1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুর দুয়ার দেখে ফিরেছেন, তবু টানছে আফগানিস্তান

১৬ অক্টোবর ২০১৪

আফগানিস্তানে গুলিতে প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ক্যাথি গ্যাননের শরীর৷ তখনই মারা যায় তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী আনিয়া নিডরিংহাউস৷ ক্যাথি তবু আফগানিস্তানে যাবেন৷ আফগান জনগণ ও সাংবাদিকতার প্রতি দায়িত্ববোধের টান যে অদম্য!

https://p.dw.com/p/1DW3o
Anja Niedringhaus und Kathy Gannon Archivbild 2013 Zürich
ক্যাথি গ্যানন (বাঁ দিকে) ও আনিয়া নিডরিংহাউস (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/dpa

মৃত্যুর দুয়ার দেখার ছয় মাস পর প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র প্রতিনিধি ক্যাথি গ্যানন৷ মার্তিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এপি-র প্রধান কার্যালয়ে গত এপ্রিলের সেই ভয়াল দিন, বন্ধু আনিয়া নিডরিংহাউস এবং সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর দুর্দমনীয় আকর্ষণের কথা তুলে ধরেন ৬১ বছর বয়সি ক্যাথি৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, টানা পাঁচ বছর একসঙ্গে কাজ করা বন্ধু, সহকর্মী আনিয়া শারীরিকভাবে পাশে না থাকলেও দূর থেকে মানসিকভাবে নিশ্চয়ই আছেন বলে তিনি মনে করেন৷ তাছাড়া আফগানিস্তানের মানুষের কথা ভেবেও সেখানে কাজ করতে যাওয়া দরকার, তাই যত বিপদের আশঙ্কাই থাক, আফগানিস্তানে তিনি যাবেন৷

৪ঠা এপ্রিল, ২০১৪৷ এই দিনটির কথা কোনোদিন ভুলতে পারবেন না ক্যাথি গ্যানন৷ এপি-র ফটো সাংবাদিক আনিয়ার সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে কাজ করার ফলে আফগানিস্তান সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা হয়ে গিয়েছিল৷ তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর সংগ্রহে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খোস্ত-এ যাওয়ার সময় একটুও দুশ্চিন্তা হয়নি৷

Kriegsfotografin Anja Niedringhaus erschossen in Afghanistan 04.04.2014
হামলার পর গাড়ির পাশেই পড়ে আছে ক্যাথি আর আনিয়ার কিছু জিনিসছবি: DW/F.Zahir

তাছাড়া ৪৮ বছর বয়সি জার্মান ফটোগ্রাফার আনিয়া আর ক্যাথি কাবুল থেকে আফগান নিরাপত্তা কর্মীদের গাড়ির সঙ্গেই গিয়েছিলেন সেখানে৷ নিরাপত্তা কর্মীদের সেই গাড়িতে করে সেদিন নির্বাচনের ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়া হয়৷ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর আনিয়াকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতেই বসে ছিলেন ক্যাথি৷ কাছাকাছিই ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা৷ হঠাৎ নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝখান থেকে অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসে একজন৷ দু'পা এগিয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘আল্লাহু আকবর' বলে৷ চিৎকার করতে করতেই একে-৪৭-এর গুলি ছুড়তে শুরু করে আনিয়া আর ক্যাথিকে উদ্দেশ্য করে৷ গুলির আঘাতে দু'জনকে লুটিয়ে পড়তে দেখে হামলাকারী অস্ত্র ফেলে দু'হাত ওপরে তুলে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে আত্মসমর্পন করে৷

ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে কাছের এক হাসপাতাল এবং তারপর কাবুলের হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আনিয়াকে বাঁচানো যায়নি৷ আনিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি লাগলেও সবচেয়ে বেশি গুলি লেগেছিল দু'হাত এবং বাঁ কাঁধে৷ নিউ ইয়র্কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্যাথি জানান, ‘‘হঠাৎ দেখলাম আমার ডান হাতটা কবজি থেকে আলাদা হয়ে ঝুলছে৷ মনে পড়ে, তখন আমি বলে উঠেছিলাম, হে ঈশ্বর, এবার আমাদের সব শেষ হয়ে গেল!''

Kathy Gannon AP Fotografin Archiv 2002
১২ বছর আগে আনন্দঘন এক মুহূর্তে ক্যাথি গ্যাননছবি: Getty Images

আগের পাঁচ বছরে এ কথা একবারও মনে হয়নি তাঁর৷ আনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন আফগানিস্তানের এক শহর থেকে আরেক শহর৷ এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্র৷ পাকিস্তান এবং আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করা প্রথম বিদেশি সাংবাদিক তাঁরা৷ একসঙ্গে গিয়েছেন আফগানিস্তানের তালেবান অধ্যুষিত এলাকার আফিম ক্ষেতে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এক সৈনিকের হাতে নৃশংসভাবে ১৬ জন আফগানের নিহত হবার খবর তারাই প্রথম জেনেছিলেন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এক আফগানের কাছ থেকে৷ ৪ঠা এপ্রিল নিজের হাত এবং শরীরের অবস্থা দেখে, তারপর আনিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে ক্যাথির মনে হয়েছিল আফগানিস্তানে বুঝি আর কাজ করা হবে না৷

কিন্তু জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ক্যাথি গ্যানন৷ পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ফটোসাংবাদিক বন্ধু আনিয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আর সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা থেকে তিনি আবার ফিরে যেতে চান আফগানিস্তানে৷ অনেকের কাছে আফগানিস্তান ‘মৃত্যু উপত্যকা' হলেও ক্যাথি মনে করেন, ‘‘(আনিয়া নেই বলে) বাইরে থেকে আমাদের দলটা নিশ্চয়ই এখন অর্ধেক মনে হবে, কিন্তু আবার ওখানে যাবো তখন মানসিকভাবে তো আমরা দু'জনের দলই থাকবো৷ এ কাজে আমরা এখনো একসঙ্গেই আছি৷''

এসিবি/ডিজি (এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য