মরুভূমি থেকে বিদ্যুত
১৬ নভেম্বর ২০১২তিন বছর হয়ে গেল, এখনও ডেজার্টেক প্রকল্প, বলতে কি, আকাশকুসুমই রয়ে গেছে৷ সংশ্লিষ্ট শিল্পসংস্থাগুলোও ধীরে ধীরে অধীর হয়ে উঠছে৷ জার্মানির সিমেন্স সংস্থা বলছে, তারা আর এতে নেই৷ ওদিকে মরক্কোয় যে পাইলট প্রোজেক্টটি হবার কথা ছিল, সেটাতেও দেরি হচ্ছে৷
ডেজার্টেক শিল্প উদ্যোগের কার্যনির্বাহক পাউল ফ্যান জোন গত অক্টোবরের শেষে উত্তর আফ্রিকা থেকে চমকে দেবার মতো একটি খবর পান৷ মরক্কোর শিল্পমন্ত্রী আব্দেলকাদের আমারা নাকি ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর দেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে এক পর্যায় চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ভাবছে, যার মাধ্যমে মরক্কোয় সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রকল্প এবং ইউরোপে সেই তথাকথিত ‘সবুজ বিদ্যুৎ' সরবরাহের ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ মরক্কোর ঐ পাইলট প্রোজেক্টে সৌরশক্তি এবং উইন্ড পার্ক বসাতে খরচ পড়বে প্রায় ষাট কোটি ইউরো৷
সে চুক্তি শেষমেষ স্বাক্ষরিত হয়নি৷ তবুও নেদারল্যান্ডসের মানুষ ফ্যান জোন নভেম্বরের গোড়ায় বার্লিনে ডেজার্টেক সংক্রান্ত একটি তিনদিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে ৪৮টি দেশ থেকে আগত ৫০০ কর্মকর্তা এবং সেই সঙ্গে মন্ত্রীরা একত্রিত হয়েছিলেন৷ জার্মান পরিবেশমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন৷ ডেজার্টেক'এর গুরুত্ব ঘোষণা করার এর চেয়ে ভালো আঙ্গিক আর কি হতে পারে? ফ্যান জোন তাই ঘোষণা করলেন:
‘‘এটা হতো ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার সরকারবর্গের মধ্যে প্রথম চুক্তি, যার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অর্জিত বিদ্যুৎ বাস্তবিক এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রেরণের প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রিত হতো৷''
জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, লাক্সেমবার্গ এবং মাল্টা এই চুক্তি সম্পাদন করতে আগ্রহী, কিন্তু স্পেন এখনও গড়িমসি করছে৷ কিন্তু পাইলট প্রোজেক্টের জন্য প্রথমেই মরক্কো থেকে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যেতে হবে স্পেনে, কাজেই স্পেনকে বাদ দেবার কোনো উপায় নেই৷ স্পেনের এই দ্বিধার জন্য তার আর্থিক সংকট নিশ্চয় কিছুটা দায়ী৷ আরো বড় কথা হল, স্পেন মরক্কোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে৷ কাজেই মরক্কো থেকে বিদ্যুৎ আসায় স্পেনের ক্ষতি বৈ লাভ নেই৷ মরক্কোর সৌরশক্তি সংস্থার নাম মাসেন৷ মাসেন'এর প্রধান মুস্তাফা বাকুরি সব সত্ত্বেও আশাবাদী:
‘‘জ্বালানিশক্তি রপ্তানি আমাদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়৷ কাজেই তাড়াহুড়ো না করে, সর্বসম্মতি অর্জন করার জন্য কিছুটা সময় নেওয়া উচিত৷ ইতিমধ্যেই বলা যেতে পারে যে, সব ক'টি দেশের আগ্রহ, স্বার্থ এবং স্বপ্ন এক৷ কিন্তু জাতীয় আইন-কানুনের সঙ্গে বিরোধ থাকলে চলবে না, তা সে একক দেশগুলোর পরিকল্পনার ক্ষেত্রেই হোক, বা আগামীতে যা বিনিয়োগ করতে হবে, তার ক্ষেত্রেই হোক৷ এবং তাতে যদি আর কিছু দিন কি সপ্তাহ লাগে, তাতে আপত্তির কিছু নেই বলে আমার মনে হয়৷''
কিন্তু ডেজার্টেক এবং তার কার্যনির্বাহি কর্মকর্তা পাউল ফ্যান জোন'এর হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে৷ ক্রমেই আরো স্পষ্ট হচ্ছে যে, এতগুলি শিল্পসংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বার্থকে একত্রিত করা একটি দুঃসাধ্য কাজ৷ ডেজার্টেক শিল্প উদ্যোগে মধ্য ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার ২১টি শিল্পসংস্থা ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট৷ তার মধ্যে জার্মানির দুই সুবৃহৎ জ্বালানি সংস্থা আরডাবলিউই এবং ই'য়ন রয়েছে, রয়েছে ডয়চে ব্যাংক৷ আরো রয়েছে ৩৫টি সংযুক্ত সংস্থা৷ এ সবের মধ্যে কিছু কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই ধন্দে পড়ে ডেজার্টেক পরিত্যাগ করতে শুরু করেছে৷ সিমেন্স এ বছরের শেষেই ডেজার্টেক থেকে পাততাড়ি গোটাবে৷ অপরদিকে চীনের সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা স্টেট গ্রিড কর্পোরেশন অফ চায়না যোগ দিতে আগ্রহী, মার্কিন সোলার মডিউল নির্মাতা ফার্স্ট সোলার আরো বেশি করে সংশ্লিষ্ট হতে চায়৷ আরডাবলিউই'র এক কর্মকর্তা হান্স ব্যুন্টিং কিন্তু বলেন:
‘‘আগে দেখতে হবে, এটা উপযোগী হবে কিনা৷ কারণ প্রশ্ন হল, এই সব সম্ভাব্য সহযোগীর কাছ থেকে ডেজার্টেক কি পাবে৷ চীনের সংস্থাটির হাই টেনশন গ্রিড নিয়ে অভিজ্ঞতা আছে৷ ফার্স্ট সোলার বস্তুত সোলার প্যানেল তৈরি করে, যা আমরা মরক্কোতেও ব্যবহার করতে চাই৷ শেষমেষ ডেজার্টেক'কেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷''