1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মেয়েটাকে আগুনে ছুড়ে মারতে চেয়েছিল’

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৮ মার্চ ২০১৩

চার বছরের মেয়েকে আগুনে ছুড়ে মারতে গেলে ওর মা এসে কেড়ে নেয়৷ শুরু হয় মাকেই বেঁধে পেটানো৷ স্ত্রী-সন্তানের পর বৃদ্ধা মাকেও পেটায়৷ জামায়াত-শিবিরের হামলায় সব হারানো অমিয় দাশ বললেন বিভীষিকাময় সেই মুহূর্তগুলোর কথা৷

https://p.dw.com/p/185D1
Jamat-Shibir destroyed properties of religious minorities in Koiraj, Khulna, Bangladesh, März 2013; Copyright: Shayantani Twisha
ছবি: Shayantani Twisha

গত ৫ই মার্চ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা তাণ্ডব চালায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায়৷ অনেক ক্ষেত্রেই হামলার প্রধান শিকার ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন৷ তাঁদের বাড়ি-ঘর পোড়ানোর আগে সব লুট করে নেয়া হয়৷ ভেঙে ফেলা হয় মন্দির, মন্দিরের প্রতিমা৷ সব জায়গায় একই গল্প৷ নিষ্ঠুরতার একই চেহারা৷ এসব গল্পের ভেতরে যে মানবতার কত অপমান লুকিয়ে থাকে অমিয় দাশের একটি দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানলে কিছুটা অন্তত বোঝা যাবে৷

অমিয় দাশ সাক্ষাৎকার ১

সবকিছু লুটপাট করে, বাকি সব ভেঙে-পুড়িয়েও কিছু মানুষের নিষ্ঠুরতা দেখানোর বাকি থাকে৷ আতঙ্ক ছড়াতে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিতে হয় চার বছরের শিশুকে৷ জামায়াত-শিবিরের উন্মত্ত কর্মীদের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে কাঁচামালের ব্যবসায়ী অমিয় দাশের স্ত্রী হন অকথ্য নির্যাতনের শিকার৷ তারপর বাবা-মা৷ সেখানেই শেষ নয়, হামলাকারীরা চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘‘পুজো মারাও শুয়োরের বাচ্চারা, পুজো মারাও! পুজো করিয়ে দিচ্ছি তোদের জন্মের মতো৷'' গানপাউডারে বাড়ি-ঘর পুড়ছে৷ পুজো করার জন্য অমিয় দাশের পরিবারের দু-একজনের হয়ত আর বেঁচেই থাকা হতো না৷ সে অবস্থায় এগিয়ে আসেন এলাকার এক মুসলমান৷ সাধারণ ঘরের সাধারণ মানুষ৷ কিন্তু মানবতা তাঁর মাঝে আছে বলে, বিপর্যস্তের পাশে ঝুঁকি নিয়েও দাঁড়াতে পারেন বলে তিনি এগিয়ে এলেন ত্রানকর্তা হয়ে৷ তাতে বড় বাঁচা বেঁচেছেন অমিয় দাশ৷ বাবা হয়ে শিশু কণ্যার পুড়ে মরা অন্তত দেখতে হলো না!

Jamat-Shibir destroyed properties of religious minorities in Koiraj, Khulna, Bangladesh, März 2013; Copyright: Shayantani Twisha
অনেক ক্ষেত্রেই হামলার প্রধান শিকার ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন৷ তাঁদের বাড়ি-ঘর পোড়ানোর আগে সব লুট করে নেয়া হয়৷ ভেঙে ফেলা হয় মন্দির, মন্দিরের প্রতিমাছবি: Shayantani Twisha

কিন্তু কয়রার ধোপাপাড়ার পরিবারটি এখন দেখছে জীবনের আরেক রূপ৷ সহায়-সম্বলহীন পরিবারের রাত কাটে গোয়াল ঘরে৷ দিন কেটে যায় এর-ওর সহায়তায় কিছু খেয়ে, খোলা আকাশের নীচে৷ অমিয় দাশের বড় দুই মেয়ে পরিবারের ওপর নির্মমতার অভিশাপ নেমে আসার আগ পর্যন্ত স্কুলে যেত৷ আর যায়না৷ যেতে পারে না৷ মনে বড় ভয়৷ স্কুলের দিক থেকেই সেদিন ছুটে এসেছিল মানুষগুলো৷ মেরে ফেলতে চেয়েছিল ওদের৷ আবার যদি আসে? এবার যদি মেরেই ফেলে! স্কুলে না গেলেও কি রক্ষা আছে? ঘুমের মাঝেও শিশুমনে হানা দেয় মৃত্যুআতঙ্ক, মা-কে জড়িয়ে ধরে মেয়েরা কেঁদে কেঁদে বলে, ‘‘মা, ওরা আমাদের মেরে ফেলবে৷''

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ঢালাওভাবেই পুড়িয়েছে জামায়াত-শিবির৷ কে কোন দলের সমর্থক তা জানার দরকারই পড়েনি৷ এমনিতে বাংলাদেশের বেশির ভাগ হিন্দুই আওয়ামী লিগের সমর্থক৷ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাশবিক উন্মত্ততার শিকার হিসেবে অমিয় দাশের পরিবারকে বেছে নেয়ার একটা কারণ আছে৷ কারণটা এ সাক্ষাৎকারে অমিয় নিজেই বলেছেন৷ একবার তিনি মিছিলে গিয়েছিলেন!

সেই ‘অপরাধে' জামায়াত-শিবির এবং তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতদাতারা আবার হামলা চালাতে পারে – এই আশঙ্কা এখন আর অমিয় দাশের একার নয়৷ কয়রার এক নাম্বার ওয়ার্ডের সবাই আছেন এই আতঙ্কে৷ তবে কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই৷ অমিয় দাশ জানিয়েছেন, এলাকার সবাই এখন একতাবদ্ধ, প্রতি রাতে পাহারা দেয়া হয় পালা করে৷ সবাই এখন যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারীদের হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য