1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মামলা করে আলোচিত এ বি সিদ্দিকী এমপি হতে চান

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এবার সাংসদ হতে চান৷ এর মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ-ও নাকি পেয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/1EaEz
A.B. Siddiki
এ বি সিদ্দিকীছবি: DW/S. Swapan

এ বি সিদ্দিকী সর্বশেষ মামলাটি করেন গত ৩রা ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে৷ তিনি অবরোধ, হরতালে ৪২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় খালেদার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনেন৷ আদালতে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়৷ মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে৷

তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ বি সিদ্দিকীর এটাই প্রথম মামলা নয়৷ এর আগেও দু'টি মামলা করেছেন তিনি৷ গত বছরের ২১শে অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগকে ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী দল বলায় সংক্ষুব্ধ হয়ে এ বি সিদ্দিকী সর্বপ্রথম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে৷ এরপর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গোপালগঞ্জের মানুষকে খালেদা গোপালি বলার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি আদালত খারিজ করে দেয়৷

এ বি সিদ্দিকী প্রথম রাজনৈতিক মামলাটি করেন ২০১১ সালে ইসলামী ঐক্যকোট নেতা মুফতি ফজলুল হক আমীনীর বিরুদ্ধে৷ তারপর এক এক করে মামলা করেন বুয়েট-এর শিক্ষক হাফিজুর রহমান, বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে৷

Unruhen in Bangladesch 05.01.2015
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এ বি সিদ্দিকীছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah

এই সব মামলার বাদি এ বি সিদ্দিকীর সঙ্গে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হয় রবিবার মতিঝিলে তাঁর অফিসে বসে৷ তিনি জানান, এরই মধ্যে তাঁর দায়ের করা মামলায় বুয়েটের শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ তিনি এখন পলাতক৷ হাফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছিলেন৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামনও চাকরি হারিয়ে এখন পলাতক৷ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ তিনিও ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছিলেন৷

সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধ৷ বঙ্গবন্ধুর সৈনিক৷ তাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর কোনো হামলা বা কটুক্তি করা হলেই আমি মামলা করি৷ এটা আমার প্রতিবাদ৷'' তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩রা ফেব্রুয়ারি মামলাটি তিনি জনগণের পক্ষ থেকে করেছেন বলে জানান এ বি সিদ্দিকী৷

এ বি সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায়৷ এখন তিনি দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ঢাকার রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকার একটি ভাড়া বাসায়৷ ২০০২ সালে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদ গঠন করেন তিনি৷ তাঁর এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্য ১০১ জন৷ বনানীতে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়৷ তবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, একই এলাকায় খদ্দর মার্কেটে এবং মতিঝিলের একটি অফিসেও তিনি বসেন৷ তিনি দাবি করেন, জননেত্রী পরিষদ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত৷

এ বি সিদ্দিকের লেখাপড়ার গণ্ডি এসএসসি পার হয়নি৷ কিছুদিন তিনি সৈনিকের চাকরি করেছেন৷ এরপর নব্বইয়ের দশকে দৈনিক বাংলা এবং দৈনিক খবরে স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন বলে জানান তিনি৷

বর্তমানে তিনি জননেত্রী পরিষদের সভাপতি ছাড়াও দৈনিক ভোরের আলো, সাপ্তাহিক অবদান, চিত্রজগত্‍-এর সম্পাদক৷ এছাড়া দৈনিক ভোরের চেতনার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলেও নিজেকে দাবি করেন তিনি৷

তিনি জানান, এখন তাঁকে মামলার কাজে সপ্তাহের সাতদিনই আদালতে থাকতে হয়৷ মামলার খরচ কীভাবে আসে? জানতে চাইলে এ বি সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমরা মামলার খরচ চালানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি৷ এই কমিটি অর্থ সংগ্রহ করে৷'' তহবিলে মামলা চালানোর জন্য কত টাকা আছে? জানতে চাইলে তা তিনি অবশ্য এড়িয়ে যান৷ তবে তাঁর সংসার নাকি ভালোভাবেই চলে যায়৷

অবশ্য তিনি জানান, ‘‘মামলা করতে এবং চালাতে তাঁর তেমন কোনো খরচ হয় না৷ কারণ তিনি আলোচিত মামলা করেন৷ তাই আইনজীবীরা তাঁদের প্রচারের জন্য বলতে গেলে বিনে পয়সাতেই মামলা করে দেন৷''

এ বি সিদ্দিকী জানান, ‘‘আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে৷ বুয়েট-এর শিক্ষক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার পর গত বছরে জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয়েছে৷ আমি গণভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে মাথায় হাত দিয়ে সাহস দিয়েছেন৷'' এরপর আর দেখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রায়ই আমার গণভবনে যাওয়ার সুযোগ হয়৷ এতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আমাকে ঈর্ষা করেন৷''

এ বি সিদ্দিকীর কথায়, ‘‘আমি এখন হুমকির মুখে আছি৷ নিরপত্তা নিয়ে চিন্তিত আমি৷ ৩রা ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করার পর, বিজয়নগর এলাকায় ডেকে নিয়ে আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে বিএনপির লোকজন৷ এ জন্য আমি থানায় দু'টি জিডি করেছি৷'' তিনি বলেন, ‘‘এ কারণে সরকার আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে৷ আমার ঢাকার বাসায় পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে৷ চলাফেরার সময়ও পুলিশি নিরাপত্তা পাই আমি৷''

এ বি সিদ্দিকী তাঁর ভবিষ্যত্‍ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশের জেলা ও উপজেলায় জননেত্রী পরিষদের শাখা ও অফিস খোলা হবে৷'' এছাড়া সিদ্দিকী জানান যে তিনি আগামী নির্বাচনে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি নির্বাচিত হতে চান৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েছিলাম৷ কিন্তু নেত্রীর নির্দেশে রাশেদ খান মেননের জন্য ছেড়ে দেই৷ আগামী নির্বাচনে আবারো মনোনয়ন চাইব এবং আশা করি পাব৷''

নির্বাচনের খরচ কোথা থেকে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা নির্বাচনের সময় দেখা যাবে৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘এ কারণেই আমি মামলার বাইরেও এখন দলীয় কর্মসূচি শুরু করেছি৷ সারা ঢাকায় ব্যানার লাগিয়েছি৷ হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছি, করছি সভা-সমাবেশও৷''

তবে এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘‘আমার প্রধান কাজ হলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর কোনো ধরণের হামলা বা কটুক্তিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা৷ আমি এই মামলা করেই যাব৷ প্রয়োজনে মামলা করে করে ফতুর হবো, তবুও থামবো না৷''

বলা বাহুল্য, এ কাজের জন্য এ বি সিদ্দিকী সবসময় সজাগ৷ নিয়মিত পেপার পত্রিকা পড়েন তিনি, দেখেন টেলিভিশন৷ আর সেখান থেকে মামলার উপযোগী কিছু পেলেই করে দেন মামলা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য