১২গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত জুড়ে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ রাতে ভুল বাসে উঠে পড়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই তরুণী এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখনো, কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে তাঁর৷ সোমবার তরুণীর বাবা গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে সবার উদ্দেশ্যে শান্তি বজায় রেখে তাঁর মেয়ের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমার মেয়ের জন্য আপনারা প্রার্থনা করুন৷ দয়া করে কোনো রকমের হিংসাত্মক কাজে জড়াবেন না৷ মেয়েটির এখন আপনাদের সমর্থন ও প্রার্থনার খুব দরকার৷ মেয়ে আমার বাঁচার জন্য লড়ছে৷ ও মনের দিক থেকে খুব শক্ত, বাঁচার ইচ্ছেটাও প্রবল৷ ওর সাহসিকতা বলে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই৷''
নিউজ টোয়েন্টি ফোর নেটওয়ার্কে প্রচারিত এই বিবৃতিতে আইনি জটিলতা এবং ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বার্থে তাঁরা বাবার নাম প্রকাশ করা হয়নি৷
এদিকে সোমবার অবশেষে টেলিভিশনে প্রচারিত হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষণ৷ সেখানে তিনি দিল্লির এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়েই মূলত কথা বলেন৷ বিক্ষুব্ধদের প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি নিজেও তিনটি মেয়ের বাবা৷ তাই এ ঘটনায় আমিও আপনাদের মতোই ব্যথিত৷ কথা দিচ্ছি, আমরা সুবিচার নিশ্চিত করবো৷''
গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে অসংখ্য বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন পুলিশের লাঠিপেটায়৷ দিল্লিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ভয়াবহ এক সংঘর্ষ হয় রবিবার৷ পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ীই সেই ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১০০ জন, যার মধ্যে ৬০ জনই পুলিশ৷
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এমন সংঘর্ষকে ‘দুঃখজনক' হিসেবে অভিহিত করে ভারতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টা করারও আশ্বাস দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘ঘটনাটা প্রতিবাদী মানুষ এবং পুলিশের সংঘর্ষের দিকে মোড় নেয়ায় আমি খুব দুঃখিত৷ এ দেশের প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সব রকমের চেষ্টা করবো এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি৷''
ভারতে নারীদের নিরাপত্তাসঙ্কট দিন দিন বাড়ছে৷ সারাদেশে যত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগেরই শিকার নারী৷ সরকারি হিসেব বলছে, গত বছর সারা দেশে যে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩২৯টি অপরাধকর্ম পুলিশ নথিবদ্ধ করেছে তার মধ্যে ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৫০টিরই শিকার নারী৷ রাজধানী দিল্লিও নারীর জন্য খুব বিপদজনক হয়ে উঠেছে৷ এ বছর সেখানে এ পর্যন্ত ৬৬১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের হার বেড়েছে প্রায় ১৭ ভাগ৷
এ অবস্থায় এক ছাত্রীর ধর্ষণের শিকার হওয়াকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ কংগ্রেস সরকার তা করছেও না৷ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ছয় জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ নেয়া হয়েছে বিচার দ্রুত শেষ করে তাঁদের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা৷ আগামী ৩ জানুয়ারি মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা৷ এদিকে সারা দেশের সব ধর্ষণ মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে পাঁচটি দ্রুত বিচার আদালত গঠন করা হয়েছে৷ আদালতগুলো কাজ শুরু করবে ২ জানুয়ারি থেকে৷ ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার যে দাবি উঠেছে, বিক্ষোভকারীদের সে দাবিও কংগ্রেস সরকার বিবেচনা করে দেখছে৷ বার্তা সংস্থাগুলো অন্তত সেরকমই জানাচ্ছে৷
এসিবি/জেএইচ (ডিপিএ, এএফপি)