1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মশা মারতে স্যাটেলাইট?

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪

হ্যাঁ, সার্চলাইট নয়, স্যাটেলাইট, মানে কৃত্রিম উপগ্রহ৷ শুধু তত্ত্ব নয়, ব্যাপারটা হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা, আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে৷ স্যাটেলাইট দেখাবে এঁদো পুকুর, মশা মারবে ব্যাকটেরিয়া৷

https://p.dw.com/p/1DM0z
Haiti Port-au-Prince Chikungunya Fieber Virus Desinfektion
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images

আমরা শুনি কখনো এইডস, কখনো এবোলা মহামারী, কিন্তু বস্তুত যে রোগটি বছরের পর বছর আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ নিচ্ছে, তার নাম হলো ম্যালেরিয়া৷ প্রতি বছর সারা বিশ্বে দশ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় ভুগে প্রাণ হারায়, তাদের ৯০ শতাংশই আফ্রিকায়৷

ওদিকে জার্মানির রাইন নদ এলাকায় চিরকালই মশার প্রাদুর্ভাব, যদিও তারা ম্যালেরিয়ার মশা নয়৷ তবুও তারা কামড়ায়, জ্বালাতন করে৷ তাই গত ৪০ বছর ধরে রাইন নদের দু'পাড়ে পোকামাকড়, মশামাছি কমানোর অভিযান চলেছে৷ মশা মারার পদ্ধতি হলো: ব্যাসিলাস থুরিঙ্গিয়েনসিস ইস্রায়েলেনসিস বা বিটিআই ব্যাকটেরিয়া পচা জলে ছেড়ে দেওয়া; তা-তে নাকি মশার শূককীটদে ৯৮ শতাংশ বিনষ্ট হয়, অথচ অন্যান্য পোকামাকড়, প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ অক্ষত থাকে৷

মহাকাশ থেকে মশা

বিটিআই ব্যাকটেরিয়া যদি রাইন নদের তীরে মশার শূককীট মারতে পারে, তাহলে তারা আফ্রিকাতেই বা কাজে লাগবে না কেন? ইথিওপিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশে ইতিমধ্যেই মশার বংশবৃদ্ধি রোখার জন্য বিটিআই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে৷ কিন্তু হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এবার যে বিশেষ প্রকল্পটি নিয়ে বুরকিনা ফাসোতে ফিল্ড এক্সপেরিমেন্টে নেমেছেন, তা শুধু ফিল্ড অর্থাৎ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তার সূচনা আকাশে, অর্থাৎ কিনা মহাকাশে: কেননা কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাঠানো ‘ইমেজ' বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, মাটির পৃথিবীতে ঠিক কোথায় জলাশয়, তার জলই বা কেমন আর সে জলে মশার ছানোপোনা গজানোর সম্ভাবনাই বা কতটা৷ জায়গাটা হলো পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোর একটি এলাকা; এলাকার ১২৭টি গ্রামে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বাস৷

বুঝে-সুঝো বিটিআই

হাইডেলব্যার্গের বিজ্ঞানীদের পদ্ধতির অভিনবত্ব উপলব্ধি করার জন্য প্রথমে বলে নেওয়া দরকার যে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ বলতে আজও বিশেষ কীটনাশকযুক্ত মশারি ছাড়া আর বিশেষ কোনো পন্থা নেই৷ আবার সে পন্থাতেও শুধু রাতেই সুরক্ষা পাওয়া যায়৷ তাই নরব্যার্ট বেকার-এর মতো বিজ্ঞানীরা স্থির করেছেন, তাঁরা মশা মারবেন, মশারা যেখানে জন্ম নেয়, সেই এঁদো জলে বা বদ্ধ জলাশয়ে৷ তাদের ফিল্ড এক্সপেরিমেন্টের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এলাকার মানুষদের ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা৷ তাই এলাকার গ্রামগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: এক-তৃতীয়াংশ গ্রামে আগের মতোই শুধু মশারি ব্যবহার করা হচ্ছে; এক-তৃতীয়াংশ গ্রামে যাবতীয় জলাশয়ে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করা হচ্ছে; বাকি এক-তৃতীয়াংশ গ্রামে শুধু সেই সব জলাশয়ে বিটিআই ছাড়া হচ্ছে, যেখানে বাস্তবিক মশার শূককীট খুঁজে পাওয়া গেছে৷ এই তৃতীয় পদ্ধতিটি নতুন এবং এর উদ্দেশ্য হলো, বুরকিনা ফাসোর মতো দরিদ্র দেশগুলি যেন তাদের অর্থ, জনবল ও সাজসরঞ্জাম ঠিকভাবে নিয়োগ করে৷

মশাদের পছন্দ-অপছন্দ

ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে মশক বিনাশের এই সর্বাধুনিক পদ্ধতির নাম হলো ‘সিলেক্টিভ স্প্রেয়িং': পুকুর বেছে ব্যাকটেরিয়া ছাড়া৷ স্যাটেলাইটের ছবি থেকেই নাকি বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, জলের উপরিভাগ কেমন এবং মশারা সেখানে ডিম পাড়ে কিনা৷ মশাদেরও নাকি পানির ব্যাপারে পছন্দ-অপছন্দ আছে৷ যে সব শূককীট থেকে পরে মশা তৈরি হয়, তারা নাকি গুল্ম-লতাপাতা যুক্ত পরিষ্কার জল পছন্দ করে৷ জল ঘোলা না পরিষ্কার, তার রং কিরকম, তা-তে কি পরিমাণ পুষ্টিকর পদার্থ আছে – এ সবই নাকি মশাদের কোনো বিশেষ জলাশয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে অথবা করে না৷

সব কিছু বিচার করে দেখা হয়, সর্বাগ্রে কোথায়, কোন কোন জলাশয়ে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করা উচিত৷ প্রতি দশ দিন অন্তর ব্যাকটেরিয়া স্প্রে করতে হয়৷ আশেপাশের গ্রামগুলিতে শিশুদের মধ্যে কী পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ঘটনা ঘটছে, তারও পরিসংখ্যান রাখা হয় – কেননা গোটা প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো: ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কি কমছে, এই মারণব্যাধিতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কি কমছে?

এসি/ডিজি (ডিপিএ)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য